লেখক শান্ত পাহান( ঠাকুরগাঁও)

অনেক দিন আগের কথা গ্রামটির নাম ছিলো শিমুলপুর। সেই গ্রামে বাস করতো এক গরিব কাঠুরে নাম ছিলো বাবুল। বাবলু বন- জঙ্গলে কাঠ কেটে সংসার চালাতেন। বাবলুর ছিলো ২ মেয়ে বড় মেয়ের নাম ছিল রুপা আর ছোট মেয়ের নামটি ছিলা ঝুমা। এই দুই বোনের মধ্যে সম্পর্কের ভাব ছিলো গভীর। কাঠুরে বাবলুর পরিবারের ছিলো অভাব অনটন দিন। এই দুর দর্শা মধ্যে একট একটু করে বড় হয়ে গেলো রুপা আর ঝুমা। রুপা বয়স এখন প্রায় ১৮ বছর হয়ে গেছে আর ঝুমার বয়স হয়েছে ১৫ বছর। কিন্তু বাবলু আর তার বউ শেফালি এখন পড়েছে দুশ্চিন্তায়। তারা প্রতিদিন ভাবেন আমরা গরিব মানুষ দিন আনি দিন খাই এইভাবে করে আমরা আমাদের সংসার চালাই। শেফালি একদিন তার স্বামী কে বলল ওগো শুনো, আমাদের রুপা আর ঝুমার তো বয়স কম হলো না এদের তো বিয়ে দেয়া দরকার তাই না বলো। হ্যা তুমি কথাটা মন্দ বলোনি! এদের যে আমি বিয়ে দিবো তাহলে আমি টাকা পাবো কোথায়। আমার গরিব মানুষ দু বেলা ভাত খাবো তার সামর্থ্য নেই আমাদের। একদিন রুপা আর ঝুমা এসে তার বাবা বলল ও বাবা আমরা তোমাকে একটা কথা বলবো। হ্যা মা বলো তোরা আমাকে কি কথা বলতে চাস সেইটা? ওবাবা আমাদের শিমুলপুর গ্রামের সব মেয়েরা স্কুলে যায়। কিন্তু আমাদের দুই বোনকে তুমি আর মা কেন স্কুলে পাঠাও না বলো না আমাকে বাবা! মা রে আমরা গরিব মানুষ কাঠ কেটে আমরা সংসার চালাই এইটা নিয়ে আমরা হিমসিম খাচ্ছি। তাহলে তোরাই বল আমাকে আমি কোথায় পাবো টাকা আর তোদের স্কুলে ভর্তি করবো। আমাগো গরিবদের টাকা নাই রে মা! দুই বোন তো বাবার কথা গুলা শুনে দুই চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছিল। কি আর করার ছিলো তাদের তারা তো গরিব ঘরের মেয়ে ইচ্ছে থাকলে কি হবে তাদের যে উপায় টাকা সেইটা ছিলো না। শিমুলপুর গ্রামে ছিলো রাজামোহনলাল রায় নামে এক জমিদার সেই বাবুলের দুঃখের কথাটা জানতে পারলো এবং চাকদের দিয়ে বাবুলকে ডেকে পাঠালেন। চাকর এসে বাবুলকে বলল হুজুর আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছে ওনার রাজ দরবারে। বাবলু মনে মনে ভাবে কি এমন জরুরি তলব যে আমাকে রাজামশাই ডেকে পাঠিয়েছে কিছু একটা কারণ আছে। তখন বাবলু চাকর সাথে করে রাজার দরবারে হাজির হইলো। বাবলু তখন রাজা একটা কথা বলো হুজুর আমার বেয়াদবি মাপ করবেন। আমি কি আপনাকে একটা কথা বলবো। রাজা তখন বললো হ্যা বাবলু তুমি আমাকে না ভয় করে নির্ভয়ে বলতে পারো কি কথা সেইটা? হুজুর আমার একটা প্রশ্ন ছিলো আমি গরিব কাঠুরে মানুষ আমাকে আপনি কি জন্য ডেকে পাঠিয়েছেন সেইটা যদি একটু বলতেন তাহলে খুব ভালো হতো। রাজা তখন বলে উঠলেন আমি শুনেছি তোমার বাসায় নাকি দুই বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে আছে। বাবুল বললো হ্যা হুজুর আছে তো। কিন্তু কেনো! রাজা বলেন আমি তোমার বড় মেয়ে রুপা কে আমার কাছে রাখতে চাই তোমার কি মতামত বাবুল আমি আর কি বলবো হুজুর এই যে আমার সৌভাগ্য। আমার মেয়ে কে যে আপনি রাখতে চান সেইটা খুব উত্তম। পরের দিন সকালে বাবুল তার মেয়ে রুপাকে নিয়ে এলো রাজার দরবারে। রাজা তখন রুপাকে দেখে বললো আজ থেকে তুই আমার মেয়ে হিসেবে থাকবি আর এখানে। রুপা বললো ঠিক আছে হুজুর

। দেখতে দেখতে প্রায় ২ মাস কাটে গেলো রুপার রাজদরবারে। মনে মনে সেই চিন্তা করে এবং ভাবে তার ছোট বোন ঝুমার কথা ও তার মা বাবার কথা। রুপা বললে আমি তো এখানে বেশ সুখেই আছি। কিন্তু আমার ছোট বোন ঝুমা আর মা বাবা খুব কষ্ট আছে। একদিন রাজা রুপা বললো শুনো রুপা আজকে আমার ভাইয়ের ছেলে শিমুল শহর থেকে আমাদের এইখানে আসতেছে বেড়াতে। দেখো তার যেনো কেনো অযত্ন না হয় ঠিক আছে। রুপা বললো ঠিল হুজুর। পরের দিন বিকেল বেলা শহর থেকে শিমুল নামের ছেলেটা এলো রাজদরবারে। রুপা তখন রান্না ঘরে রান্না করছিলো। এমন সময় হঠাৎ করে শিমুল উচ্চস্বরে বলো উঠলো রান্না ঘরে কে ওইখানে? রুপা তখুনি বলে উঠলো বাবু আমি রুপা। রান্না শেষ করে রুপা যখুনি তার রুমে যাবে তখুনি শিমুল এসে রুপার হাতটা ধরে ফেলো। আর বললো রুপা আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই। দেখেন বাবু আপনারা ধনী মানুষ। আর আমরা কি না গরিব মানুষ। আমাদের সাথে আপনাদের আবার কি কথা থাকতে পারে বলুন আমাকে। শিমুল তখন বললো আমি তোমাকে প্রথম দেখাতে ভালোবেসে ফেলেছি। রুপা বললো আমরা গরিব মানুষ আমাদের মিথ্যা স্বপ্ন দেখাবেন না। আমি যেইভাবে আছি সেইভাবে থাকতে দেন আমাকে আপনি বাবু। শিমুল তখন বললো আমাকে না ভালোবেসে তুমি যাবে কোথায় একদিন না একদিন আমাকে তোমাকে ভালোবাসতেই হবে। এই কথা বলে শিমুল তার রুমে চলে গেলো। রুপা রাতে মনে মনে ভাবে শিমুল কি আমাকে সত্যি ভালোবাসে নাকি আমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করে আমার জীবনটা নষ্ট করতে চাই সেইটা। পরের দিন রাজা তার চাকরকে বললো শুনো রামু এই যে ঘরটা দেখতেছো ভুল করে কখনো এই ঘরে আমাকে না বলে প্রবেশ করবা না তুমি ঠিক আছে। চাকর রামু বললো আচ্ছা হুজুর। শিমুল তো রুপার জন্য পাগল হয়ে গেছে। শিমুল রুপা কে বললো আমাকে কি তুমি বিয়ে করবা। রুপা বললো আমি ভেবে দেখি আগে আমি তারপরে আপনাকে জানাবো আমি বাবু। এইদিকে তো শিমুল রুপার মনের কথাটা শুনার জন্য বেকুল হয়ে উঠে পড়েছে। অবশেষ রুপা তার মনের কথাটা শিমুলকে বলে দিলো। এরপরে শিমুল আর রুপার মধ্যে হয়ে উঠলো সম্পর্ক। তারা দুজন দুজনাকে ভালোবেসে মা বাবার সম্মতিতে বিয়ে করলেন। একদিন রুপা তার স্বামী শিমুলকে বললো আচ্ছা দাদু যে আমাদের ওই ঘরে ঢুকতে দেয় না কেনো আমার তো মনে হচ্ছে ওই অন্ধকার ঘরে কিছু তো একটা রহস্য আছে। পরের দিন সকালে শিমুল আর রুপা দাদুর ওই অন্ধকার ঘরের তালাটা ভেঙ্গে ওই ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলো। কিন্তু অন্ধকার খুটখট ঘরের মধ্যে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলো না। যখন তারা দুজনে লাইট জ্বালিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায় তখন তাদের চোখ কপালে উঠে যায়। তারা দুজন আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দেখতে পাই। ঘরের ভিতরে একটা সিড়ি তারা তখন সিঁড়িটা অনুসরণ করে চলতে এরপরে তারা দেখতে পাই মাটির নিচে টাকা আর সোনা এইগুলো দেখে শিমুল আর রুপা বুঝতে পারলো এইটাই ছিলো দাদুর রহস্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *