(মতামতের জন্য সম্পাদক দাযী নয়)
সিরাজী এম আর মোস্তাক, ঢাকাঃ সেদিনের কথা। বাংলাদেশের বিচারকগণ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বসে ১৯৭১ এর জঘন্য ঘাতক পাকবাহিনীর অপরাধ খুঁজে পায়নি। তারা পেয়েছে এদেশের যুদ্ধবিধ্বস্থ অসহায় নাগরিকদের অপরাধ। তাদের দৃষ্টিতে, ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বরে সংঘটিত গণহত্যা পাকবাহিনী করেনি। তা শুধু বাংলাদেশের ঘাতক রাজাকার, আলবদর ও আশশামস গোষ্ঠিই করেছে। এ রাজাকাররাই ৩০ লাখ বাঙ্গালিকে শহীদ করেছে এবং ২লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়েছে। বিচারকগণ পাকবাহিনীর প্রতি এ দরদমাখা আবেগ নিয়ে বিচার পরিচালনা করে। তারা কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়। তখন হাজার হাজার মানুষ গণজাগরণ মঞ্চে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এতে সরকার সাজা বাড়িয়ে অতি দ্রুত তাকে ফাঁসিতে ঝুলায়। উক্ত আন্দোলনকারীরা মোটেও স্পষ্ট ছিলনা যে, ১৯৭১ সালে সংঘটিত বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড পাকবাহিনী করেছে নাকি কাদের মোল্লা করেছে। তবুও সরকার নির্দ্বিধায় ফাঁসি কার্যকর করে। সম্প্রতি জাবালে নুর পরিবহনের ঘাতক চালকের অপরাধ মোটেও তেমন নয়। এটি সুস্পষ্ট হত্যাকান্ড। এর বিচারে সাক্ষীগত জটিলতা নেই। এজন্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালেরও দরকার নেই। এ সুস্পষ্ট হত্যাকান্ডে ঘাতকের ফাঁসির দাবিতে দেশের কোমলমতি শিশুরা জেগেছে। তারা ঘাতক চালকের পরিচয় দেখেনি, শুধু দেখেছে তার ফাঁসিযোগ্য অপরাধ। তাদের দাবি সম্পুর্ণ যৌক্তিক এবং শিক্ষণীয়ও বটে। সরকারের উচিত, ঘাতক চালকের ফাঁসি দ্রুত কার্যকর করা। বেপরোয়া গতি ও দুর্ঘটনা রোধে এটি উজ্জল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে প্রচলিত বিচারে বাংলাদেশের লান্থণা বেড়েছে। ট্রাইব্যুনালের সামনে আন্তর্জাতিক শব্দটি থাকায়, বিশ্বজুড়ে এখন পাকিস্তানিদের পরিবর্তে এদেশের নাগরিকেরাই ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধী প্রজন্ম বিবেচিত হয়েছে। ঘাতক চালকের ফাঁসি কার্যকর করলে এমন লান্থণা হবেনা। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির প্রতিবাদে জাতিসংঘ মহাসচিবসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্টপ্রধানের অনুরোধ অমান্য হয়েছে। ঘাতক চালকের ফাঁসিতে বিশ্বের কেউ প্রতিবাদ করবেনা। যুদ্ধাপরাধের বিচারে পাকবাহিনীর অপরাধের দায় এদেশের যুদ্ধবিধ্বস্থ নাগরিকদের ওপর পড়েছে। এদেশে বসবাসরত পাকি প্রেতাত্মারা ১৯৭১এ পাকবাহিনীর জঘন্য অপরাধ দেখেনা এবং তার বিচারও চায়না। তারা শুধু বাংলাদেশের যুদ্ধবিধস্থ নাগরিকদেরই ঘাতক, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধী অপরাধী মনে করে। ঘাতক চালকের অপরাধ সুস্পষ্ট। তাঁর ফাঁসিতে একের অপরাধ মোটেও অন্যের ওপর পড়েনা।

এতোকিছুর পরও ঘাতক চালকের ফাঁসি কার্যকরসহ কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের ৯-দফা দাবি কেন দ্রুত বাস্তবায়ন হচ্ছেনা, তা বোধগম্য নয়। উল্লিখিত তুলনায়, এদেশের প্রকৃত নাগরিক এবং বিদেশি প্রেতাত্মা বা বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর প্রজন্মের পরিচয় প্রকাশ পায়। তারা যেন নিজেদের সংশোধন করে নেয় এবং স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মর্যাদা রক্ষাসহ এর উন্নয়ন সাধনে ব্রতী হয়। এদেশের কোমলমতি নাগরিকদের ওপর পাক হানাদারদের মতো হামলা না চালায়। তাদের প্রতি রাজনৈতিক বিদ্বেষ না ছড়ায়। তাদের দাবি অনুসারে ঘাতক চালককে দ্রুত ফাঁসি দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *