হুমায়ুন কবির সূর্য্য, কুড়িগ্রাম থেকে :
বেকার যুবতী ও বিধবা মহিলাদের ভরসার নাম এখন মরিয়ম বুবু। দূর-দূরান্ত থেকে নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও ছুটে আসছেন এই বুবু’র কাছ থেকে কাজ শিখতে। যদি কাজ শিখে পরিবারের জন্য দু’পয়সা বাড়তি উপার্জন করা যায়। এই উপার্জনটাও কিন্তু সহজ নয়। সারাদিন গাধার খাটুনির পর আয় হয় দু’শো থেকে তিনশো টাকা। কোনদিনও তাও মেলে না। কিন্তু টানাটানির সংসারে একজনের আয় দিয়ে ছেলেমেয়ে মানুষ করা কঠিন হয়ে পরেছে। তাই কষ্ট করে কিছু শিখে যদি আয় বাড়ানো যায়। আর এসব অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন মরিয়ম বুবু। খুলেছেন মহিলা উন্নয়ন সমিতি। সমিতিতে এখন সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিনশ জনে। সবাই মিলে চলছে বেঁচে থাকার লড়াই।
মরিয়ম বুবু’র জীবনটা সহজ ছিল না। মাত্র ১৫ বছরে বয়সে দর্জি দেলোয়ার হোসেনের সাথে তার বিয়ে হয়। দুজনের বাড়ী কুড়িগ্রামের নাগেশ্বী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের আস্করনগর বাণিয়াটারী গ্রামে। দরিদ্র স্বামীর সংসারে সন্তান আসার পর টানাটানিটা যেন বেড়েই চলছিল। সংসারের দৈন্যতা দেখে স্বামীর কাছ থেকে দর্জির কাজ শিখে নেন উদ্যমী মরিয়ম বেগম। এরপর বিভিন্ন জনের কাছে পরামর্শ নিয়ে প্রশিক্ষণ নেন আধূনিক পোষাক তৈরীর কলা-কৌশলের। হয়ে ওঠেন দক্ষ প্রশিক্ষক। চারদিকে ছড়িয়ে পরে তার নাম। উৎসাহীরা ভিড়তে থাকেন তার কাছে। ফলে ২০০৬ সালে গড়ে তোলেন ‘আস্করনগর বাণিয়াটারী মহিলা উন্নয়ন সমিতি’। পাশে সহায়তার হাত বাড়ায় সরকারি সেবা সংগঠনগুলো। তিনি নাগেশ্বী উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে সমিতি’র রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্ত হন। এরপর উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও উপজেলা সমবায় অফিস থেকে রেজিষ্ট্রেশন পান। এলাকার গরীব ও বিধবা মহিলাদের ডেকে এনে তিনি সেলাই প্রশিক্ষণসহ ১৬ধরণের কুটির শিল্পের প্রশিক্ষণ দেন। এসময় তিনি তিনশো নারীকে সমিতির মাধ্যমে সেলাই প্রশিক্ষণসহ টেইলারিং বøক বাটিক এম্বডারী, কাটচুপি, বাঁশের তৈরী মোড়া, কার্পেট, পুতির বিভিন্ন ধরণের ভ্যানেটি ব্যাগ, পার্সব্যাগ, শোপিচ, বেতের শীতল পাটি, বিভিন্ন ডিজাইনের হাতপাখা, প্যান্ট, শার্ট, বোরকা, লেহেঙ্গা, কামিজ, পায়জামা, সাফারী শার্ট, রাজ কোট, পাঞ্জাবী, ফতুয়া তৈরীতে সহায়তা করার পাশাপাশি কাটিং মাস্টার হিসেবে গোটা জেলায় খ্যাতি ছড়িয়েছেন।
তার এই উদ্বুদ্ধকরণ কর্মকান্ডের ফলে ২০১৪ সালে নাগেশ^রী উপজেলা প্রশাসন থেকে জয়িতা সম্মাননা পান। ২০১৫ সালে ডায়বেটিকসে আক্রান্ত স্বামী মারা যাওয়ার পর নারীদের আর্থিক উন্নয়নে সহযোগিতা করার মানসে ঘরের বাইরে বেরিয়ে পরেন তিনি। এই জয়িতা ও উদ্যোমী নারী মরিয়ম বেগম বর্তমানে লালমনিরহাট, দিনাজপুর, রাজশাহী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং ও লিফলেট প্রচারণার মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে হাজার হাজার তরুনী ও যুবতী মহিলাদের ট্রেইনার হিসেবে সেলাই প্রশিক্ষণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে উদ্যমী মরিয়ম বেগম এই প্রতিবেদককে জানান, আর্থিক অনুদান পেলে তিনি কুড়িগ্রাম জেলায় মিনি গার্মেন্টস দিয়ে এলাকার হতদরিদ্র যুব-যুবতীদের কর্মসংস্থার সুযোগ সৃষ্টি করবেন। এজন্য সরকারের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা চান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *