ফয়সাল শামীম,নিজস্ব প্রতিবেদক
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর ছলিম উদ্দিনের কিশোরী কন্যা ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী সুমাইয়া আখতার স্বপ্নার(১৪) ভারতীয় এক নাগরিকের সাথে বাল্য বিবাহ হয় । ২০১৪ সালে ওই বিয়েয় মত ছিল না স্বপ্নার। তার পরও বাবা মায়ের কথায় ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বামীর সঙ্গে ভারতে চলে যায় । এর পর তার জীবনে নেমে আসে নির্যাতন ও অত্যাচার। গতকাল কথা হয় সুমাইয়ার সাথে তার বাড়িতে । সুমাইয়া জানায়, ২০১৪ সালে তিলাই উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী থাকা অবস্থায় ভারতের দিনহাটা থানার ঝাউকুঠি গ্রামের তার সর্ম্পকীয় দাদা মোগর আলী তাদের বাড়িতে বেড়াতে এসে তাকে দেখে তার গ্রামের (ভারতের) দুর সর্ম্পকীয় এক নাতীর সাথে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। বিয়েতে কোন যৌতুক লাগবেনা আর ছেলের ভালো মন্দের দায়িত্ব মোগর আলী নিজেই নিবেন বলে ওয়াদা দেয়। মোগর আলীর চাপাচাপিতে সুমাইয়ার বাবা- মা সরল বিশ্বাসে বিয়েতে রাজি হন । পরে ভারতের দিনহাটা থানার ঝাউকুঠি গ্রামের মোঃ এমদাদুল হকের পুত্র মাইদুল ইসলাম (২০) এর সাথে তার বিয়ে হয় । সুমাইয়ার বয়স কম হওয়ায় ভুয়া কাবিন নামা তৈরী করে তড়িঘড়ি করে বিয়ে হয় এবং ভারতে চলে যায়। এর পর ভারতে এক মাস স্বামীর বাড়ীতে থাকার সময় তাকে সোনা দিয়ে সাজিয়ে দেয়ার জন্য কারনে অকারনে তার উপর নেমে আসে মানষিক ও শারীরিক নির্যাতন । পরে সুমাইয়ার বাবা দীনমজুর ছলিম উদ্দিন গরু বিক্রি করে সোনার চুরি ,মালা ও কানের দুল বানিয়ে দেয়। এর পর তার স্বামী ও শ্বশুর শ্বাশুরী আবার ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে। বাবা এতো টাকা দিতে পারবে না বলে জানালে নির্যাতন আরো বেড়ে যায়। এভাবে ৬ মাস সংসার করার পর সে নিজ বাড়িতে চলে আসে এবং সব নির্যাতনের কথা বাবা মাকে জানায় । মেয়ের মুখে তার নির্যাতনের কথা শুনে বাবা মা দিশেহারা হয়ে পড়েন। পরে সুমাইয়ার পরিবারের সিন্ধান্ত মোতাবেক সে তার ভারতীয় স্বামীকে তালাক দেয়। পরে সুমাইয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তারই প্রতিবেশি এক ধনাঢ্য ব্যক্তি । তার তিন স্ত্রী এবং ১৩জন সন্তান ও নাতীনাতনী রয়েছে। বাবাকে বাড়ি করে দিবে, একটি ব্যটারী চালিত অটো এবং বিয়ের সব খরচ দিবে বলে প্রলোভন দেখানো হয়। শুধু তাই নয় স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিকে রাজী করে তাদের মাধ্যমে সুমাইয়ার বাবা মাকে চাপ দিতে থাকে। এ অবস্থায় সুমাইয়া একদিন তার পাশের বাড়িতে গিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে। এ সময় রাস্তার পাশ দিয়ে স্থানীয় দু‘জন শিক্ষক মোঃ আলতাফ হোসেন ও মোঃ আনিসুর রহমান যাওয়ার পথে সুমাইয়ার কান্না শুনতে পেয়ে ও বাড়ির ভিতর গিয়ে কান্নার কারন জানতে চায়। পরে সুমাইয়া তার জীবনে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা বিস্তারিত ভাবে জানায়। সুমাইয়ার জীবনের মর্মান্তিক ঘটনা শুনে ওই শিক্ষক দু‘জন তার বাবা মার সাথে কথা বলে তাদেক বোঝাতে সক্ষম হন এবং সুমাইয়া ২য় বিয়ে বন্ধ হয়ে যায় । এর পর ২০১৬ সালে সুমাইয়াকে পুনরায় তিলাই উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণীতে ভর্তি করে দেয়া হয়। ২০১৭ সালে সুমাইয়া জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ -৫ পেয়ে পাশ করে। সে এখন ঐ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীতে পড়ছে। সে জানায় লেখা পড়ার ব্যাপারে তার শিক্ষকরা তাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। সুমাইয়া বলেন,‘জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছি। এখন লেখাপড়া করে বিসিএস ক্যাডার হতে চাই’।
সুমাইয়ার মা মর্জিনা বেগম (৪৫) জানান, তখন কিছু বুঝি নাই। ভালো ছেলে মনে করে বিয়েতে রাজি হছিলাম। দীনমজুর ছলিম উদ্দিন বলেন,আমি আমার ভুল বুঝতে পেয়েছি। এখন রক্ত বেচে হলেও মেয়েকে লেখাপড়া করাবো সকলে দোয়া করবেন। তিলাই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন জানান, মেয়েটি লেখাপড়ায় ভালো। তার লেখাপড়া চালিয়ে যাবার ক্ষেত্রে আমরা যতটুকু পাব সহযোগিতা অব্যাহত রাখবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *