আকতার হোসেন ভুইয়া,নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)সংবাদদাতা ॥ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী আছে ,হাসপাতালে বেডও আছে শুধু ডাক্তার আর চিকিৎসা নেই।রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে। নেই শুধু ডাক্তার। বর্তমান সরকার চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁেছ দেয়ার জোর প্রচেষ্ঠা চালালেও প্রয়োজনীয় ডাক্তারের অভাবে খুড়িঁয়ে খুড়িঁয়ে চলছে সরকারের ঘোষিত দূর্গম নাসিরনগর উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা।উপজেলায় গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা বিরাজ করছে। অসহায় রোগীদের দেখার কেউ নেই। ডাক্তারের সাক্ষাৎ পেতে রোগীরা অপেক্ষা করে না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে।সাধারণ ও দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে ২০০৭ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়।৫০ শয্যা হাসপাতালে ২১ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে মাত্র ২জন মেডিক্যাল অফিসার ও ২জন কনসালটেন্ট কর্মরত রয়েছেন। তাদের মধ্যে কনসালটেন্টদের দেখা না মিললেও ২জন মাত্র ডাক্তার রোগীদের সেবা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে কনসালটেন্ট ডাঃ মোঃ ফেরদৌস রহমান(কার্ডিওলজী),ডাঃ মোঃ ইকবাল হোসেন(চক্ষু),ডাঃ তাবিন্দা আনজুম আজিজ(চর্ম ও যৌন),ডাঃ নাওমী শরীফ(মেডিকেল অফিসার)ও ডাঃ সোহেলী শারমিন(মেডিকেল অফিসার)এই ৫জন দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন স্থানে প্রেষণে থাকায় তাদের পদে কোন চিকিৎসক নিয়োগ দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের সিজারিয়ান(সিজার) করা জরুরি হয়ে পড়লেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় তাদের কষ্টের সীমা থাকে না।টেকনিশিয়ানের অভাবে পড়ে রয়েছে অত্যাধুনিক ইসিজি ও আলট্রাসনোগ্রাফী এক্সে মেশিনটি।বন্ধ রয়েছে প্যাথলজিষ্ট(ল্যাবঃ) কার্যক্রমও। রোগী আসছে-যাচ্ছে,কিন্তু চিকিৎসক সংকটের কারনে প্রযোজনীয় স্বাস্থ্য সেবা মিলে না এ উপজেলার মানুষের।প্রায় ৪ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত নাসিরনগর জনপদে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ইউনিয়ন পর্যায়ে ১টি পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৩টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ৮টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র রয়েছে।এসব কেন্দ্রে চিকিৎসক,কর্মচারি,ওষুধ ও যন্ত্রপাতির স্বল্পতা, বিদুৎ,পানি,স্যানিটেশন সমস্যা,অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ,জরার্জীণ অবকাঠামো,চিকিৎসক ও কর্মচারিদের আবাসিক সংকট, ব্লাড ব্যাংক না থাকাসহ নানাবিধ সংকটে উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে সরকার ঘোষিত সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা এ উপজেলায় অধরাই বলা চলে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে দুর-দুরান্ত থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে অসহনীয় দূভোর্গের শিকার হচ্ছে রোগীরা।অথচ এ হাসপাতালে প্রায় সময় ইনডোরে ৬০/৭০ জন রোগী ভর্তি থাকে এবং আউটডোরে ৩/৪শ রোগী চিকিৎসা দিতে আসে। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ১টি পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৩টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে ৮টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের একটিতেও চিকিৎসক নেই। ফলে গ্রামের হাজার হাজার সাধারণ মানুষ বাড়ীর কাছে চিকিৎসা কেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাবিজ আর ঝাড়ফুঁক-ই তাদের একমাত্র চিকিৎসা।আবার কেউ কেউ হাতুড়ে ডাক্তারের অপচিকিৎসার শিকার হয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন।একাধিক সূত্র জানায় এখানে ডাক্তারদের পোষ্টিং দেয়া হলেও তদবির করে তারা প্রেষণে অথবা অন্যত্র বদলী হয়ে চলে যায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ কে এম হুমায়ুন কবির ডাক্তার সংকটের কথা স্বীকার করে জানায়,হাসপাতালে সেবার মান বাড়াতে হলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক প্রয়োজন। ডাক্তার না থাকায় রোগীদের ঠিকমত চিকিৎসা সেবা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। তবে প্রতিমাসেই এবিষয়ে সিভিল সার্জনকে অবহিত করা হচ্ছে।এদিকে এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *