ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি ঃ
ভূরুঙ্গামারীর সোনাহাট দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দূনর্ীতির অভিযোগ উঠেছে। তার অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড দিনাজপুরের সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক সুধাংশু শেখর রায় সরকার তদন্ত করেছেন। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ অন্যান্যদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৮ জানুয়ারী এ তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অভিযোগে জানাগেছে, সোনাহাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন গত ১০জুন ১৯৯৬ খ্রিঃ তারিখে শরীর চর্চা শিক্ষক পদে যোগদান করেন। ২০১০ সালের এমপিও ভূক্তির নীতিমালা অনুযায়ী একাধিক তৃতীয় বিভাগ হলে, সে শিক্ষক উচ্চতর বেতন স্কেল অথবা উচ্চতর পদে নিয়োগ কিংবা শরীর চর্চা শিক্ষক প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের বিধান নেই। কিন্ত প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেনের একাধিক তৃতীয় বিভাগ (এসএসসি, বিকম ও বিপিএড) ও শরীরচর্চা শিক্ষক হওয়া সত্বেও ওই নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ১ জানুয়ারী ২০১২ সালে প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ লাভ করেন। তার বিএড সনদটিও দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগৃহিত। প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হওয়ার পর নিজ ক্ষমতা ব্যবহার করে জাল ও ভূয়া সনদের মাধ্যমে স্ত্রী শাহিদা খাতুনকে সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) পদে নিয়োগ দেন। নিবন্ধন জাল ওভুয়া হওয়ায় তার (ঐশিক্ষিকা) বিরুদ্ধে এনটিআরসি মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ৪০ জনের নিচে শিক্ষার্থী থাকলে হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেবার বিধান না থাকলেও মাত্র দুজন শিক্ষার্থীর জন্য গত ৬ ফ্রেব্রুয়ারী-২০১৯ খ্রিঃ তারিখে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর ছাড়াই সুমন সরকার নামে এক ব্যক্তিকে সহকারী শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে উদ্যোগ নিয়েও শিক্ষার্থী না থাকায় হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষকের পদ অনুমোদন দেয়া না হলেও পার্শ্ববতী ইউনিয়ন বলদিয়া এবং কালিগঞ্জের মাদাইখাল থেকে ভুয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে এ পদটির অনুমোদন নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগে জানানো হয়েছে। অনুসন্ধানে ৮ম শ্রেণিতে রীতা রাণী এবং ৯ম শ্রেণিতে সঞ্চয় কুমার ছাড়া আর কোন হিন্দু শিক্ষার্থীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
দরিদ্র ও মেধাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি দেবার বিধান থাকলেও প্রধান শিক্ষক ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার পুত্র সোয়াইব হোসেন আইডি নং ১০২২৪৫৩০০০২২ কে উপবৃত্তি প্রদান করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র ক্রয়, ঘর সংস্কার ও টয়লেট সংস্কারের জন্য ১০.৩৪ মেঃটন টিআর/কাবিখা প্রকল্প প্রদান করা হলেও ভুয়া কাজ দেখিয়ে সমুদয় অর্থ প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেছেন বলে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগ প্রাপ্তির পর মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক উপ-পরিচালকের (রংপুর) প্রতিনিধি হিসেবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড দিনাজপুরের সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক সুধাংশু শেখর রায় সরকার গত ২৮ জানুয়ারী অভিযোগের তদন্ত করেন। তিনি জানান, অভিযোগের ব্যাপারে কমিটির সদস্য ও প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেয়া হয়েছে। এসব যাচাইবাছাই করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন জানান, একজন অফিস সহায়ক নিয়োগ নিয়ে দ্বন্দ্বের কারনে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি জানান, তদন্তকারী কর্মকর্তা বিষয়গুলো মীমাংসার জন্য ১৫ দিন সময় দিয়েছেন তা না হলে বিদ্যালয়ের বিল বন্ধ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
সভাপতি আক্তার হোসেন প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমরা প্রমানসহ প্রতিটি অভিযোগ দায়ের করেছি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আইবুল ইসলাম তদন্ত অনুষ্ঠানের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *