(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নহে)
সিরাজী এম আর মোস্তাক, ঢাকাঃ
যারা দেশ ও জাতির মুক্তির জন্য লড়াই করে প্রাণ হারান, তারা শহীদ। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে ৩০ লাখ বীরসেনা প্রাণ বিসর্জন করেছেন এবং লাখ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন। তারা সকলেই অমর শহীদ। স্বাধীনতার স্থপতি বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বন্দীজীবন শেষে দেশে ফিরে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারীর ভাষণে সুস্পষ্টভাবে তাদের সংখ্যা উল্লেখ করেন। ভাষণটির অনলাইন দ্রষ্টব্য- https://www.youtube.com/watch?v=__CHdKMmQfo| শহীদের সংখ্যাটি বঙ্গবন্ধু ভাষণেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি লাখ লাখ শহীদের পক্ষ থেকে ৭ (সাত) জনকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব প্রদান করেন। একইসাথে কোটি কোটি মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে ৬৬৯ জনকে আরো তিন স্তরে (বীর উত্তম, বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক) খেতাব প্রদান করেন। তাঁর দৃষ্টিতে, শহীদের তুলনায় মুক্তিযোদ্ধা সংখ্যা অনেকগুণ বেশি। যারা যুদ্ধ করেন, তাদের সকলেই শহীদ হয়না। যুদ্ধে আহত, নিহত, গাজী, বন্দী, শরণার্থী ও কোনোভাবে সহায়তাকারী সকলেই মুক্তিযোদ্ধা। অর্থাৎ সব শহীদই মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু সব মুক্তিযোদ্ধা শহীদ নয়। সুতরাং বিশেষ সহায়তা বা কোটাসুবিধা শুধুমাত্র শহীদের অসহায় স্বজনদের জন্যই প্রযোজ্য হয়, মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের স্বজনদের জন্য নয়। তবে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সাময়িক সহায়তা দেয়া যায়। বঙ্গবন্ধু তাই করেছিলেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যায় সীমাবদ্ধ করেননি। আবার শহীদেরও তালিকা করেননি। কারো জন্যই ভাতা বা কোটাসুবিধা চালু করেননি। আজ যারা বঙ্গবন্ধুর প্রতি মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের তালিকা, ভাতা বা কোটাসুবিধা প্রদানের অপবাদ দেন, তারা ঐতিহাসিক মিথ্যাচার করেন।
চিরন্তন সত্যের বিপরীতে, বাংলাদেশে লাখো শহীদের পরিবর্তে মাত্র প্রায় ২লাখ মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়েছে। তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা ও ভাতা চালু হয়েছে। তাদের সন্তান-সন্ততির জন্য শতকরা ৩০ভাগ কোটা রয়েছে। এতে দেশে বৈষম্যের অকল্পনীয় ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, শহীদের কীর্তি, তাদের সংখ্যা ও স্বীকৃতি প্রসঙ্গে সন্দেহ-সংশয় দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি ১২ এপ্রিল, ২০১৮ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে সকল কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। তা অনলাইন দ্রষ্টব্য-https://www.bbc.com/bengali/news-37218470| দীর্ঘ ০৩ মাসেও ঘোষণাটি বাস্তবায়ন হয়নি। ২৭ জুন, ২০১৮ তারিখে সংসদে গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেত্রী মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের প্রস্তাব করলে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তা জোড়ালো সমর্থন করেন এবং এটি রাখার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালু হয়েছে। স্বীয় সন্তান সজিব ওয়াজেদ জয়ের উদাহরণ দেন। অনলাইন দ্রষ্টব্য-https://www.youtube.com/watch?v=cq5QU7YjpmQ| তিনি ভালোভাবেই জানেন, তাঁর সন্তানদের মুক্তিযোদ্ধা কোটাসুবিধা নেই। তাদের পিতা-মাতা ও নানা-নানী কারো নামই প্রচলিত মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নেই। আর বিদেশে বাংলাদেশের মতো চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নির্দ্ধারিত নয়। তারা বিদেশে পড়ালেখার কারণেই বৈষম্যহীন সফলতা লাভ করেছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে একইমুখে দু’রকম ঘোষণা কেন দিলেন? তিনি কি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন? তাহলে কেনইবা ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রচলনের কথা বললেন? মিথ্যা কথা। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্থ দেশ গড়তে বৈষম্যহীনভাবে নিয়োগ প্রদান করেছেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ আলাদা করেননি। তিনি যদি ভাতা বা কোটাসুবিধা প্রদান করতেন, তাহলে অবশ্যই তা দিতেন শহীদ স্বজনদের; মুক্তিযোদ্ধাদের নয়।
সুতরাং বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উচিত, প্রচলিত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা ও কোটা বাতিল করা। এতে যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। বঞ্চিত জনগোষ্ঠির জন্য চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৪৫ বা ৪০ করা। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনায় ঐক্যবদ্ধ জাতি গড়া। সবাইকে ১৯৭১ এর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ প্রজন্ম ঘোষণা করা।
mrmostak786@gmail.com.