এস.এম হোসাইন আছাদ, জামালপুর ॥
জামালপুরে অবসরপ্রাপ্ত তৃতীয় শ্রেণীর এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিপুল পরিমান অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি তার সম্পদের তালিকা করে দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রেসক্লাবসহ জেলার কয়েকজন সাংবাদিকদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। এমন দূর্নীতিগ্রস্থ ব্যাক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানানো হয়েছে অভিযোগটিতে।

অভিযোগ পত্রটিতে উল্লেখ্য করা হয়- জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের পিঙ্গলহাটি গ্রামের মৃত শমসের আলীর পুত্র শরাফত আলী শরাফত শহরের দক্ষিন কাচারীপাড়ার ফিসারী রোডের বাসিন্দা। শরাফত আলী একজন তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারী ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালে সর্বশেষ কর্মস্থল মাদারগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের অফিস সহকারী পদ থেকে অবসর গ্রহন করেন। সেই সময় তার মাসিক বেতন ছিলো ২৮ থেকে ২৯ হাজার টাকা।

অভিযোগ পত্র থেকে জানা যায়, তিনি তার চাকুরী জীবনে অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। জামালপুর শহরের দক্ষিন কাচারীপাড়া এলাকার ফিসারি রোডে খেজুরতলা মসজিদের সামনে চার তলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি রয়েছে তার। এছাড়াও একই এলাকার আজাদ ডাক্তারের মোড় থেকে ফকির বাড়ির দিকে রাস্তার পূর্বপাশে একটি হাফ বিল্ডিংসহ একটি প্লট রয়েছে। প্লটটি তিনি এক ব্যবসায়ীর কাছে ভাড়া দিয়েছেন । এছাড়াও শরাফত আলীর একটি প্রাইভেট কার রয়েছে। প্রাইভেট কারটি তিনি ভাড়া দিয়েছেন। তবে মাঝে মধ্যে নিজে যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করেন। ফিসারি রোডে দুতলা বিশিষ্ট দুইটি বাড়ি রয়েছে। বাড়িগুলো তার মেয়েদের নামে থাকলেও মূলত তার অর্থেই জমি ক্রয় ও ভবন নির্মান করা হয়। শরাফত আলীর স্থায়ী ঠিকানা পিঙ্গলহাটিতে ৫০ বিঘা আবাদী জমি ও সেখানে বাড়ি রয়েছে। এছাড়াও সম্প্রতি চার তলা বাড়ির পেছনে ৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন শরাফত আলী। জামালপুরের কয়েকটি ব্যাংকে তার প্রচুর পরিমান নগদ অর্থ রয়েছে। কর্মরত থাকা অবস্থায় তার ঘুষ লেনদেনের একটি ভিডিও ও সংবাদ বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রচার হয়।

তবে সরেজমিনে অনুসন্ধান করে জানা যায়, শহরের দক্ষিন কাচারীপাড়া এলাকার ফিসারি রোডে খেজুরতলা মসজিদের সামনে শরাফত আলীর চার তলা একটি বাড়ি রয়েছে। যেটির দ্বিতীয় তলায় তিনি নিজে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়েছেন। একই এলাকার আজাদ ডাক্তারের মোড় থেকে ফকির বাড়ির দিকে রাস্তার পূর্বপাশে চার শতাংশ জমির উপর তার একটি প্লট রয়েছে। এই প্লটটি তিনি একজন ব্যবসায়ীর কাছে ভাড়া দিয়েছেন। সেই ব্যবসায়ী তাকে ৫০ হাজার টাকা জামানত দিয়েছেন এবং প্রতিমাসে ৮৫০০ টাকা ভাড়া প্রদান করেন। এছাড়াও তার গ্রামের বাড়ি পিঙ্গলহাটিতে প্রায় ৩০০ শতাংশ কৃষি জমি রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ১০০ শতাংশ জমি তিনি পৈত্রিক সূত্রে পেয়েছেন বাকি জমি তিনি চাকুরীকালীন সময়ে ক্রয় করেছেন বলে জানিয়েছে তার স্বজনরা। এদিকে অভিযোগপত্রে ফিসারি রোডে দুতলা বিশিষ্ট দুইটি বাড়ির কথা উল্লেখ্য করা হয়েছে। সেই বাড়ি দুইটিতে তার মেয়েরা তাদের পরিবার নিয়ে বসবাস করেন বলে জানায় এলাকাবাসীরা। তবে বাড়ি দুইটির নকশা ও আকৃতি একই। সব মিলিয়ে সরেজমিনে অনুসন্ধান করে শরাফত আলীর কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তির খোজ পাওয়া যায়।

এসব বিষয়ে শরাফত আলী বলেন- খেজুর তলা মসজিদের সামনে যে চারতলা বাড়ি রয়েছে, সেটির জমি তার স্ত্রীর নামে। তার শ্বশুরবাড়ী থেকে এই জমি পেয়েছেন। পরে ১৯৯৬ সাল থেকে ধীরে ধীরে চার তলার নির্মানকাজ সম্পন্ন করা হয়। আর যে প্রাইভেট কারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেটি তার নামে নয়, অন্যজনের নামে। তবে তিনি মাঝে মধ্যে যাতায়াতের জন্য প্রাইভেট কারটি ব্যবহার করেন। আর ফকিরপাড়া রোডে যে চার শতাংশ জমির প্লট রয়েছে সেটি তিনি ২০০৯ সালে ক্রয় করেছেন। আর তার মেয়ের জামাইয়েরা সেই দুইতলা দুইটি ভবন নির্মান করেছেন বলে দাবি তার। শরাফত আলী আরো বলেন- স্থানীয় একটি মসজিদের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে তার সাথে কয়েকজন দ্বন্দ থাকায় তাকে হয়রানী করতে তার নামে মিথ্যা ও ভুল অভিযোগ করেছেন করেছেন কতিপয় ব্যাক্তি। তবে এতো কম বেতনে কোটি সম্পত্তির মালিক হওয়া সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি শরাফত আলী।

জামালপুর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন-“জনাব শরাফত আলী অত্যন্ত চতুরতার সাথে তার সম্পদগুলো স্ত্রী ও মেয়েদের নামে দেখিয়েছেন। যাতে তিনি ধরাছোয়ার বাইরে থাকেন। যার নামেই সম্পদ থাকুক। তাদের আয়ের উৎসগুলো খতিয়ে দেখা দরকার। তাহলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। একজন তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারী তার চাকুরীকালে যে বেতন পায় তাতে তার সংসার পরিচালনা করায় কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। সেখানে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন মানেই অসৎ উপায়ে আয়।”

এসব বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান-“আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসলে আমরা অভিযোগটি আমাদের প্রধান কার্যালয়ে পাঠায়। এরপর সেখানে যাচাই-বাছাইয়ের পর তদন্ত করার জন্য আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়। পরে আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করি। তবে শরাফত আলীর বিষয়ে অভিযোগটি আমরা এখনো হাতে পায়নি। আমরা এটি হাতে পেলে আমাদের প্রধান কার্যালয়ে পাঠাবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *