হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে কুড়িগ্রাম-৩ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মধ্যে দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়েছে। জাতীয় পার্টির ঘাটি বলে পরিচিত এই আসনে মনোনয়ন পেলেই এগিয়ে যাবে সেই প্রার্থী। সেই বিবেচনায় এবার হাফ ডজন প্রার্থী মনোনয়ন কিনেছেন। নেতাদের আশির্বাদ নিতে পরে আছেন ঢাকায়।
উলিপুর উপজেলার মোট ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩লাখ ৪৬ হাজার ৯১৫জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১লাখ ৭১হাজার ৩৬৮ জন এবং নারী ভোটার ১লাখ ৭৫হাজার ৫৪৭জন। বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামীলীগের প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মতিন। এবার এই আসনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন কিনেছেন ১২জন। ভোটারদের অনেক প্রত্যাশা ছিল উলিপুরের সন্তান অধ্যাপক এমএ মতিনের কাছে। কিন্তু জনবিচ্ছিন্ন এই নেতার উপর ক্ষোভ সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে। তার বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ তিনি কারো সাথেই দেখা করতেন না। নদী ভাঙন কবলিত মানুষ তার বাড়ীর দরজায় ঘন্টার পর ঘন্টা অবস্থান করেও দেখা না পেয়ে চলে যেতেন। এছাড়াও খোদ দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে বিরোধ থাকায় তিনি দলের মতামতকে উপেক্ষা করে ইউনিয়ন পর্যায়ে নিজেদের লোকজনকে নিয়ে কমিটি গঠন ও বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়মের করায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। ফলে তাকে নিয়ে চলছে নানান বিতর্ক। তাছাড়াও দল তাকে জনসেবার সুযোগ দিলেও, জনগণকে এড়িয়ে চলায় তার জনপ্রিয়তা এখন তলানীতে নেমে গেছে।
এই সুযোগে জাপার ভোটব্যাংককে মাথায় রেখে এলাকার এবং এলাকার বাইরের নেতারাও এই আসনে মনোনয়ন কিনে প্রার্থীতার জানান দিয়েছেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এই আসনে জাপা থেকে ৬জন প্রার্থী হয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজনের নাম মানুষ শোনেনি। তারপরও ভোটব্যাংকের কথা চিন্তা করে মনোনয়ন কিনে তারা নেতাদের আশির্বাদ নিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিগত ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৪বার জাতীয় পার্টির প্রার্থী এবং ২বার আওয়ামীলীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু এবারে বিএনপি নির্বাচনে না আসায় প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে। বিএনপির ভোটের আশায় আওয়ামীলীগ ছেড়ে অন্য দলের ব্যানারে ভোট করার চেষ্টায় আছেন অনেকেই। এর পাশাপাশি জাতীয় পার্টির ব্যাপক ভোটব্যাংকে মাথায় রাখছেন তারা। এবার জাতীয় পার্টি থেকে যারা মনোনয়ন কিনেছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগ প্রার্থী নিজেদেরকে জানান নিতে মনোনয়ন দৌঁড়ে শামিল হয়েছেন। এর বাইরে ২/৩জন এলাকায় শক্ত প্রার্থী হিসেবে এখনেই নজর কেড়েছেন।
জাতীয় পার্টি থেকে এই আসনে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের ভাগ্নি এবং নীলফামারীর সন্তান ড: মেহে জেবুন নেছা রহমান টুম্পা প্রার্থী হয়েছেন। মাঝে মাঝে এলাকায় আসলেও তেমন জনসংযোগ না থাকায় বহিরাগত হিসেবে বিবেচিত হয়ে আছেন তিনি। প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব এবিএম আবুল হোসেন মাস্টার। তিনি হাতিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। এছাড়াও ব্যবসায়ী আবুল বাশারও মনোনয়ন কিনেছেন। উলিপুরের পান্ডুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার আনিছুর রহমান ও সাফা গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুস সোবহানও মনোনয়ন কিনেছেন। এই প্রার্থীরা সবাই নবীন হলেও কেউ কেউ এলাকায় বেশ কিছুদিন বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে নিজেদেরকে জানান দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উলিপুর জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব বিএম আবুল হোসেন মাস্টার জানান, আমরা কোন বহিরাগতকে মানবো না। বহিরাগতরা এমপি হওয়ার পর আর এলাকায় আসেন না। এলাকার মানুষের সুখ দু:খের কথা শোনেন না। তাদের আমাদের দরকার নেই। প্রয়োজনে আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থী দিবো তবু বহিরাগতদের চাই না।
এদিকে জাতীয় পার্টি থেকে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে ধরা হচ্ছে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের ভাগ্নি ড: মেহে জেবুন নেছা রহমান টুম্পা ও গুণাইগাছ ইউনিয়নের সন্তান এবং সাফা গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুস সোবহানকে। দুজনই এলাকায় নবীন মুখ। টুম্পা মাঝে মধ্যে এলাকায় এসে জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দদের সাথে বৈঠক করেছেন। অপরদিকে আব্দুস সোবহান এলাকায় বিভিন্ন সেবামূলক কাজের মাধ্যমে জনসংযোগ করে যাচ্ছেন। তিনি এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানাসহ হত-দরিদ্র মানুষকে নিরবে সহযোগিতা করছেন বলে এলাকার মানুষ জানিয়েছেন। সেদিক থেকে ইঞ্জিনিয়ার আনিছুর রহমান রতনের এলাকায় পদচারনা অনেক কম। এদিকে পান্ডুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম ততটা পরিচিত নন। জাতীয় পার্টির একনিষ্ট কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত আবুল হোসেন মাস্টার। মনোনয়ন দৌড়ে তারা কে কতটা এগিয়ে যাবেন তা এই মূহুর্তে বলা যাচ্ছে না। এদিকে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় খোদ জাপার ভোটারদের মধ্যে চলেছে নানান আলোচনা ও সমালোচনা।
উলিপুর বাজারে কাপড় ব্যবসায়ী রহমত আলী জানান, যদু-মধু সবাই প্রার্থী হয়েছে। অনেকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হেরে গেছে তারাও এমপি হবার চায়। এলাকার বাইরের মানুষ তাদেরকে চেনেও না।
প্রেসক্লাব উলিপুরের সভাপতি লক্ষ্মণ সেন জানান, উলিপুরে সুষ্ঠু ভোট হলে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে টুম্পা অথবা আব্দুস সোবহান মনোনয়ন পেতে পারেন। এর বাইরে কেন্দ্র থেকেও প্রার্থী দেয়া হতে পারে। তবে আমরা চাই এলাকার সন্তান প্রার্থী হোক। যে এলাকার মানুষের সুখে-দু:খে পাশে দাঁড়াতে পারবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন উলিপুর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম জানান, বর্তমান আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্যের কাছে মানুষের অনেক প্রত্যাশা ছিল, সেখানে হতাশা বিরাজ করছে এই আসনের ভোটারদের মধ্যে। তবে আমরা চাইবো যোগ্য ব্যক্তি এখানে নির্বাচিত হোক। সে যে দলের হোক সেটি বিবেচ্য বিষয় নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *