।।গোলাম মোস্তফা রাঙ্গা।।
কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলাধীন থানাহাট ইউনিয়নের বহবের ভিটা গ্রামের মোঃ জয়নাল আবেদীনের কন্যা শাহনাজ খাতুনকে ছোট বেলা হতে আদর করে সকলেই ময়না নামে ডাকত। কাগজে-কলমে শাহানাজ খাতুন হলেও আদরের ডাক নাম ময়না বলেই এলাকায় পরিচিত তিনি। চার ভাই-বোনের সংসারে ময়না সবার ছোট। তাই বাবা-মা, ভাই-বোন ভালবেসে ময়নাকে ঈদ, নববর্ষসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও পর্বসমূহে পাঁচ-দশ টাকার নতুন নোট উপহার দিতো। ময়না সেই নোটগুলো সযতনে জমিয়ে রাখতো। ২০০৭ সালের মার্চ মাসে তার এলাকার আজগরের বাড়ীতে অনুষ্ঠিত ১০দিন মেয়াদি গ্রামভিত্তিক ভিডিপি মৌলিক প্রশিক্ষণে আগত প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তাদের হাস-মুরগী পালন বিষয়ক যুগপোযোগী বক্তব্য শুনে হাস-মুরগী ও কবুতর পালনে উৎসাহী হয়ে উঠেন ময়না। এরপর ২০১২ সালের মার্চ মাসে আনসার-ভিডিপি একাডেমি, সফিপুর, গাজীপুর হতে ৪২দিন মেয়াদী সাধারণ আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন ময়না। সেখানেও তিনি আত্মকর্মসংস্থানে বিষয়ে অনুপ্রাণিত হন। আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ২০১৪ সালের মার্চ মাসে গাইবান্ধার এসএম ব্যারাকে আনসার-ভিডিপি বেসিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ৪২দিন মেয়াদি পেশাভিক্তিক বেসিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালে কুড়িগ্রাম আলিয়া মাদ্রাসা হতে কামিল পাশের মাধ্যমে একাডেমি পড়াশুনা শেষে শুরু হয় তার বেকার জীবন। বড় বোন জাহানারা বেগম বিএডিবিতে চাকরী করলেও বড় ভাই দুজনই বেকার এবং চাকুরীর পেছনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বড় দুই ভাই বেকার থাকায় তাদের বিপরীত দিকে হাটতে শুরু করে শাহানাজ খাতুন ময়না। এসময় তার জমানো টাকার এক হাজার পাঁচশত টাকা দিয়ে স্বল্প পরিষরে কিছু করার চিন্তা শুরু করেন। চাকরীর চক্কর হতে বের হতেই আত্মকর্মস্থানের লক্ষ্যে হাঁস-মুরগী ও কবুতর চাষের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। মায়ের কাছ থেকে নেওয়া মুরগীর দুটি বাচ্চা বড় হলে তা থেকে বিক্রয় করে নিজের টুকিটাকি ব্যয় করেও ছয়টি মুরগি এখনো রয়েছে তার। সেখান থেকেও উজ্জীবিত হয়ে ২০১৯ সালের শুরুতে একহাজার পাঁচশত টাকার তহবিল নিয়ে ৬০টি হাঁসের বাচ্চা দিয়ে হাঁসের খামার শুরু করে ময়না। ২০১৯ সালের এপ্রিলে উদ্দীপন এনজিও থেকে বিশ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে খামারের পরিধি বৃদ্ধি করতে আরো ২০০ বাচ্চা কিনেন। এরপর ২০১৯ সালের শেষের দিকে ডিসেম্বর মাসে আরো ৭০০০ টাকা ব্যয়ে ২০০ বাচ্চা ক্রয় করেন। সেই সাথে বাড়ীতে কবুতরও পালন শুরু করেন। এখন তার কবুতরের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৩৫টিতে। দেশি মুরগী ১৫ থাকলেও স্থানীয়ভাবে ধান ক্রয় করে তা থেকে মুরগী ও কবুতরের খাবার তৈরি করতে গিয়ে জমিতে স্প্রে করা বিষ মেশানো ধান খেতে ১৫টি মুরগীই মারা যায় ময়নার। তবুও দমে যান নি ময়না। নতুন উদ্দামে আবারো মুরগী পালন শুরু করেছেন তিনি। বাড়ী চারিদিকে বিভিন্ন ধরনে সবব্জী চাষ দেশে বুঝার উপায় নেই এমএ (কামিল) পাশ একজন এভাবে কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হতে পারেন। ২০১৯ সালে তিনি সহকারী মৌলবি পদে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষাতে পাশ করেন তিনি। কিন্তু তাতে কি, যতদিন চাকুরী পাননি ততদিন তিনি তার এই আত্মকর্মসংস্থানের কার্যক্রম অব্যহত রাখবেন। নিজে আয়ের বিকল্পপন্থা অবলম্বনে তিনি ভর্তি হয় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার দাশেরহাটে অবস্থিত কুড়িগ্রাম হোমিওপ্যাথি কলেজে। ২০২০ সালে জানুয়ারিতে উক্ত ডিপ্লোমা কোর্সের ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণও করেছেন। তিনি নিজেকে দেশ সেবায় নিয়োজিত করতে ২০১৯ সালের জুন মাসে চিলমারী উপজেলার মহিলা আনসার প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং মহিলা আনসার প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *