এস.এম হোসাইন আছাদ, জামালপুর ॥
জাতীয় পরিচয়পত্র ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪ এর ভোটার তালিকা অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহা আলমের সোমবার পর্যন্ত বয়স ৫৩ বছর ৩ মাস ৫ দিন। বাঙালির স্বাধীনতা জন্য সংগঠিত মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল ৫২ বছর (১৯৭১ সালের মার্চের ২৬ তারিখ অনুযায়ী) ১১ মাস ১৬ দিন। জাতীয় পরিচয় পত্রের বয়স (০৬-১২-১৯৭০) অনুযায়ী ৩ মাস ২০ দিন বয়সেই মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের সাউনিয়া গ্রামের বাসিন্দা আরাফাত হোসেন ওরফে মো. শাহা আলম। সে ওই গ্রামের মৃত নাছির উদ্দিনের ছোট ছেলে। জাতীয় পরিচয়পত্র ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪ এর ভোটার তালিকা অনুযায়ী শাহা আলমের বড়ভাই মো. শরাফত আলীর জন্ম তারিখ: ০১-০১-১৯৬৩ইং। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের স্বার্থে এবং মো. শাহা আলমের পরিচয় সকলের সামনে উন্মোচন করতে এমন তথ্য সম্মিলিত এক অভিযোগ জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং জামালপুরে বিভিন্ন দপ্তরসহ সাংবাদিক সংগঠন বরাবরে অভিযোগ করেছেন শেরপুর সদর উপজেলার চরপক্ষিমারী ইউনিয়নের সাতপাকিয়া গ্রামের মৃত খাজু মাহমুদের পুত্র মো. জহির উদ্দিন। সে সম্পর্কে শাহা আলমের বড় ছেলে মো. শাহাদ হোসেনের প্রাক্তণ শ্বশুড়।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জামালপুর সদর উপজেলার শাহাবাজপুর ইউনিয়নের সাউনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত নাছির উদ্দিনের ছোট ছেলে মো. শাহা আলম। শাহা আলমের এক বড় ভাই ও এক বড় বোন রয়েছে। সে তার মাতা-পিতার ৩য় সন্তান। শাহা আলম বেসাময়িক গেজেট প্রাপ্ত যাহার নং-২৮১৩, মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকায় (সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী) ৭৬৩৮ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তভুক্ত হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা খেতাব প্রাপ্ত। তিনি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কার্যক্রমের ৩য় পর্যায়ে এই খেতাব অর্জন করেন। বর্তমানে মো. শাহা আলম জামালপুর পৌরসভার পূর্ব ফুলবাড়ীয়া গ্রামে তার শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করেন। কিন্তু তার জন্মস্থান সাউনিয়া গ্রামে মানুষের কাছে ও পরিবার পরিজনের কাছে মো. আরাফাত হোসেন নামে পরিচিত। বিবাহের পর শ্বশুর বাড়ির এলাকায় বসবাস করা অবস্থায় সকল কাগজপত্রে মো. আরাফাত হোসেন নাম পরিবর্তন করে মো. শাহা আলম নামে সকল কাগজপত্রে তাহার নাম লিপিবদ্ধ করে মো. শাহা আলম নামে পরিচিতি লাভ করেন। মো. শাহা আলমের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুযায়ী তাহার জন্ম তারিখঃ ৬-১২-১৯৭০ইং। জাতীয় পরিচয় পত্র নং- ৩৭৩৫৩৫৬২৯১। তিনি ৬-১২-১৯৭০ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। ০২ (দুই) ভাই-বোনের ছোট ভাই হওয়ার পরও মোঃ শাহা আলম মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। শাহা আলম ১৯৭০ সালে জন্মগ্রহণ করে কিভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা খেতাব প্রাপ্তহন এ বিষয়ে তার পরিবার পরিজন ও স্থানীয় এলাকার মানুষের মাঝে আলোচনা-সমালোচনা দেখা দিয়েছে। তার মুক্তিযুদ্ধের অংশগ্রহণের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় এলাকার মানুষ যখন আলোচনা করে এবং শাহা আলমের কাছে জানতে চায় তখন তিনি এলাকার মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়ে তিনি ইতিমধ্যে তার দুই পুত্র সন্তানকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারী চাকুরি পাইয়ে দিয়েছেন। শাহা আলমের বড় ছেলে মো. শাদাত হোসেন স্ত্রী নির্যাতনের দায়ে বর্তমানে চাকরিচ্যুত।

অভিযোগকারী মো. জহির উদ্দিন বলেন, মো. শাহা আলম প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন। তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কি না বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়, জামালপুর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জামালপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সমাজ সেবা কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার ভূমি, জামালপুরের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন বরাবরে মো. শাহা আলমের মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কিত বিভিন্ন কাগজপত্র ও তার পরিবারের কয়েকজনের কাগজপত্র সংযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেছি।

এ প্রসঙ্গে মো. শাহা আলমের সাথে যোগাযোগ করতে তার বর্তমান ঠিকানা জামালপুর পৌর শহরে ফুলবাড়ীয়াতে তার শ্বশুড়বাড়িতে গেলে কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। শাহা আলমের শ্বশুরবাড়ীর লোকজন জানান তিনি বেশ কিছুদিন যাবত বাড়ীতে নেই। শাহা আলমের বিষয়ে তারা কোন কিছু বলতে পারবো না। তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহা আলমের শ্বশুরবাড়ীর লোকজন সাংবাদিকদের সাথে অ-সৌজন্যমূলক আচরণ করে বাড়ী থেকে চলে যেতে বলেন। ফলে শাহা আলমের কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মেহনাজ ফেরদৌস জানান, আমরা মো. শাহা আলমের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্তের জন্য সদর উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ে কাগজপত্র প্রেরণ করেছি। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জামালপুর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার হায়দার আলী জানান, আমরা তার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পত্র পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা সকল মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আলোচনা করবো এবং তার সকল কাগজপত্র দেখে তদন্ত করে যথাযথা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *