Sonahat-Kali MondiR

শফিউল আলম শফি কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
দেশের উত্তাঞ্চলের ভারতের আসাম সীমান্তে বৃটিশ আমলের নির্মিত ‘সোনাহাট প্রাচীন কালীমন্দিরটি’ আজ ধ্বংসের চুড়ান্ত পর্যায়ে । ওই মন্দিরটির পুজা অর্চনা ও দেখাশোনা করার জন্য ৪বিঘা ৮শতাংশ জমি ওয়াকফ ছিল । সেই জমি স্থানীয় ভুমিদশ্যরা জবরদখল করে নিয়েছে। অপর দিকে মন্দিরটির গত ২‘শ বছর ধরে মেরামত না করায় তা আজ ধ্বংসের শেষ প্রান্তে রয়েছে। মন্দিরটিকে ঘিরে অনেক অলৌকিক কেচ্ছাকাহিনী এলায় জনশ্রুতি আছে। জানা যায়, দু‘শ বছর আগে দুধকুমর নদীর বুকে একটি রেলসেতু তৈরী করে সোনাহাটে রেলওয়ে ষ্টেশনসহ,সোনাহাট বন্দরগড়ে ওঠে। ভারত উপমহাদেশের বাংলা-আসাম সীমান্তে সোনাহাট একটি বানিজ্যিক কেন্দ্র হিসাবে গুরুত্বপুর্ন স্থান হিসাবে বিবেচিত হয়। ওই সময় ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় বড় ব্যবসায়ী বা মাড়োয়ারীরা ব্যবসা করতে সোনাহাট রেলওয়ে ষ্টেশনের দক্ষিণে বসবাস শুরু করে। ২৪ পরগনার গয়বাড়ি জোতদার শ্রী ভীকিমচান্দ স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে দেখেন সোনাহাটে অনেক মানুষ বসবাস করেন কিন্তু সেখানে কোন মন্দির নেই। তাই তাকে মা কালী সোনাহাটে একটি মন্দির নির্মান করার আদেশ দেন। এর পর শ্রী ভীকিমচান্দ মন্দির নির্মান ও এর যাবতীয় ব্যয়ভার বহনের জন্য বানুরকুটি মৌজার দাগনং ১৫৩১ ও ১৫৩৫ দাগের (বর্তমানখতিয়ান নং ১,৩৩,৩৬ ও ১) ১ একর ৪২ শতাংশ জমি দেবোত্তর হিসাবে উৎসর্গ করেন। ওই সময় মন্দিরে পুজা,অর্চনা ছাড়াও অসহায় দরিদ্রদের মাঝে প্রশাদ বিতরন ও দুরবর্তী তীর্থযাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা ছিল।এছাড়া স্থানীয় লোকজনের জন্য খনন করা হয় পাঁচটি গভীর ইন্দারা। বর্তমান মন্দিরটি বাংলাদেশের সোনাহাট বিজিবি ক্যাম্প ও ভারতের বিএসএফ ক্যাম্পের মধ্যবর্তী স্থান আন্তর্জাতিক পিলার ১০০৮ এর সন্নিকটে বাংলাদেশের ভুখন্ডে। মন্দিরটির নামে ৪বিঘা ৮শতাংশ জমি থাকলেও এখন আছে মাত্র ৮ শতাংশ । ১৫৩১ দাগের বাকী সম্পত্তি স্থানীয় ভুমি দস্যুদের কবলে বেদখল হয়ে গেছে। কালী মন্দিরটির অনেক অলৌকিক কাহিনী প্রচলিত থাকায় মন্দিরটি হিন্দু ধর্মাবলম্বি লোকজন এটিকে তীর্থস্থান হিসাবে মনে করে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় মাত্র কয়েকটি হিন্দু পরিবার ব্যতীত বাকীরা ভারতে পাড়ি জমালে ইন্দরাগুলো স্থানীয় লোকজন দখল করে নেয়। একটি ইন্দরা ভারতীয় সীমান্তের অভ্যন্তরে মন্দির থেকে ১০০ গজ দুরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এলাকার মানুষ জানান,মন্দিরটির দেবী জাগ্রত ভদ্রা কালী। মন্দিরের সেবক শ্রী সুবল চন্দ্র বংশপরম্পরায় ভদ্রাকালী নির্দ্দেশে জরাগ্রস্থ মানুষের মাঝে বিনামুল্যে কবিরাজী চিকিৎসা দিয়ে মানুষের সেবা করে আসছে। এই মন্দির ভারতের বিখ্যাত পুরোহিত ও তান্ত্রিক বিশেষজ্ঞ বিরাজ মোহন গাঙ্গুলী ছিলেন পুরোহিত। এখন শুধু কার্তিক মাসের অমাবশ্যা তিথিতে কালী পুজার সময় চুক্তিভিক্তিক পুরোহিত দিয়ে পুজার্চনা করা হয়। সেবায়েত সুবল জানান,বিপদগ্রস্ত ও রোগমুক্তির জন্য অনেক ভক্ত কালী মন্দিরে মানত করে কবুতর,ছাগল,ভেড়ার পাঠা টাকা পয়সা দা করেন। সুবল বলেন,কালীমন্দিরে একজোড়া নাগ-নাগিনী আছে দর্শনার্থীরা তাদের ভোগের জন্য দুধকলা দিলে জাগ্রত কালীমা নাগ-নাগিনীর রুপ ধরে তা খায়। এই মন্দিরে এখন পুজা, হরিসভা,সংকীর্তন ইত্যাদির হয়। আগে মেলা হতো দুরদুরান্ত থেকে তীর্থযাত্রী পুজারীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছিল এই মন্দির প্রাঙ্গন। সেই ঐতিহ্যবাহী মন্দিরের স্থানে ৯ হাত দৈর্ঘ্য ও ৬ হাত প্রস্থ ছোট একটি টিনশেড ও হাফওয়াল দিয়ে কোন রকমে মন্দির নির্মান করে তাতে বার্ষিক কালী পুজা ও দুর্গা পুজা অনুষ্ঠিত হয় ।
আসামে সীমান্ত ঘেষা হিন্দু লোকজন ওই মন্দিরটিতে এসে প্রসাদ দিয়ে পুজা করে যান। এলাকার লোকজন দাবী তুলছে ঐতিহ্যবাহী মন্দিরের নামের জমি উদ্ধার করে কালীমন্দিরটির আবার তার পুরানো জৌলুস ফিরে আনা হোক। উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুন্নবী চৌধুরীর বলেন সোনাহাট কালীূ মন্দিরটি অতি প্রাচীন মন্দির,বৃটিশ ও তার পুর্বে এই মন্দিরটি খুব জাগ্রত ছিল বলে আমি আমার বাবা মা ও দাদাদাদীর কাছে অনেক গল্প শুনেছি। স্থলবন্দর চালু হওয়ার পর সোনাহাটে উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে। মন্দিরটির রক্ষনাবেক্ষনের জন্য একটি মাত্র হিন্দু পরিবার থাকলেও মন্দির কমিটি নেই ফলে সরকারী সাহায্য সহযোগীতা পায় না। তবে মন্দির কমিটি গঠিত হলে এবং তারা আবেদন করলে আমি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে যথা সাধ্য সাহায্য করবো। আমিও চাই এই প্রাচীন কালী মন্দিরটি টিকে থাক ভবিষ্যত প্রজন্ম জানতে পারবে এই এলাকার প্রাচীন ইতিহাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *