কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সিংগারডাবরীহাট দ্বিমূখী উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরের একাংশ ও গেইটের দুদিকের জায়গা দখল করে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
যাদের অবৈধ জায়গা উদ্ধার করে দেওয়ার কথা তারাই জায়গা ভোগদখল করায় স্কুলের সীমানা প্রাচীর ও গেইট নির্মাণের সরকারি বরাদ্দকৃত ৯ লাখ টাকা ফেরৎ যেতে বসেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে বিপাকে পরেছে স্কুল কর্তপক্ষ। উচ্ছেদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ করেও মিলছে না প্রতিকার।
জানা যায়, এলাকার ব্যস্ততম জায়গায় অবস্থিত সিংগারডাবরীহাট স্কুলদুটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে মার্কেট ও হাট-বাজার। প্রধানতম রাস্তার পশ্চিমে অবস্থিত স্কুলের রাস্তা সংলগ্ন সীমানা অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে একটি প্রভাবশালী চক্র। স্কুলের ৯২ শতক জমির মধ্যে দখলকৃত অংশ প্রায় ১৫ শতক। এই জায়গায় মোটা অংকের জামানত নিয়ে ৩০টি দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তোলা হচ্ছে মাসিক ভাড়াও। যেটি স্কুলের উন্নয়নে কোন কাজে লাগছে না। এই দোকানঘর নির্মাণ করায় সবসময় শব্দ দুষণে ভুগছে শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীরা। ফলে স্কুলের দেয়াল ও গেইট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আসে সরকারি বরাদ্দও। কিন্তু স্কুল কর্তপক্ষ বারবার নোটিশ দিলেও কর্ণপাত করছে না অবৈধ দখলদাররা। স্থানীয় প্রশাসনেরও নেই কোনো উদ্যোগ।
অভিযোগ উঠেছে, সাবেক চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ কর্মকার, বড়াইপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সাবেক ইউপি সদস্য নুরনবী মিয়া, বর্তমান ইউপি সদস্য আব্দুল বাতেন, অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিদর্শক আজিজুল হক, বণিক সমিতির সভাপতি ওয়াহেদ মাস্টারসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রায় ৩০টি দোকানঘর নির্মাণ করে তা ভোগদখলে রেখেছেন।
সিংগারডাবরীহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিসা আক্তার, ইয়াশা খাতুন ও আয়শা আক্তার জানায়, স্কুলে কোন সীমানা প্রাচীর নেই। স্কুলের পাশে দোকানঘর থাকায় শ্রেণি কক্ষে কোন আলো আসে না। এছাড়াও দোকানঘরে সারাক্ষণ শোরগোল থাকে। আমাদের নিজস্ব সীমানা প্রাচীর থাকা ভীষণ দরকার।
অভিভাবক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, স্কুলের সামনে অবৈধ দোকান থাকায় স্কুলের যে সৌন্দর্য্য সেটি নষ্ট হয়ে আছে। আমরা এলাকাবাসী চাই অবৈধ দোকান তুলে এখানে সীমানা প্রাচীর করা হোক। তাহলে স্কুলের সৌন্দর্য ফিরে আসবে পড়ালেখার মানও বাড়বে।
বণিক সমিতির সভাপতি ওয়াহেদ মাস্টার স্বীকার করেন স্কুলের সামনে যতগুলো দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে সবগুলোই অবৈধভাবে নির্মিত। সরকারের যখন দরকার হবে তখন ভেঙে দেবে।
অবৈধ দখলদার ইউপি সদস্য আব্দুল বাতেন বলেন, আমরা এখানে ২৫/৩০ বছর ধরে দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করছি। আমাদের পূর্ণবাসন করে তারপর দোকানঘর ভেঙে দেওয়া হোক।
সিংগারডাবরীহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম আক্তারুজ্জামান বলেন, স্কুলের জায়গায় দোকানঘর নির্মাণ করায় শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হয়েছে। বারবার অনুরোধ করেও কোন ফল হচ্ছে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৮তম বৈঠকে দেশের সকল স্কুল-কলেজ গেইটের সামনে কোন স্থায়ী-অস্থায়ী দোকান না রাখার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ বাহিনীকে করা সুপারিশও কাজে লাগছে না।
সিংগারডাবরীহাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফুল ইসলাম জানান, সরকারিভাবে স্কুলের গেইট ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। টেন্ডারও হয়েছে কিন্তু এসব অবৈধ দোকানঘর উচ্ছেদের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও সফল হয়নি। উল্টো আমাদেরকে হুমকি ধামকীর মুখে পড়তে হচ্ছে। শিক্ষার মান উন্নয়নে এসব দোকানঘর দ্রুত উচ্ছেদ প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে রাজারহাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম অবৈধ দখলের বিষয়টি স্বীকার তিনি জানান, উপজেলায় প্রায় ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি অবৈধ দখলে রয়েছে। এরমধ্যে সিংগারডাবরীহাট, ঘড়িয়ালডাঙ্গা, পাঙ্গা, নাজিমখান, বোতলা, বৈদ্যের বাজার, চাকিরপশার তালুক, ডাংরারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিও অবৈধ দখলে রয়েছে। উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জমি দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধারে প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা চান তিনি।
বিষয়টি নিয়ে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরে তাসনিম জানান, অবৈধ জায়গা উদ্ধারে দ্রুতই উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *