প্যানেল প্রত্যাশী নিবন্ধিত শিক্ষকদের আজ (২৫ জুন) গণঅনশনের একুশতম দিনে সংহতি জানাতে এসেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা, জননেতা, কমরেড আবুল হোসাইন।

তিন তাঁর সংহতি বক্তব্যে এ দাবি করেন। তিনি বলেন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যায়ন ককর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক শিক্ষক হিসাবে নিবন্ধিত বেকার শিক্ষকদের দাবিগুলো যৌক্তিক; এই দাবিগুলো মেনে নিয়ে অবিলম্বে নিবন্ধিত সকল বেকার শিক্ষককে চাকরি দিতে হবে। এবং যারা ইতোমধ্যে চাকরি পেয়েছে তাদেরকে চাকরি প্রত্যাশীদের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। এবং নিয়োগ বঞ্চিতদের সবার চাকরি না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে নিবন্ধন পরীক্ষা স্থগিত রাখতে হবে।

এসময় তিনি নিয়োগের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত অনশনকারীদের পর্যন্ত মাঠ না ছাড়ার পরামর্শ দেন।

গত ৫ জুন থেকে শাহবাগে প্যানেলভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে নিয়োগ বঞ্চিত বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের গণঅনশন চলছে।

গণঅনশন থেকে শিক্ষকরা তিন দফা দাবি তুলে ধরেছেন। যথা- ১. এনটিআরসি’র নিবন্ধিত সনদধারীদের স্ব স্ব নীতিমালায় প্যানেলভিত্তিক নিয়োগ দিতে হবে ২. বৈধ সনদধারী চাকরি প্রত্যাশীদের নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত নিবন্ধন পরীক্ষা স্থগিত রাখতে হবে ৩. এক আবেদন প্যানেলভিত্তিক নিয়োগ দিতে হবে এবং ইনডেক্সধারীদের প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত না করে আলাদা বদলির ব্যবস্থা করতে হবে।

গণঅনশনে প্যানেল প্রত্যাশী নিবন্ধিত শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জনাব জি. এম. ইয়াছিন বলেন, তিন দফা দাবিতে গণঅনশনে দশম অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা এনটিআরসিএর পক্ষ থেকে কেউ অনশনস্থলে আসেন নাই বা গণমাধ্যমেও কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন নাই। ইতোমধ্যে আমাদের অনেক অনশনকারী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং একজনের অবস্থা সংক্টাপন্ন।

তিনি আরও বলেন, ১১৫৬ জন জাল সনদধারী ভূয়া শিক্ষককে সরকার নিয়োগ নিয়েছিল যাদের সনদ ভূয়া প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বেতন ভাতাসহ সমুদয় অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। অথচ আমরা এনটিআরসিএ কর্তৃক বৈধ সনদ প্রাপ্ত হয়েও নিয়োগের দাবিতে আমাদেরকে রাজপথে অনশন করতে হচ্ছে।

এ সময় প্যানেল প্রত্যাশী নিবন্ধিত শিক্ষক জনাব রাইহান কবির রনো বলেন, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এমন একটি প্রতিষ্ঠান যারা যোগ্য প্রার্থী বাছাই করার পর তাঁদেরকে নিয়োগ না দিয়ে আবার প্রার্থী খোঁজে এবং পরীক্ষা ফি’র নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

তিনি বলেন, শিক্ষক হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার জন্য প্রথমে আমরা স্কুল বা কলেজ ক্যাটাগরিতে আবেদন করি। একটি আবেদনের খরচ ৩৫০ টাকা। আবার শিক্ষক হিসেবে চূড়ান্ত উত্তীর্ণ হওয়ার পর, অর্থাৎ জাতীয় মেধা তালিকায় স্থান করে নেওয়ার পর আবার নিয়োগের জন্য নতুন করে আবেদন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি শূন্যপদের বিপরীতে আবেদন ফি ১০০ টাকা। অর্থাৎ, বাংলাদেশে একমাত্র চাকরি এই বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ যেখানে দুই বার আবেদনে টাকা নেয় সরকার।

এনটিআরসিএ শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রত্যেক নিবন্ধনধারীর কাছ থেকে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা আলদা ফি নির্ধারণ করেছে এবং যত খুশি তত আবেদনের ব্যবস্থা চালু করে বেকার নিবন্ধনধারীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বেকারদেরকে সর্বস্বান্ত করছে। তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র গত আড়াই বছরে এনটিআরসিএ নিয়োগ প্রত্যাশী নিবন্ধিত বেকারদের কাছ থেকে আবেদনের নামে মোট ২০৩ কোটি টাকা আদায় করেছে। অথচ এই সময়ে নতুন করে একজনও নিয়োগ দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।

প্যানেল প্রত্যাশী নিবন্ধিত শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি জনাব আমির হোসেন বলেন, ২০০৬ সালে প্রকাশিত গেজেটের আলোকে পূর্বের নিবন্ধিত শিক্ষকদের নিয়োগের কোনো সুরাহা না করে, ২০১৫ সালে গেজেট অনুযায়ী এককভাবে নিয়োগ সুপারিশের উদ্দেশ্যে ১৩তম পরীক্ষা নেয় এনটিআরসিএ। এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, জাল সনদধারীরা এখনো চাকরিতে এখন বহাল আছে, অথচ বৈধ সনদধারীরা বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

কৃর্তপক্ষের স্বেচ্ছাচারী আচারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, একই চাকরির জন্য একই কর্তৃপক্ষের অধীনে হাজার হাজার আবেদন করতে হয়, এমন নজির পৃথিবীর কোথাও নেই। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত গণঅনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

এছাড়া গণঅনশনে বক্তব্য রাখেন প্যানেল প্রত্যাশী নিবন্ধিত শিক্ষক জনাব আল মুমিন, অরবিন্দ কুণ্ডু, সহিদুল ইসলাম, কাকলী পারভী, সুজাউর রহমান, রাজিয়া সুলতানা রথী, আনিছুর রহমান, শারমিন জাহান, পারুল আক্তার, শারমিন আফরোজ চায়না, সুমন দাস প্রমূখ। প্যানেল প্রত্যাশী নিবন্ধিত শিক্ষক সংগঠনের সদস্যরা ছাড়াও আজ শতাধিক নিবন্ধিত শিক্ষক গণঅনশন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *