মোঃ রেজাউল করিম, রাজশাহীঃ
রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেন’র বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা এবং শিক্ষা বোর্ডে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সাথে অশোভন আচরণের অভিযোগ উঠেছে।
বিভিন্ন সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িত থাকায় একবার তাকে শোকজও করা হয়েছিলো। বোর্ডের বিভিন্ন জনের সাথে তিনি দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লেও অজ্ঞান কারণে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি কতৃপক্ষ। উল্লেখ্য যে এর আগেও সচিবকে গত ১৬-৯-২০১৯ সালে একবার শোকজও হয়েছেন।

সম্প্রতি (১২ সেপ্টেম্বর) তাঁর অফিস কক্ষে শিক্ষা বোর্ডের উপ-সচিব (প্রশাসন) ওয়ালিদ হোসেন ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মানিকচন্দ্র সেন’কে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করায় নড়েচড়ে বসেন শিক্ষা বোর্ডের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। এনিয়ে তারা চরম উদ্বিগ্ন ও শঙ্কার সাথে দিন কাটাচ্ছেন এবং নিন্দা জানিয়েছেন জানিয়ে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে বিচারেরও দাবি করেছেন তারা।
ভুক্তভোগী দুই কর্মকর্তা জানান, সচিবের নির্দেশে বোর্ডের উপ-পরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা) বাদশা হোসেন বেশ কিছু কর্মকর্তার বেতন সমন্বয় সংক্রান্ত নথি ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি অফিসের বাইরে প্রেরণের উদ্দেশ্যে ফটোকপি করেন। ইতিপূর্বেও ঐ দপ্তর থেকে বিভিন্ন বেতন শিট বিকৃত করে এবং নোট শিটের কপি বাইরে সরবরাহ করার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে।

বিষয়টি জানতে গত ১২ সেপ্টেম্বর বিকেলে বোর্ডের সচিবের কক্ষে যান উপ-সচিব (প্রশাসন) ওয়ালিদ হোসেন ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মানিকচন্দ্র সেন। দুজনে মিলে সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেনের কক্ষে গেলে সেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি করেন সচিব। এসময় উপ-সচিব (প্রশাসন) ওয়ালিদ হোসেন জানতে চান, সংস্থাপন শাখায় রক্ষিত গোপনীয় কাগজপত্র ফটোকপি করার বিষয়ে চেয়ারম্যান স্যারকে জানানো হয়েছে কিনা কিংবা তাঁর অনুমতি নেয়া হয়েছে কিনা। এতে সচিব ও ডিডি ক্ষিপ্ত হয়ে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন ওয়ালিদের সাথে। এক পর্যায়ে উপ-সচিব (প্রশাসন) ওয়ালিদ হোসেন ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মানিকচন্দ্র সেনকে তার রুমে প্রায় একঘন্টা আটকে রাখেন এবং সচিব নিজেসহ দায়িত্বরত আনসারকে ডেকে ওয়ালিদ হোসেনকে শারীরিক ভাবে হেনস্থা করেন।

ভুক্তভোগী উপ-সচিব (প্রশাসন) ওয়ালিদ হোসেনসহ ভিডিও ফুটেজের বরাদ দিয়ে সেখানে কর্মকর্তারা আরো বলেন, তিঁনি ঐ সময় আনসারের সহোযোগিতায় দুজন কর্মকর্তাকে নিজের রুমে জোড়পূর্বক আটকে রেখে নিজের মোবাইল থেকে অপরপ্রান্তের কাউকে বলছেন ‘বাহিনী পাঠাও, আবার কখনো বা ফোন করে বলছেন থানার ওসিকে পাঠাও’। তবে, অবরুদ্ধের পয়তাল্লিশ মিনিট অতিবাহিত হয়ে যাবার পরে বহিরাগত একাধিক ব্যক্তি সচিবের রুমে প্রবেশ করে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ আছে।

তারা আরো জানান, কখনো সচিব বলছেন, তোমরা আমাকে মেরে ফেলতে এসেছো ! কখনো বা বলেছেন, তোমরা আমাকে তুলে নিতে এসেছো। আমি পুলিশ ডেকে তোমাদেরকে ধরিয়ে দেবো। লাঞ্চিত হওয়া কর্মকর্তারা একাধিকবার সচিব সাহেবকে বলেছেন, চলেন চেয়ারম্যান স্যারের কাছে চলেন। কিন্তু সচিব চেয়ারম্যানের নিকট না গিয়ে নানাভাবে হয়রানি করেন।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান বিভাগীয়ভাবে হিসাব ও নিরীক্ষা শাখার ডিডি বাদশা হোসেন, উপ-সচিব (প্রশাসন) ওয়ালিদ হোসেন ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মানিকচন্দ্র সেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছেন।

এ নিয়ে পরদিন অর্থাৎ ১৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষাবোর্ডের কর্মচারী ইউনিয়ন বিশেষ সভায় বলেন- অফিসের গোপন কাগজপত্র অসৎ উদ্দেশ্যে ফটোকপি করা, চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া অফিস অভ্যন্তরে পুলিশ ডাকা, সচিব কর্তৃক উপ-সচিব (প্রশাসন) ওয়ালিদ হোসেন ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মানিকচন্দ্র সেনকে আনসার সদস্য দ্বারা লাঞ্ছিত করার দায়ে সচিব ড. মো মোয়াজ্জেম হোসেন ও উপপরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা) বাদশা হোসেন’র ব্যাপারে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জোর দাবি জানান।
এ বিষয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোকবুল হোসেন বলেন, বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে দুজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।

সরাসরি সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেন এর সাথে সাক্ষাৎকালে তিনি এ বিষয়ে বলেন, আমার উপর আনিত অভিযোগ সত্য নয়। তারা আমাকেই শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। বরং তারাই বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি সাথে জড়িত বলেই আমাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। আমি তাদের অনিয়ম দুর্নীতির বিল পাশ করি না বলেই এই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *