রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

এবারের বন্যায় রৌমারীতে দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পোনা মাছ, সবজিসহ নানা আবাদ, ব্রীজ কালভার্ট ও তুরা সড়কের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ১৩৯টি বিদ্যালয় পানিতে ডুবে গিয়েছিল। ৩টি বিদ্যালয় রয়েছে নদী ভাঙনের মুখে। পাশাপাশি কৃষি খাতে সবজি, পাট, বীজতলা, ধানসহ নানা আবাদের ক্ষতি হয়েছে। সাড়ে ৪শ পুকুর ডুবে ভেসে গেছে শত শত মণ পোনা মাছ। এছাড়াও সংস্কারাধীন তুরা সড়কের ৩টি কালভার্টসহ ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের প্রতিটি সড়কেই ভেঙে গেছে। ভেসে গেছে সদরে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা ৩৯টি বাঁশের সাঁকো। এসব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষক ও ভুক্তভোগীদের অনেক বেগ পেতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল বারাকাত মো. খুরশিদ আলম জানান, প্রায় ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে তুরা সড়কের ২টি বক্স কালভার্ট, কার্পেটিং ও ৩টি ব্রীজ নির্মাণ করা হচ্ছে। এবারের বন্যায় সংস্কারাধীন ৩ দশমিক ১’শ মিটার তুরা সড়কের ১ কিলোমিটার এলাকাজুরে সোল্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাকি ২ কিমি সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হয়ে মাটি ধুয়ে গেছে। অনেক স্থানে পাড় ধ্বসে গেছে। ২টি বক্স কালভার্টের এপ্রোস সড়কসহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৩৫ থেকে ৪০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোসলেম উদ্দিন ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম (ভার:) জানান, ২৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৯টি আশ্রয়নকেন্দ্র ও ১০৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে নদী ভাঙনের কবলে। পানি সম্পূর্ণভাবে নেমে গেলে আগামী শনিবার থেকে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হতে পারে।

রৌমারী উপজেলা প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান, বিভিন্ন পয়েন্টে ৬ কিমি কাঁচা সড়ক ও ১ কিমি পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে ৩৯টি বাঁশের সাঁকো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আজিজল হক জানান, ১ হাজার ৫৮ হেক্টোর জমি বিভিন্ন আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবারের বন্যায়। এর মধ্যে পাট ৪০৩, আমন ধান ৩৫, বীজতলা ২১৩, শাক-সবজি ২১১ ও আউশ ৯৬ হেক্টোর। এ ক্ষতির শিকার হয়েছেন ১৭ হাজার ৯’শ কৃষক।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন জানান, ১২৭টি গ্রামের ২৪ হাজার ৯’শ পরিবারের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল বারেক জানান, ২৯ হাজার গরু, ২৪ হাজার ছাগলসহ অনেক গৃহপালিত পাখির ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে এসব গৃহপালিত পশুপাখির রোগবালাই দেখা দেবে। এজন্য আমরা যথেষ্ট প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন তালুকদার জানান, রৌমারী উপজেলার ৬ ইউনিয়নের বানভাসিদের মাঝে ১৮৮টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। আরো ১০০ মে.টন চাল ও নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে। এছাড়াও নদীভাঙ্গা গৃহহীনদের জন্য দুইশ’ বান্ডিল ঢেউটিন ও ৬ লাখ টাকা বরাদ্দও দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. রুহুল আমিন বলেন, সরকারীভাবে ত্রাণ দেয়ার পাশাপাশি আমিও ব্যক্তিগতভাবে ত্রাণ বিতরণ করছি। নয়ারহাট ও অস্টোমিরচর ছাড়া রৌমারী রাজিবপুরের সকল গ্রামে আমি গিয়েছি। বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছি। আগামীতে আরও ১০ হাজার মানুষকে ত্রাণ দেয়ার পরিকল্পণা আমার রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *