শফিউল অঅলম শফি,,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ঃ
কুড়িগ্রামে খাদ্যবান্ধব কর্মসুচীর আওতায় রৌমারীতে ১০ টাকা মুল্যের চাল বিক্রির ডিলারশীপ নিয়োগে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে কোন নীতিমালা অনুসরন করা হয়নি। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যাচাই বাচাই করার বিধান থাকলেও এক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। নীতিমালা অনুযায়ী নিযুক্ত ডিলারের অধিকাংশই খাদ্যসংরক্ষনের উপযোগী দোকান বা গুদাম ঘর নেই। ৫০০জন কার্ডধারী বিপরীতে ১জন ডিলার নিয়োগ দেয়ার বিধান থাকলেও রৌমারীতে ২৭জনের স্থলে নিয়োগ দিয়েছে ১২জনকে। অপরদিকে হতদরিদ্রের নামে ১০ টাকা মুল্যের কার্ড প্রনয়ণে স্বজনপ্রীতি ও দেরীতে বিতরন, কার্ডধারীকে চাল না দেয়া, ওজনে কম, সচ্ছলদের নামে কার্ড বরাদ্ধ দেয়াসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। এনিয়ে একাধিক অভিযোগ করলেও কোন লাভ হয়নি বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
খাদ্য অফিস সুত্রে জানা যায়, ৭ সেপ্টে¤Ÿর কুড়িগ্রামের চিলমারীতে এ কর্মসুচীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । রৌমারীতে ৬টি ইউনিয়নে ১৪ হাজার ৫ শত ৯৪ জন হতদরিদ্রেরদের নামে ১০ টাকা মুল্যের চাল বিক্রির সিন্ধান্ত নেয়। সেপ্টম্বর-থেকে নভেম্বর এবং আগামী বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসে উপজেলার ৪৩৭.৮২মেট্রিকটন চাউল বিক্রি করা হবে। একজন কার্ডধারী মাসে ৩০ কেজি চাল কিনতে পারবেন। বিধি অনুসারে সাপ্তাহে তিনদিন শুক্র শনি ও মঙ্গলবার ইউনিয়নের নির্বাচিত ডিলারের কাছ থেকে এই চাল সংগ্রহ করা যাবে। ডিলার কর্র্তৃক চাল বিতরনের সময় উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক মনোনীত ট্যাগ অফিসার উপস্তিত থাকবেন।
খাদ্রবান্ধব কর্মসুচীর শুরুতে রৌমারী, শৌলমারী, দাঁতভাঙ্গা, বন্দবেড়, যাদুরচর ও চরশৌলমারী ইউনিয়নের বিভিন্ন ডিলারের গুদামে সরজমিনে চাল নিতে আসা লোকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে কর্মসুচীর বিভিন্ন অনিয়ম, দুনীতি ও স্বজনপ্রীতির কথা।
রৌমারী ইউনিয়নে দেখাগেছে তালিকায় প্রবাসীকার্ডধারী মাহুজল(২৫৪৪০), মাহুবর(২৯৪৮), রফিকুর(২৯৭৫), হারুন(২৮৩১) নাম তারিকাভুক্ত রয়েছে।
এছাড়াও একইপরিবারে একাধিককার্ড ও ডাবলকার্ড ্ রয়েছে রৌমারী ইউনিয়নে ১নং ওয়ার্ডে এমন কার্ডধারীরা হলেন, আলী মোহামদ(২২২১), আব্দুস সবুর(২২১৯), জাহিদুল ইসলাম(৩৩০), আনজুমানআরা(৩৩৩), কামাল(৩৩৪) ও কমলা(৩৩৪)।
অপরদিকে -হতদরিদ্রেরদের চাল পাচ্ছে সচ্ছলরা এমন কার্ডধারীরা হলেন, আবুসাইদ(২৫৫৯), বাচ্ছুমিয়া(২৭১৭), মুন্টুমিয়া ও খলিলুুর রহমান। এছাড়াও চায়না(২৪৮৫), কাইয়ুম(৩৩৫), ডাবল নামও বাদ পড়েনি তালিকা থেকে। ্সরকার দলের নেতাকর্মীরা তালিকায় রয়েছে। সর্বপরি ৭,৮,৯নং, ওয়াড শাহিদা খাতুন নামে একজন মহিলা সদস্য নিজেই নামে বেনামে ৭জনের তালিকা দিয়েছে। চাল নিতে না আসার কারনে রৌমারী ইউনিয়নে ২১৫টি কার্ডের চাল ফেরত দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
যাদুরচর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায, ডিলার একটি দোকানের মধ্যে কিছু চালের বস্তা নিয়ে দুই ব্যক্তি বসে রয়েছে। অপর এক ব্যক্তি বালতি দিয়ে চাল মেপে দিচেছ। বালতি দিয়ে চাল মাপছেন কেন? জানতে চাইলে তিনি জানান, বালতি মাপা আছে কোন সমস্যা নেই।
বন্দবের ইউনিয়নের ডিলার আব্দুল আলিম ও শৌলমারী ইউনিয়নের ডিলার জাবেদ আলীর কাছে গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি টিনের ঘরে বসে চাল বিতরন করছেন তারা। ভাল চালের সঙ্গে নিন্মমানের চাল মিশিয়ে সুবিধাভোগীদের দিচ্ছেন। এছাড়া প্রত্যেকটি ইউনিয়নে চাল বিক্রি করছে কার্ডধারীরা।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে উপজেলায় গত ৯ অক্টোবর রৌমারী খাদ্যবান্ধব কর্মসুচীর বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা বিষয়ে মতবিনিময় সভায় রৌমারী উপজেলা যুব লীগৈর সভাপতি হারুন-অর- রশিদ জানান, হতদরিদ্রদের বাদ দিয়ে ধনী, প্রভাবশালী, ও প্রবাসী ব্যক্তিদের নাম অর্ন্তভুক্ত করে চাল দেয়া হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধা কোমান্ডার আবদুল কাদের জানান, তালিকায় শতকরা ৮০ ভাগ ধনী ব্যক্তির নাম অর্ন্তভুক্ত রয়েছে এবং চেয়ারম্যানদের পছন্দের নামও বাদ পড়েনি।
রৌমারী উপজেলা আ’লীগ সাধারন সম্পাদক রেজাউর ইসলাম মিনু বলেন, তালিকা দফায় দফায় পরিবর্তন করেছে চেয়ারম্যানরা। সরকারের ভাবমুর্তিক্ষুন্ন করে যারা এসব অনিয়ম, দুনীতি ও স্বজনপ্রীতি করবে তাদেরকে ছাড় দেয়া হবেনা।
সাবেক এমপি ও উপজেলা আ’লীগ সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, চাল নিয়ে চালবাজি চলবেনা। এসব তালিকা পরিবর্তনসহ নতুনভাবে ডিলার নিয়োগের দাবী করেন তিনি।
এব্যাপারে স্থানীয় এমপি রুহুল আমিন বলেন, এসব অনিয়ম দুনীর্তি তদন্তটিম গঠনপুর্বক যাচাই বাছাই করা হবে। প্রয়োজনে এসব তালিকা পরির্বতনসহ নতুনভাবে ডিলার নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফিরোজ আহম্মদ মোস্তফা বলেন, তালিকায় কোন ধনী ব্যক্তির নাম দেয়ার নিয়ম নেই। কোন ধনী ব্যক্তির নাম পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যে তালিকা সংশোধন ও নতুনভাবে ১৫জন ডিলারসহ নতুন ১৯০৯ কার্ড বরাদ্ধ করার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া চাল নিতে না আসার কারনে ২১৫টি কার্ডের চাল ফেরত দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এব্যাপারে রৌমারী উপজেলা নিবার্হী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এবিষয়ে আমি একাধিক মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ সত্য হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। চেযারম্যানদের নিকট ইতিমধ্যে তালিকা সংশোধন ও নতুনভাবে কার্ড বরাদ্ধ নিদের্শনা দেয়া হয়েছে।

এদিকে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ‘খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি’ ১০ টাকার চালের তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম, সজনপ্রিতি, কার্ডের বিনিময় টাকা নেয়াসহ অভিযোগের পাল্লা দিনের পর দিন ভারি হয়েই চলছে। শুরুতেই দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে অসাধু জনপ্রতিনিধি, ডিলারসহ নামধারী দলীয় নেতাকর্মীরা। শুধু তাই নয় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির জন্য প্রণয়ন করা হতদরিদ্রদের তালিকায় নাম উঠেছে প্রভাবশালীদের। ফলে হতদরিদ্রদের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির যেন ভেস্তে যেতে বসেছে। সৃষ্টি হয়েছে হ য ব র ল অবস্থার। নজর নেই কতৃপক্ষের। হতাশ প্রকৃত হতদরিদ্ররাসহ ভুক্তভোগীরা।
চিলমারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে জানা যায় কিছু মহিলা সংরক্ষিত ও ইউপি সদস্য, এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিসহ কিছু নামধারী দলীয় নেতাকর্মীরা ১০ টাকার চালের তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম, স্বজনপ্রিতি, টাকা বিনিময় কার্ড বিক্রিসহ এলাকার প্রভাবশালীদের নাম উঠায় বাদ পড়েছে এলাকার হতদরিদ্ররা। ফলে উক্ত কর্মসূচির কার্যক্রম মূল উদ্দিশ্য ভেস্তে যেতে বসেছে।
এ ব্যাপারে কথা হয় উপজেলার পাত্রখাতা গ্রামের কানচোন বালার সাথে দুঃখের সাথে তিনি বলেন স্যার গো হামরা গরীব মানুষ হামার কি আর উন্নতি হবে যামার আছে তামরাই পায়। এসময় এলাকার হতদরিদ্র মশিউরের স্ত্রী খাদিজা বলেন, সংরক্ষিত মহিলা আসনের (৭,৮,৯) ওয়ার্ডের সদস্য মোছাঃ জাহানারা ১হাজার টাকা চেয়েছিল রেশন কার্ড (১০টাকা কেজি কার্ড) দিবে জোগার করতে না পাড়ায় ৫শত টাকা লাভের উপর আনি দিছনু কিন্তু মোক কার্ড না দিয়ে কইছে এই টাকায় হয় নাই তোক ২০ কেজি চাউলের নাম দেইম তিন মাস পাবু। পরে এলাকাবাসীর অভিযোগের পেক্ষিতে কার্ডধারী এলাকার প্রভাবশালী মঞ্জু মিয়া বাড়িতে গিয়ে তার সাথে কথা হলে তিনি টিলারসহ মোটামোটি টাকা পয়সা ও জমির মালিক শিকার করে বলেন ৩শত টাকা দিয়ে কার্ড নিয়েছে এবং কার্ডটি অন্য একজনকে দিয়েছে।
শুধু মঞ্জু মিয়া নয় এরকম অনেক প্রভাবশালী, অবসর প্রাপ্ত আর্মি, ব্যবসায়ী, ধনাঢ্য কৃষকের নাম উঠেছে ১০ টাকার চালের তালিকা অর্থাৎ হতদরিদ্রদের তালিকায়।
এলাকার অবসর প্রাপ্ত আর্মি বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ মজিদ বলেন, আমি আর কি বলল বাবা কিছু অসাধু ইউপি সদস্য, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য, নামধারী গন্যমান্য ব্যাক্তিসহ কিছু দলের লোকজন বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ৫শ থেকে ১হাজার করে টাকা নিয়ে কার্ড বিক্রি করায় প্রকৃত হতদরিদ্ররা এই কর্মসূচি থেকে বাদ পড়েছে আর নাম উঠেছে প্রভাবশালীদের।
কিছু অনিয়মের কথা শিকার করে থানাহাট ইউনিয়নের তদারকি কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা বলেন, কিছু প্রভাবশালীদের নাম বা স্বামী স্ত্রীর দুজনার নামও এসছে তবে আমরা চেষ্টা করছি তা ঠিক করার।
চিলমারী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের মধ্যে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির জন্য ৮ হাজার ২১ জনের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। প্রতি কেজি চাল গোডাউন থেকে ৮.৫০ টাকায় ক্রয় করে কার্ডধারীদের মধ্যে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রির জন্য ১৭ জন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তবে বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সঠিক ভাবে তালিকা করা হয়েছে।
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা কিছু অনিয়মের কথা শুনেছি তবে অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
শুধু চিলমারী উপজেলায় নয়, কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট, উলিপুর, ভুরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী ও ফুলবাড়ীসহ বাকী ৭ উপজেলায় একই অবস্থা।
অন্যান্য উপজেলায় ১০ টাকা কেজিতে চাল বিতরন করা হলেও রাজারহাট উপজেলায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফলতির কারনে এখনো চাল বিতরন করা হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুরাতন চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের দেয়া তালিকা বাস্তবায়ন না করতে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা রাজারহাট উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করায় এখনো চাল বিতরন সম্ভব হয়নি। এছাড়া ডিলার নিয়োগে দলীয় লোকজনকে বাদ দেয়ায় দলীয় নের্তাকর্মীরা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মিছিলসহ লাঞ্চিত করার ঘটনা ঘটে। ফলে এখনো চাল বিতরন সম্ভব হয়নি।
এব্যাপারে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, এ বিষয়টি উপজেলা খাদ্যকর্মকর্তা ভালো জানেন। চাউল উত্তলন করা হয়েছে কিন্তু বিতরন করা হয়নি। দ্রুত বিতরন করা হবে।

উল্লেখ্য “শেখ হাসিনার বাংলাদেশ-ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে দুর্ভিক্ষ হবে না, মঙ্গা থাকবে না। দেশের যারা হতদরিদ্র কিনে খাওয়ার সামর্থ নাই তাদেরকে ১০টাকা কেজি দরে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। যে মাসে কাজ থাকে না সেই সব সময়ে বছরে ৫ বার চাল বিতরণ করা হবে এই উপলক্ষে হতদরিদ্র মানুষের কথা ভেবে এবছর ৭সেন্টেম্বর বুধবার কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ‘খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *