লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)’র সরকারি জমি থেকে এমপির এপিএস ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামলের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করায় প্রকাশ্যে ম্যাজিস্ট্রেটকে হুমকি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন ওই নেতা।

বুধবার (২৭ডিসেম্বর) রাতে হাতিবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী এলাকায় নৌকার নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্যে লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহার হোসেনের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে ওই হুমকি দেন তিনি।

এরআগে ওই বুধবার সকাল থেকে দিনভর আওয়ামীলীগ নেতার বিলাসবহুল বৈরালী নামক রেস্তোরাঁসহ তালিকাভুক্ত ৪৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে প্রশাসন। হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানিতে পিআইভুক্ত (কি পয়েন্ট ইন্সটেলশন) তিস্তা ব্যারাজ সংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর জমির উপর ছিলো ওই অবৈধ স্থাপনা।

ওই আওয়ামীলীগ নেতা লালমনিরহাট-১ আসনের এমপির ব্যক্তিগত সহকারী এবং উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক

এদিকে সরকারি জমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ‘দাঁতভাঙা জবাব’ দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন আওয়ামীলীগ নেতা আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল।

ভিডিওতে শ্যামলকে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে বলেন, “যারা এই ভাঙচুরে (অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে) অংশগ্রহণ করেছেন, যারা এতে মদদ দিয়েছেন, তারা আওয়ামী লীগের লোক হতে পারেন না। ওইসব প্রশাসন জামায়াত-বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন।” তিন জন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সরকারের ওই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দখলমুক্ত করাকে শ্যামল ‘নৈরাজ্য’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার পরও আজকে দোয়ানির মাটিতে এই নৈরাজ্য কেন হলো? এর জবাব প্রশাসনকে দিতে হবে। শুধু ৭ তারিখের অপেক্ষায় আছি। ৭ তারিখের পরে আমরা সব রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেব। এদের (প্রশাসনের কর্মকর্তাদের) বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাস্তাঘাট খুলে দেওয়া হবে না।”

তিনি বলেন ‘আমি হুঁশিয়ার করে দিতে চাই’ “৭ তারিখের পরের তারিখ আওয়ামী লীগের তারিখ, শেখ হাসিনার তারিখ, জননেতা মোতাহার হোসেনের তারিখ, আমাদের তারিখ। আপনারা (প্রশাসনের কর্মকর্তারা) যে কাজটি আজকে (গত বুধবার) করেছেন, দাঁত ভাঙা জবাব ইনশাআল্লাহ আমরা দিবো।”

এদিকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের দীর্ঘ নয় মাস পেরিয়ে অবশেষে আওয়ামীলীগ নেতার অবৈধ স্থাপনা সহ অন্যান্য স্থাপনা উচ্ছেদ হওয়ায় স্থানীয় মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, “সন্ধ্যা থেকে রাত গভীর পর্যন্ত ওই অবৈধ রেস্তোরাঁয় চলতো নেশাখোরদের আড্ডা। পাশ্ববর্তী রংপুর ও ডোমার, ডিমলা থেকে লোকজন এসে নেশার আড্ডা জমাতো। সন্ধ্যার পর সাধারণ মানুষজন রেস্তোরাঁর পাশ দিয়ে যেতে ভয় পেতো বলেও তারা অভিযোগ করেন। তবে জাতীয় নির্বাচনের প্রচারণার সময় প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় আওয়ামিলীগের একাংশ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা যায়, ওই এলাকায় তাদের অধিগ্রহণ করা ২৫ শতাংশ জমি অবৈধভাবে দখল করে রেস্তোরাঁ নির্মাণ করেন ওই আওয়ামীলীগ নেতা।
২০২২ সালের ৭ জুলাই জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে সরকারি জমি দখল করে তৈরী আওয়ামিলীগ নেতা শ্যামলের বিলাসবহুল রেস্তোরাঁটি উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন।
পরবর্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আপত্তিতে চলতি বছর ১২ মার্চ বৈরালীসহ বেশ কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক।
ওই আদেশের দীর্ঘ নয় মাস পর অবশেষে গত বুধবার শ্যামলের রেস্তোরাঁটিসহ সেখানে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।

লালমনিরহাটের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসফাকুল কবির জানান, “সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখলমুক্ত করা হলো। নানা জটিলতার কারণে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের ৯ মাস পর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে’।
পাউবো ডালিয়া জোনের নির্বাহী প্রকৌশলীর
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা জানান, “২০২১ সালে সরকারের ২৫ শতাংশ জমিতে অবৈধভাবে বালু ভরাট করে একই বছরের নভেম্বরে স্থাপনার নির্মাণ কাজ শেষ করেন শ্যামল। ২০২২ সালের ৬ জুন এবং ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক বরাবর তিস্তা ব্যারাজের অধিগ্রহণ করা জমিতে বৈরালী রেস্তোরাঁসহ তালিকাভুক্ত ৪৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। পরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে ২০২৩ সালের ১২ মার্চ লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়।

উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেন লালমনিরহাটের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিয়া নওরীন, লালমনিরহাটের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদ আল সোহান এবং লালমনিরহাটের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসফাকুল কবির, হাতীবান্ধা থানার ওসি সাইফুল ইসলামসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ছিলেন। এসময় বিপুল পরিমান পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *