নজরুল ইসলাম তোফা::
কলকাতা যাওয়ার ইচ্ছে ছিল পাসপোর্ট ও ভিসা সহ প্রযোজনীয় যা কিছু অর্থ দরকার তা হাতে চলে এসে ছিল। কিন্তু হঠাৎ করোনা ভাইরাসের আক্রমণে সবকিছুর চিন্তা চেতনা থেকে এখন বহু দুরে। ভ্রমণ সাথী হিসেবে যাদের সাথে কথা হয়ে ছিল- তারাও হতাশ। আর কখনো যাওয়া হবে কি না, জানি না। তবুও আশা নিয়েই লকডাউনের সময় গুলো গৃহবন্দি অবস্থায় পার করছি।বাংলাদেশের বহুজঙ্গলে ঘুরেছি এককালে, যখন রাজশাহী চারুকলা বিভাগ এর ছাত্র ছিলাম। ছবি আঁকার উদ্দেশ্যে বন জঙ্গল সহ বিভিন্ন ধরনের মনোরম পরিবেশ ও স্হান দেখার ইচ্ছাআকাঙ্ক্ষা জীবনের সঙ্গে আজও রয়েছে। বেশ কিছু নাটকের শুটিংয়েই যখন বন জঙ্গলে যাওয়া হতো তখন কিযে ভালো লাগতো ভাষায় প্রকাশ করাটা খুব দূরহ ব্যপার। সেই ছবি আঁকা- আঁকি থেকে শুরু করেই নাটক এর অভিনয় করা পর্যন্ত অর্থাৎ তারুণ্যতার সেই স্মৃতিকথার দিনগুলো কখনো ভুল বার নয়। আরো কতো স্মৃতি কথা মনে জমা রয়েছে তাকি এ জীবদ্দশায় পুরন হবে, আজ সত্যি খুব ভাবনায় ফেলে। বলতেই চাই,- বাংলাদেশের ‘সুন্দরবন’ কখনও দেখা হয় নি। খুবই ইচ্ছা জাগে তিরিশটি বছর ধরেই যাবো- যাবো করে যাওয়া হলো না ‘সুন্দরবন’। আবার কলকাতায় দুই বার প্রস্তুতি নিয়েও যাওয়া হলো না। মনোবাঞ্ছা পূর্ণ কি- কখনো হবে?
বেশ ক’দিন ধরেই এমন মন কেমন যেন ছটফট করছে। প্যাকেজ টুর মারফত পর্যটকদের নানান জায়গায় নিয়ে যায়, রাজশাহী থেকে সুন্দরবন যাওয়া কিংবা কলকাতা যাওয়ার জন্য চমৎকার ব্যবস্থা আছে, তাও ১ ডেড় মাস আগে জেনে নিয়েছিলাম। আমার খুবই কাছে নয়ন ভাই ও ডেলটা ভাইসহ আরো বেশ কিছু বন্ধুরা মিলেই আগে কলকাতা এবং তারপরে সুন্দরবনে যাবো। আর এখানে বলে রাখি নাট্যকার ও পরিচালক শিমুল সরকার একটি ধারাবাহিক নাটক “সুন্দরবন এডভেঞ্চার” নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। যদিও তিনি সেই নাটকের প্রাথমিক নামটি দিয়েছিলেন। আমি হয়তো যে কোনো এক চরিত্রাভিনয় করবার সুযোগ হাতের নাগালে পেয়ে করোনাতে করাটা হলো না। বর্তমানের একরোনা ভাইরাসের কারণেই সেই সুন্দরবন সহ কলকাতায় যাওয়া হলোনা। মানুষ এখনও যেভাবে গৃহ বন্দি নাটকের কথা তো ভাবাই যায় না। গত দু’বছর ধরে কলকাতা আর সুন্দরবন নিয়ে খুব ভেবেছি কাদের কাদের সাথেই এমন দুজায়গায় যাব। কিন্তু, হয়ে ওঠেনি এমন মর্মান্তিক করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সহ নানা কারণে।এইতো দু’মাস আগে রাজশাহী সদরের জনপ্রিয় বিখ্যাত স্হান বর্নালীর মোড়। সেখানে- ”চা” এর জন্যেই বিখ্যাত বলা যেতে পাবে। নয়ন ভাইয়ের ‘চা স্টলে’ নয়ন ভাই সহ বন্ধুদের একটা মিট ছিল সবাই মিলে কলকাতার যাবো। সেখানে এখন আর মানুষ দাঁড়িয়ে থাকতেই পারেনা এই মরনঘাতি করোনা ভাইরাস এর কারণে। কখনো সখনো সে জায়গায় যাওয়া পড়ে তো দেখা পড়ে মুক্তাভাই একা দাঁড়িয়ে থাকে, কিন্তু সেই বর্নালীর মোড়ে মুক্তা ভাইয়ের একটি কনফেকশনারির দোকান আছে। সুয়োগ পেলেই দোকানের ঝাপ উঠিয়েই খরিদ্দারদের জিনিসপত্র দিয়ে থাকেন। জিজ্ঞেস করলাম, আপনার “ছোট্ট দোকান” তা খোলা রাখলেই পারেন? উনি বললেন “হ্যাঁরে ভাই”, – কি যে করি! মোড়ে উপর এ দোকান, খোলা রাখলেই যতো ঝামেলা। তাই দাঁড়িয়ে থাকি, খরিদ্দার পেলেই তড়িঘড়ি করে জিনিস পত্র, মোবাইল ফ্ল্যাস্কি বা ইন্টারনেট এম বি দিয়েই দোকান বন্ধ করি। আরো জিজ্ঞেস করলাম নয়ন ভাইকে অনেক দিন ধরেই দেখা হয় না। ডেলটা ভাইয়ের চমৎকার গল্প না শুনলে ভালোই লাগে না। প্রতিদিন ২টি ছেলে পেয়াল ও আলিফ “স্যার” সম্বোধন করে ডাকতো, সেই চমৎকার ধ্বনি আর কানে বাজে না। মুক্তা ভাইয়ের কষ্টজড়িত কন্ঠে দীর্ঘনিঃশ্বাস বাহির হওয়া ছাড়া কোনো শব্দ বাহির হচ্ছিল না।
যাই হোক, ভ্রমণ কাহিনীর কথাগুলো বাদ থাকুক এবার আসি মুক্তাভাই কেমন ধরনের মানুষ সেই আলোচনায়। এ জীবনে চলার পথে বহু রকম মানুষের সাথে মানুষকে মিশতে হয় ও চলতে হয়। কিন্তু মুক্তা ভাই একটু আলাদা প্রকৃতির মানুষ। প্রতিটি মানুষই তার স্বভাব বা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে সম্পূর্ণ আলাদা কিংবা স্বকীয় থাকার চেষ্টা করেও তা পাবেনা। সামাজিক হয়ে উঠে, কিন্তু মুক্তাভাই সামাজিক মানুষ নয় তা বলছি না। সবার মতোই তিনিও সামাজিক। আমরা জানি যে সকলের নিজস্ব চিন্তাধারা, বিশ্বাস, মতামতও বিভিন্ন রকম হয়। আবার, এমন কিছু বিশেষ স্বভাবের এক একটি মানুষকেই লক্ষ্য করা যায়- সবার মাঝেই তাদের মূল লক্ষ্য বা কাজ হলো সবসময়ে অন্যকে খুশি কিংবা অন্যের মতামত ও চিন্তাকে প্রাধান্য দেওয়া।
সুতরাং অন্যদের খুশি করানো ও অন্যের মতামতটাকেই প্রাধান্য দেওয়া হলো খুবই ভালো একটি চারিত্রিক গুণ। সকল মানুষই সুখ এবং আনন্দ কামনা করে সবসময়ে। আর আনন্দ কিংবা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিধানের জন্য তারাই সর্বদা সচেষ্ট থাকে। ব্যক্তিগত সুখ লিপ্সা ও আনন্দ পূর্ণ করার জন্যে যেখানে সেখানেই খোঁজে বেড়ায়। সুতরাং, যেমনি একজন ভালো ব্যক্তির দেখাও মিলেছে অন্যকে সামান্য হলেও আনন্দ দান করান। তবে তাঁর সে আনন্দ প্রদানের যে মাধ্যমটি সরাসরি উপভোগ না করলে যেন একটু অবিশ্বাস হতে পারে। যাক- আসল কথাতে আসি, তিনি মাছ, মাংস, লতাপাতা খেতে পারেন। তবে তা তো সকলেই খেতে পারেন এমন কথাই বলবেন। কিন্তু তিনি একেবারে সদ্য কাঁচা কাঁচা সব মাছ, মাংস ও লতাপাতা এবং মাটি বালিসহ আরো বেশকিছু অস্বাভাবিক বস্তকে খেতে পারেন।
তিনি হলেন, রাজশাহী সদরের সবার সু-পরিচিত ব্যক্তি মুক্তা ভাই। আবারও বলি তাঁর একটি দোকানও রয়েছে বর্ণালী মোড়ে। এই ধরণের মানুষগুলো সবসময় চান বা চেষ্টা করেন যেন তার আশে পাশের সবাই যেন সবসময় খুশি থাকে। তিনি বলেন, বিস্ময়বোধ বা কৌতূহলবিহীন মন যেন মানুষের নির্জীব মন এবং আসাঢ়-মৃতের মতো নিস্পৃহ বা নিস্পন্দ। মনের সজীবতা ছাড়া কোনো কিছু করাটাও যেন সম্ভব নয়। আর মনকে সজীব বা সতেজ রাখতে হলে বিস্ময়বোধ বা কৌতূহলী আচরণের মানুষ হয়ে থাকতে হবে।
এসমাজে প্রায় সকল মানুষই প্রশংসা শুনতে ভালবাসে, সে ক্ষেত্রে তিনিও তার ব্যতিক্রম নন। তিনি- তার কর্মের পাশা পাশি সব সময়েই যেন অন্যকে খুশি রাখার চেষ্টায় মগ্ন থাকেন। তাঁর ব্যতিক্রমী চিন্তা চেতনার এই সৃষ্টিশীল কর্ম কান্ড সত্যিই অবাক করার মতো। আসলে কি করে মানুষ এমন কাঁচা মাছ মাংস, লতা পাতা, কাদা, মাটি ও বালি খেতে পাবে। এক্ষেত্রে এই ব্যপার একে বারেই যেন ভিন্ন বলেই মনে করি। শুধু প্রশংসা শুনেই তিনি তুষ্ট হন, সবসময়ে সকলের নিকট থেকেই প্রশংসা খুঁজে বেড়ান এবং এর স্থায়িত্বটাও চান। নিজের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা এতোই বেশি যে, তিনি একদিন না একদিন হোক- সমগ্র বাংলাদেশের মানুষদেরকে তাঁর এই আনন্দটাকেই তুলে ধরতে পারবেন। তিনি আশা পোষণ করেনও বাংলাদেশ টেলিভিশনের পাশাপাশি যে সব বেসরকারি টেলিভিশন কতৃপক্ষ আছে তারাও একদিন এগিয় আসবে।
সর্বশেষে তিনি বলেন, এই কাঁচা মাছ, মাংস, লতা পাতা, কাদা, মাটি ও বালি খেয়ে কখনো কোনো সমস্যা হয়নি।বরং শরীরটা নাকি মজবুত হয়। আর এমন উদ্ভট কর্মে মানুষের সাথে সম্পর্কটা গভীর হয়। তিনি আরো বলেন, অন্যের খুশি ও অখুশির ব্যাপারগুলি বুঝেই যদি তাদের মনের মধ্যে খুব বেশী পরিমাণ আনন্দ দেওয়ার উদ্দেশ্য থাকে তাহলে এ কাজটি করতে ইচ্ছে জাগ্রত হবে। রাগ, জেদ, মনঃকষ্ট বা হতাশা তাঁর নেই। সারাজীবনের এমন আনন্দ প্রিয় মানুষটি মাঝা মাঝি বয়সে এসেও সবাইকে আপন মনে করেই সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকেন।
লেখকঃ টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক।