আবুল আহসান রিমন:
বিয়ানীবাজার উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী সারপার গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুছ ছালাম এর বাড়িতে দিনদুপুরে স্থানীয় জামায়াত-শিবির কর্মীরা হামালা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলাকারীরা তার বাড়ির পাকা দেয়াল, বসতঘরের টিন, দরজা, জানালা, পানির ট্যাংকী ও আলমারী ভাংচুর করে। আলমারীতে রক্ষিত ১০ ভরি স্বর্ণালকার সহ মূলবান জিনিসিপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়। তারা বাড়ির ভিতরে কলা ও সুপারী গাছের বাগান কেটেও বিনষ্ট করে। গত ২১ আগষ্ট রবিবার দুপুর সাড়ে ১১টায় এ ঘটনা ঘটে বলে থানায় দায়েরকৃত লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুছ ছালাম লিখিত অভিযোগে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে বাকিদের গয়রো দেখান। নাম উল্লেখ্যকৃত আসামীরা হলেন, মরহুম মুছলিম আলীর পুত্র আজিজুর রহমান ও আতাউ রহমান, মরহুম আতিকুর রহমান’র পুত্র মকবুল আলী, আজিজুর রহমান’র পুত্র মিনহাজ উদ্দিন, মরহুম বটি মিয়ার পুত্র মাখন মিয়া, ইছমাইল আলীর পুত্র মস্তকিম আলী, আয়াজ আলীর পুত্র মাহবুব ও শিহাব উদ্দিন’র পুত্র হাবীব আলী সর্ব সাং সারপার।

সরজমিন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুছ ছালাম এর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সীমানা প্রাচীরের একাধিক স্থানে ভাংচুরের চিহ্ন রয়েছে, ঘরের টিনের চালায় ইটপাঠকেলের আঘাতে ছোটবড় অসংখ্য ছিদ্র সৃষ্টি হয়েছে, বসত ঘরের দরজায় দারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন, ৪ জোড়া জানলা ফ্রেইম হতে বিচ্ছিন্ন, আলমারির গ্লাস ভাংচুর করা, বাড়ির ভিতরের কলা ও সুপারী বাগানের গাছপালা কাটা ও হামলার চিহ্ন রয়েছে। সাংবাদিক আসার সংবাদ পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুছ ছালাম’র বাড়িতে অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় শতাধিক লোকের সমাগম ঘটে। কথা হয় পাশের বাড়ির মৃত নজরুল ইসলাম’র পুত্র মারুফ আহমদ এর সাথে। মারুফ বলেন, ‘‘ঘটনার সময় আমি আমার বাড়ির পথে ছিলাম, হঠাৎ দেখি আজিজুর রহমান, মাখন মিয়া এদের নেতৃত্ব প্রায় শ খানেক লোক এসে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুছ ছালাম’র বাড়িতে হামলা চালায়। তাদের হাতে দা, কিরিছ, লাটি, শাবল, ইট, পাথর ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র ছিল। তারা দেয়াল ভাংচুর করে, বাড়ির গাছপালা কর্তন করে, ঘরের টিনে ও দেয়ালে ইট পাথর ছুড়তে থাকে, ঘরের ভিতরে ঢুকে ভাংচুরও করেছে। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং পুলিশ এসে হামলাকারীদের নিবৃত্ত করে।’’ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুছ ছালাম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘‘ যে শত্র“র বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলাম, আজ ৪৫ বছর পর স্বাধীন দেশে সেই পাক শত্র“র দোসর জামায়াতের লোকেরা আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে আমাকে প্রাণে মারার হুমকী দিচ্ছে, আমার ঘর লুটপাট করে নিয়ে গেলো! এ দিন দেখার আগে আমার মরণ হলো না কেনো?’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘গত ইউপি নির্বাচনে আমি ও আমার ছেলেরা আওয়ামীলীগের নৌকার পক্ষে ছিলাম, তারা সবাই ছিলো নৌকা বিরোধী। সেই থেকে তারা আমাদেরকে নানা ভাবে হুমকী দিয়ে আসছে। ঘটনার দিন স্থানীয় দু’গ্রামের বিশৃংঙ্খলার সুযোগে তারা সেই শোধ নিলো। উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং পুলিশ ঘটনাস্থ পরিদর্শন করলেও তারা তখন আমাকে কোন শান্তনা দেয়নি। হামলাকারীরা প্রভাবশালী তারা টাকা দিয়ে সব কিছু ম্যানেজ করে নেয়। আমি এ ঘটনার আইনানুগ বিচার চেয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছি। আমি বিচার চাই।’’

মুড়িয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, ‘‘বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলার বিষয়টির আমরা তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচার চাই। অন্যথায় মুক্তিযোদ্ধারা ঘরে বসে থাকবে না।’’

এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, সেদিনের সকল ঘটনাই সামাজিক সালিশ নিষ্পতির প্রক্রিয়ায় আছে, যদি সালিশে নিষ্পতি না হয় তবে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা অবশ্যই নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *