এমএস সাগর,কুড়িগ্রামঃ
বাল্যবিয়ে শূন্যের কোঠায় রেখে ও শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে তাক লাগিয়ে দিয়েছে ভিতরবন্দ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। একই সাথে অনন্য কার্যক্রমে জেলার উদাহরণ এখন প্রতিষ্ঠান। শ্রেণিকক্ষ সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত প্রতিষ্ঠানটি ধরে রাখতে চায় তাদের সুনাম।

জানা গেছে, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ বাজার প্রাণকেন্দ্রে ১৯৮৩সালে প্রতিষ্ঠা হয় ভিতরবন্দ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষক-কর্মচারী ১১১জন। শিশু শ্রেণী থেকে এসএসসি পর্যন্ত শিক্ষার্থী প্রায় ১হাজার। করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে পাঠদান।

২০১৪সালে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের সভাপত্তিত্বে গঠন হয় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটি। অদ্যাবধি পর্যন্ত বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটি ৬৫জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করে। প্রতিষ্ঠানে প্রতি বৃহম্পতিবার বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির মাধ্যমে শ্রেনী কক্ষে শিক্ষার্থীদের সাথে জনসচেতনতা-মূলক আলোচনা করে। ফলে প্রতিষ্ঠানে বাল্যবিবাহের হার শূন্যের কোঠায়।

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির প্রচেষ্টায় ২০১৪সাল থেকে ২০১৫সাল ৯জন, ২০১৫সাল থেকে ২০১৬সাল ৭জন, ২০১৬সাল থেকে ২০১৭সাল ৬জন, ২০১৭সাল থেকে ২০১৮সাল ৮জন, ২০১৮সাল থেকে ২০১৯সাল ৭জন, ২০১৯সাল থেকে ২০২০সাল ১৪জন, ২০২০সাল থেকে ২০২১সাল ৯জন ও ২০২১সাল থেকে ২০২২সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৫জন এতে মোট ৬৫জন শিক্ষার্থী বাল্যবিবাহ থেকে শিক্ষা জীবনে ধাপিত হন।

ভিতরবন্দ ইউনিয়নের পঞ্চায়েত পাড়া গ্রামের দুলাল মিয়া ও মমতাজ বেগমের একমাত্র কন্যা দশম শ্রেণীর ছাত্রী দুলালী খাতুনের গত দেড় মাস আসে বাল্যবিয়ে থেকে মুক্তি পায় তার প্রতিষ্ঠান ভিতরবন্দ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কমিটি।

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির সদস্য ও শিক্ষার্থী নওরিন জাহান লিসা বলেন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠানে বাল্যবিবাহ রোধে প্রতি সপ্তাহে আলোচনা সভার মাধ্যমে আমরা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করে আসছি।

শিক্ষার্থীরা বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান খুবই ভালো। একটি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটি রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে একটিও বাল্যবিবাহ হয়নি।

সহকারী শিক্ষকরা বলেন, করেনাকালে এভাবে ভিতরবন্দ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় বাল্যবিয়ের হার শূন্যের কোঠায় রেখে তাক লাগিয়ে দিয়েছে জেলায়। অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যখন আৎকে ওঠার মতো বাল্যবিয়ের সংখ্যা তখন প্রতিষ্ঠানটি বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে যাচ্ছে।

ভিতরবন্দ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মামুনূর রশীদ বলেন, শুধু বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ নয় সার্বিক কর্মকান্ডে প্রতিষ্ঠানটি উজ্জ্বল উদাহরণ। মেধাবী ছাত্রীদের বিনা বেতনে পড়াসহ, বই, পোশাক ও আর্থিক সহযোগিতা করায় খুশি অভিভাবক ও স্থানীয়রা।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুল ইসলাম জানান, এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হতে পারে। এছাড়াও সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *