সিরাজী এম আর মোস্তাক
৪ঠা জুলাই বিশিষ্ট লেখক, কবি ও বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহার অপহরণ নাটকের পর তার মতো ক্ষুরধার কলমের নিরবতায় বাংলাদেশে সংঘটিত সকল গুম, খুন ও অপহরণের হোতাদের পরিচয় স্পষ্ট হয়েছে। তার মতো সচেতন মানুষ সন্ত্রাসী গোষ্ঠির ভয়ে নিরব থাকার কথা নয়। তিনি সাদামাটা মানুষ। সবসময় লুঙ্গি ও পাঞ্জাবী পরেন। মানিব্যাগের পরিবর্তে মেয়েদের মতো কাছে রাখেন ছোট্ট ব্যাগ। জীবনের শেষ বয়সে এসে বিবেকের তাড়ণায় সদা সত্যের পক্ষে সৎসাহস দেখান। তাই এ নির্মম পরিণামের আভাঁস পেলেন। রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের পর চরম মনোভঙ্গুর অবস্থা সত্তেও আদালতে গোপন জবানবন্দি দিতে বাধ্য হলেন। আর বাইরে এসে নিরব ও নিশ্চুপ থাকলেন।
দৈনিক প্রথম আলোতে (৬ জুলাই) তাঁর জবানবন্দি উল্লেখ হয় এভাবে, অপহরণকারীরা তাকে মাইক্রোবাসে তুলেই মারধর করে এবং বলে, ‘তুই বেশি বাড়াবাড়ি করছিস।’ সেখানে আরো উল্লেখ হয়, ‘ফরহাদ মজহার রাতে হানিফ পরিবহনে নওদাপাড়া বাজার অতিক্রম করে বেঙ্গল টেক্সটাইল মিলের সামনে এলে বাস থামানো হয়। অভয়নগর থানার পুলিশ বাসটির সুপারভাইজার হাফিজুর রহমানকে ফোন করে বাসটি থামাতে বলেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ ফরহাদ মজহারকে বাস থেকে নামিয়ে আনে। পরে র‌্যাব-৬ এর একটি দল তাঁকে পুলিশের কাছ থেকে নিয়ে তাদের গাড়িতে তোলে। এ নিয়ে পুলিশ ও র‌্যাবের মধ্যে বাগবিতন্ডা হয়। ্একপর্যায়ে র‌্যাব তাঁকে নিয়ে উল্টোপথে খুলনার দিকে যেতে থাকে। তখন পুলিশের গাড়িটিও র‌্যাবের গাড়ির পিছু নেন। প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে খুলনার ফুলতলায় ডিআইজির নির্দেশে পুলিশের আরো গাড়ি র‌্যাবের গাড়িকে ব্যারিকেড দেয়। র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এই অবস্থায় উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরপর পুলিশ ফরহাদ মজহারকে ঢাকায় নিয়ে যায়।’ এ ঘটনার পর অপহরণকারীদের পরিচয় অস্পষ্ট থাকার কথা নয়। অপহরণকারীদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটি গঠন ও ঢাক-ঢোল পেটানোর দরকার নেই। আদালতে জবানবন্দির নাটকও দরকার ছিলনা। অথচ সরকার অযথাই বাড়াবাড়ি করেছে। এতেই ফরহাদ মজহারের বাধ্যগত নিরবতা।
গতবছর জঙ্গি ফাহিম নামে এক মেধাবী যুবক আদালত কর্তৃক ১০দিনের রিমান্ডে থাকাকালে হাতকড়া পরা অবস্থায় কথিত সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়। এতে পুরো জাতি নিরব ও হতবাক হয়। এরপরই কথিত সন্ত্রাসীদের দ্বারা দেশে অনেকগুলো দুর্ধর্ষ ঘটনা ঘটে। গুলশান হলি আর্টিজানে হামলা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে জঙ্গি হামলা বিশেষভাবে উল্লেখ্য। হলি আর্টিজানে কথিত ছয় জঙ্গি ২পুলিশকে হত্যা, ৪০পুলিশকে আহত ও ২২বন্দীকে নির্মমভাবে হত্যা করে সারারাত হোটেলে নিরবে কাটায়। পরদিন সেনাবাহিনীর সাথে লড়াই করে নিহত হয়। জঙ্গিদের পরিবার লাশ গ্রহণেও নিরবতা দেখায়। এভাবে সিলেটে জঙ্গি অভিযানকালে ৪/৫ মাইল জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি সত্তেও অদ্ভুত হামলায় র‌্যাবের গোয়েন্দা প্রধান সেনা কর্মকর্তা আজাদ আহত হয়। তাকে ঘটা করে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়। মুমুর্ষু সত্তেও একদিনের মধ্যে দেশে ফিরে আনা হয়। ২দিনের মধ্যে দাফন করা হয়। দেশের চৌকস সেনাবাহিনী, গৃহপালিত বিরোধীদল ও মানবাধিকার কর্মীসহ সবাই নিরবে সিঙ্গাপুরী বাঁশ মেনে নেয়।
এভাবে সাকার ছেলে হুকা চৌধুরীর নিরবতা সবাই জানে। দীর্ঘ অপহরণ থেকে মুক্তির পর ডাক্তার ইকবালের নিরবতা সবাইকে হতবাক করেছে। তারা কি মুক্তির পরও সন্ত্রাসী জুজুর ভয়ে ভীত? চারদিকে প্রশাসন বেষ্টিত থেকেও কেন এ ভীতি ও নিরবতা? অর্থাৎ তাদের নিরাপত্তা দানকারীরাই অপহরণের হোতা।
শিক্ষানবিশ আইনজীবী, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *