রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাও) সংবাদদাতা ঃ
ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের নির্বাচনী এলাকা পীরগঞ্জ ও রাণীশংকৈল উপজেলা নিয়ে। আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন ও গণসংযোগ চালাচ্ছেন পুরোদমে। প্রচার-প্রচারণা ব্যাপকহারে চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু গণসংযোগ নয় শহরের মত তৃণমূলেও ব্যাপক ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে । বড় দলগুলোর মনোনয়ন কারা পেতে পারেন, কার সম্ভাবনা বেশী এনিয়ে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লায় দলীয় নেতাকর্মীসহ ভোটারদের মধ্যে চলছে নিখুঁত বিশ্লেষণ।
জাতীয় নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি, ওয়াকার্স পাটি ও জাপার একক প্রার্থী থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে সম্ভাব্য প্রার্থীর ছড়াছড়ি। নিজেকে উপযুক্ত প্রমান করতে তিনারা রাত দিন বিভিন্ন কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি হাফিজউদ্দিন আহম্মেদকে। তাকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে নির্বাচিত হন জেলা ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি অধ্যাপক মোঃ ইয়াসিন আলী । স্বাধীনতার পর থেকে বেশির ভাগ সময় এই আসনটি আওয়ামীলীগের দখলে থাকলেও বিগত কয়েক বছর ধরে জাতীয় পার্টি ও ওয়াকার্স পার্টির দখলে রয়েছে।
তাই এ আসনটি পূর্ণরুদ্ধারের জন্য আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক এমপি ইমদাদুল হক, বঙ্গবন্ধু জয় বাংলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সুজাউল করিম বাবুল, পীরগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র রায়, আ’লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহ সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবি, কেন্দ্রিয় আওয়ামীলীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় চক্ষু বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ মোঃ চৌধুরী আনোয়ার। সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ও রাণীশংকৈল উপজেলা পরিষদের সাবেক ২ বারের সফল মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিনা জাহান লিটা দৌড় ঝাপ করছেন। অন্য দিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হলেন পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুর রহমান জাহিদ।
পীরগঞ্জ উপজেলার ১০টি, ১টি পৌরসভা, রাণীশংকৈল উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে ঠাকুরগাঁও-৩ আসন। স্বাধীনতার পর থেকে বেশির ভাগ সময় এই আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। তবে ২০০১ সালে হাতছাড়া হয়ে যায় আসনটি। জাপার প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক এমপি ইমদাদুল হক। প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজউদ্দীন আহম্মদ। তখন থেকে চলছে ভিন্নধারায়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান সাবেক এমপি ইমদাদুল হক, জাতীয় পার্টি থেকে হাফিজ উদ্দীন আহম্মদ আর ওয়ার্কাস পার্টির সাবেক এমপি শহীদুল্লাহ শহীদ। কিন্তু মহাজোট হওয়ার কারণে সে নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নির্দেশে মনোনয়নপত্র প্রতাহার করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইমদাদুল হক। তবে হাতুড়ি প্রতীক নিয়ে মাঠে থেকে যান শহীদুল্লাহ শহীদ। নানা নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে ওই নির্বাচনে বিএনপিকে পরাজিত করে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন হাফিজ উদ্দীন আহম্মেদ।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারো আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান সাবেক এমপি ইমদাদুল হক, জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দীন আহম্মদ আর ওয়ার্কাস পার্টির বর্তমান এমপি অধ্যাপক ইয়াসিন আলী। আবারো মাঠে থেকে যান ওয়ার্কাস পার্টির ইয়াসিন আলী। ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় জাতীয় পার্টি তথা মহাজোটের প্রার্থী হাফিজউদ্দীনের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায় হাতুড়ি মার্কা প্রতীক নিয়ে অধ্যাপক ইয়াসিন আলী। সে সময় হাফিজউদ্দীনের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বনিবনা না হওয়ায় ওয়ার্কাস পার্টির অধ্যাপক ইয়াসিন আলীকে সমর্থন জানান স্থানীয় আওয়ামী লীগ। সাবেক এমপি ইমদাদুল হকের নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ইয়াসিন আলী হাতুড়ি মার্কা নিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। পরাজিত হন হাফিজউদ্দীন আহম্মেদ।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই পীরগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক এমপি ইমদাদুল হক। নিয়মিত কর্মসূচিও পালন করছেন তিনি।
এ ব্যাপারে আ’লীগের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, আমি ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের আওয়ামীলীগের সবচেয়ে সিনিয়র নেতা। আমি কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের আহব্বানে দুই দুইবার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করেছি আশা করি এবার আমি নোমিনেশন পাবো, নোমিনেশন পেলে আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো বলে আমার বিশ্বাস।
এদিকে রাণীশংকৈল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংরক্ষিত আসনের এমপি সেলিনা জাহান লিটা। তিনিও মনোনয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে অধ্যক্ষ মো. সুজাউল করিম চৌধুরী বাবুলের নাম তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে জোরেশোরে আলোচনা হচ্ছে। নৌকা প্রতীকের জন্য তিনিও মাঠে নেমেছেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে তিনি এলাকায় প্রচার প্রচারণা ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ সুজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি দলের হাইকমান্ড যোগ্য প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেবেন। তবে দল থেকে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে তার পক্ষেই আমি কাজ করবো। এ বিষয়ে আ’লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির সদস্য ডাঃ মোঃ চৌধুরী আনোয়ার বলেন, ক্লিন ইমেজের প্রার্থীর অভাবে ভূগছেন ঠাকুরগাঁও-৩ আসন। আমি একজন ক্লিন ইমেজের প্রার্থী এবং শহিদ পরিবাবের সন্তান আমাকে যদি নোমিনেশন দেওয়া হয় আমি বিজয়ী হব বলে আশা করি। আমি আমার সাধ্যমতো এলাকায় বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছি। এদিকে কেন্দ্রীয় তাঁতি লীগ নেতা রবিউল ইসলাম রবি বলেন, আমি সার্বক্ষনিক প্রতিটি স্তরের মানুষের সাথে মিলে মিশে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছি। বিশেষ করে হত দরিদ্রদের পাশে থেকে তাদের মনের একজন মানুষে পরিনত হয়েছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি জয় হতে পারব বলে আশা রাখছি।
এ ব্যাপারে ওয়ার্কাস পার্টির বর্তমান এমপি অধ্যাপক ইয়াসিন আলী বলেন, হাতুড়ি মার্কা নিয়ে আমি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছি আমার ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ভাল একটা অবস্থান তৈরি করেছি । আমি কারো ক্ষতি করিনি। কাজেই ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে এবার আমিই মনোনয়ন পাবো বলে আমার বিশ্বাস।
সেলিনা জাহান লিটা এমপি বলেন, শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছি। স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা ও নির্দেশ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। এবার এ আসনে নির্বাচন করার সুযোগ পেলে আওয়ামী লীগের দুর্গ গড়ে তুলব।
পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র রায় জানান,স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সকলেই আমাকে ভালোবাসে এবং আমাকে সমর্থন করেছে আমি নির্বাচন করবো সেটা যে কোন পর্যায়ের হোক না কেন। নৌকা প্রতীক না পেলেও আমি নির্বাচন করবো।
এদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক এমপি হাফিজ উদ্দিন দীর্ঘদিন থেকে মাঠে কাজ করছেন । আগে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচন হওয়ায় এলাকায় দলকে গুছিয়েছিলেন নিজের মতো করে। সাবেক এমপি হাফিজ উদ্দিন বলেন, আমি ২বার সংসদ সদস্য থেকে যে উন্নয়ন করেছি তা কোন এমপি করতে পারেনি। বর্তমানে তৃণমূলে অবস্থান সুসংগঠিত করেছি তাই আমি আবারও নির্বাচিত হবো বলে আশা করছি। অপরদিকে এ আসনে বিগত সময়ে বিএনপি প্রার্থী কখনোই জয়ী হতে পারেনি। এ আসনে ’৯১ সাল থেকে বিএনপির প্রার্থী হন জাহিদুর রহমান জাহিদ। তাই একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে কৌশলে নির্বাচনী মাঠ চাঙা করতে বেশ তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিএনপি প্রার্থী জাহিদুর রহমান জাহিদসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের মাঝে। তৃণমূলের বিএনপির কর্মীরা বলছেন, বারবার হেরে যাওয়ার কারণেই হতাশায় ভুগছে অনেকেই। উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘সুসংগঠিত হয়ে আমরা নির্বাচনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমরা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী একাদশ নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। সুষ্ঠ ও অবাধ নির্বাচন হলে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে আমি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *