মেজর (অব.) মুহাম্মদ হানিফ
অবাস্তব আশ্বাসে ‘জলে বাস করে কুমিরের সাথে পাংগা নেবার’ অদুর্দশিতার খেসারত দিতে হচ্ছে/ হবে ইউক্রেনকে।

রাশিয়ার পেটের মধ্যে বসবাস করে রাশিয়া বিরোধী ন্যাটো ( NATO) জোটভুক্ত হবার ইউক্রেনীয় আস্ফালন ও সংকল্প রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেন আক্রমণকে অবশ্বম্ভাবী করে তুলেছিল। প্রকৃতপক্ষে ইউক্রেন আক্রমণ ব্যতিত রাশিয়ার হাতে আর কোন বিকল্প ছিল না। কারন কোন অবস্থাতেই রাশিয়া তার পেটের মধ্যে তার চীর শত্রু ন্যাটোর আগমনকে মেনে নিতে পারে না। আমেরিকার উপর ভরসা করে রাশিয়ার সাথে বিরোধে জড়ানো ইউক্রেনের মারাত্মক ভুল। কারন রাশিয়াকে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করলেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর অবস্থানে নেই আমেরিকা।
যুদ্ধে বিজয়ী ও বিজিত উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অর্থনৈতিক অবরোধে পড়ে রাশিয়া ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সর্বোচ্চ ক্ষতি হবে ইউক্রেনের আর ইউক্রেনকে রক্ষা করতে না পেরে নৈতিক পরাজয় বরন করবে আমেরিকা।
ঘটনার পরম্পরা

১) ইউক্রেন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতন্ত্র ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেংগে যাবার পর ইউক্রেন স্বাধীন হয়।
২) ইউক্রেন বর্তমান রাশিয়ার নিকটতম প্রতিবেশী।
৩) সম্প্রতি আমেরিকা ইউক্রেনকে তাদের সামরিক জোট ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্তির জন্য কার্যক্রম শুরু করে।
৪) রাশিয়া ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্ত হবার বিরোধিতা করে।
৫। রাশিয়ার বিরোধিতা সত্বেও এবং ইউক্রেনকে ফেরানোর জন্য ভয় দেখাতে ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া ১ লক্ষ ৩০ হাজার সৈন্য মোতায়েন সত্বেও ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ন্যাটোতে যোগদানের দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করে।
৬) অবশেষে গত মংগলবার রাশিয়া ইউক্রেনের ২টি অঞ্চলের স্বাধীনতা ঘোষণাপুর্বক কার্যতঃ সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করেছে।
৭) রাশিয়ার এই পদক্ষেপের কারনে যুক্তরাষ্ট্, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো রাশিয়ার উপর অর্থনৈতিক এবং বিভিন্ন অবরোধ ঘোষনা করেছে / আরও করবে।
বিশ্লেষণ

সমুদয় ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করতঃ নিম্নোক্ত বিষয়গুলো প্রতিয়মান হয়ঃ
১) রাশিয়ার নিকটতম প্রতিবেশী ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটভুক্ত করার আমেরিকান পরিকল্পনা ‘ পায়ে পারা দিয়ে গোলমাল’ করার পরিস্থিতি তৈরি করে।
২) ইউক্রেন ন্যাটোভুক্ত হলে তা হবে রাশিয়ার জন্য মারাত্মক নিরাপত্তা ঝুকি। রাশিয়ার নাকের ডগায় ন্যাটো যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন হবে – তা কী করে রাশিয়া মেনে নিতে পারে?
৩) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তোরজোড় এবং ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমার জেলেনস্কির যে কোন মুল্যে ন্যটোতে যোগদানের সংকল্প ঘোষণার প্রেক্ষিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপের কোন বিকল্প রাশিয়ার হাতে ছিল না।
এই যুদ্ধে রাশিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তার পেটের মধ্যে ন্যাটো সামরিক শক্তির অবস্থান ঠেকাতে সক্ষম হবে। চরম ক্ষতি হবে ইউক্রেনের। ইউক্রেনে বসতে পারে রাশিয়ান পুতুল সরকার। এমনকি ইউক্রেন হারাতে পারে তার স্বাধীনতা। ভিয়েতনাম এবং আফগানিস্তান যুদ্ধে ‘কাদায় আটকে’ পড়ে তিক্ত পরাজয়ের গ্লানির পুনরাবৃত্তি করার মত পরিস্থিতি ও অভ্যন্তরীণ সমর্থন পাবার সম্ভবনা ক্ষীন বিধায় ইউক্রেনকে রক্ষা করার কার্যকর ভুমিকা পালনে আমেরিকা ব্যর্থ হবে এবং শক্তির ভাবমূর্তি সংকটে পড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *