নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
রাজশাহী মহানগরীতে কোনভাবেই থামছে না কিশোর গ্যাং এর দৌরাত্ম্য। প্রতিনিয়তই কিশোর গ্যাং দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে বড় বড় অপরাধ। বখে যাওয়া উঠতি বয়সের কিশোর দিয়ে গঠিত এই গ্যাং চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার, ইভটিজিং, চুরি, ছিনতাইসহ মাদক সেবন ও মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন নামে সুসংগঠিতভাবে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। মাথাচাড়া দেওয়া নগরীর কিছু কিশোর গ্যাং এর নাম হলো- ডি-হট বয়েজ, হট বয়েজ কিশোর গ্যাং, সিএনবি বয়েজ, হিটার বয়েজ, রাজশাহী ডেন্জার বয়েস (আরডিবি), খুলিপরা গ্যাং, বিটক্যাল গ্রুপ, বুলেট গ্যাং, গুড়িপাড়া কিংস। এছাড়াও বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে সংঘবদ্ধ দলভেদে বিভিন্ন নামে চলছে এসব কিশোর গ্যাংয়ের কার্যকলাপ। রাজশাহীতে দিনে দিনে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে এসব কিশোর গ্যাং। চলতি বছরে নগরীর কয়েকটি হত্যাকাণ্ড পর্যালোচনা করে এ সকল তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

কিশোর গ্যাং গুলো পরিচালিত হচ্ছে, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়। এছাড়াও এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখতে এক শ্রেণির বড় ভাই খাত প্রভাবশালী মহল তাদের ইন্দন দিয়ে যাচ্ছেন। এদের ব্যবহার করা হচ্ছে মাদক ব্যবসাসহ দখলবাজিতে।

প্রশাসন বলছে, ডাটাবেজ তৈরি করে কিশোর গ্যাং রোধে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷ এসব সংগঠনের পেছনে কারা ইন্ধন যোগাচ্ছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে কিশোরদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও একাধিকবার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
‘হিরোইজম’ প্রকাশ করতেও পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং গড়ে উঠছে। আধিপত্য বিস্তার, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, প্রেমে বিরোধ, মাদকসহ নানা অপরাধে কিশোররা খুনাখুনিতেও জড়িয়ে পড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় নগরী নিউমার্কেট রিয়াজ হত্যা ও সানি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এখনো মাথাচাড়া দিয়ে নিউমার্কেট ও গোরহাঙ্গা রেলগেট সুলতানাবাদ এলাকায় হটবয়েজ কিশোর গ্যাং দল তৈরি হয়েছে। এরা ইতোমধ্যে নানা উন্নয়ন মূলক কর্মকাণ্ডের বাধা প্রদানসহ ছোট ছোট বিষয়ে দেশীও অস্ত্রের মহড়া দেখাতে শুরু করেছে। এই দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছে বিশাল, সজিব, হৃদয়, রানা, শাওন।

রাজশাহীতে কিশোর গ্যাংয়ের মাধ্যমে সংঘঠিত একাধিক ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় ‘বড় ভাই’রা। এলাকার পরিত্যাক্ত ভবন অথবা যে কোনো জায়গায় তাদের রয়েছে নিজস্ব চেম্বার, কোন কোনো সূত্র বলছে এসকল চেম্বারে রয়েছে একাধিক টর্চার সেল।
রাজশাহী নগরীর মেহেরচন্ডী, ছোটবড়গ্রাম, চন্ডীপুর, হেতেমখা, সাহজিপাড়া, টিকাপাড়া (খুলিপাড়া) সহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় অর্ধশত কিশোর গ্যাং সক্রিয়। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা খুনাখুনি, মাদক, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের সাথেও জড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে সিএনবি এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় ভয়ঙ্কর সব অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল, আধিপত্য বিস্তারে ক্ষমতার প্রদর্শন দেখাতে কিশোরদের ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রভাব বিস্তারে কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সম্প্রতি রাজশাহী নগরীতে দুইটি হত্যাকান্ড, সানি ও রিয়াজ হত্যার সঙ্গে কিশোর গ্যাংয়ের সক্রিয় সদস্যদের জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর প্রকাশ্যে আসে। এখনোই এদের রোধ না করা গেলে অপরাধ প্রকট আকারে বৃদ্ধি পাবে।

নগরীর কয়েকটি এলাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বললে জানা যায়, সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে টিকাপাড়া গোরস্থানের ভিতরে একদল কিশোর মাদক সেবন করে। সারাদিন তারা এলাকাটিকে বিভিন্ন অযুহাতে অস্থিতিশীল করে রাখে। স্থানীয়রা এইসকল কিশোর গ্যাংয়ের কার্যকলাপে অতিষ্ট হলেও অদৃশ্য দাপটের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না। নিউ মার্কেট এলাকায় হটবয়েজ কিশোর গ্যাং নামের একটি চক্র মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এর আগের কিশোর গ্যাং রিয়াজ ও সানি হত্যাকাণ্ডে কোনঠাসা হলেও বর্তমানে সক্রিয় ভুমিকায় হট বয়েজ কিশোর গ্যাং। ঐ এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, তারা শুনেছে এই গ্যাংয়ের সাথে জড়িত সদস্যরা মাদক সেবন ও টিকটক ভিডিও করার জন্য টাকা আয় করতো চোরাই মোবাইল কেনাবেচার মাধ্যমে। প্রতিটি এলাকায় এরকম কিশোর গ্যাং সক্রিয়।

জানতে চাইলে আরএমপি পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন- আমরা কিশোর গ্যাং এর বিষয়ে তৎপর। ডাটাবেজ তৈরি করে, গার্ডিয়ানদের মর্ডিভেটেড করা হচ্ছে। কিশোর গ্যাং নির্মূলে আরএমপি পুলিশের ভুমিকা প্রসংশিত। এ বিষয়ে সামাজিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *