এস.এম.রকি,খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: “স্বাভাবিক সন্তান প্রসবকে হ্যাঁ, সিজারকে না বলুন” এই স্লোগান নিয়ে প্রসূতি মায়েদের স্বাভাবিক সন্তান প্রসব (নরমাল ডেলিভারী) করিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন চিকিৎসক,নার্সবৃন্দ ও মিডওয়াইফবৃন্দ।
গত শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) ৬ জনের স্বাভাবিক সন্তান প্রসব হয়েছে উপজেলার পাকেরহাটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ব্রেষ্ট ফিডিং কর্ণার,ওআরটি কর্ণার, অটিজম কর্ণার,এ এন সি ও পি এন সি এবং কেএমসি কর্ণার চালুর মাধ্যমে হাসপাতালটিকে শিশুবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।
এদিকে অনেক বেসরকারী হাসপাতাল আর ক্লিনিক হওয়ায় নরমাল ডেলিভারী প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম আবার গ্রামাঞ্চলে কিছু অদক্ষ, প্রশিক্ষণবিহীন দাই মা’ও আছে। এই অদক্ষ দাই’মার কারণে অনেকসময় প্রসূতি মায়েদের মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।
এমন এক পরিস্থিতিতে সিজারের নামে বাণিজ্য, দালাল চক্র এবং অদক্ষ দাইমার হাত থেকে প্রসূতি মায়েদের রক্ষায় এবং নিরাপদে নরমাল ডেলিভারি করাতেই খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: আবু রেজা মো: মাহমুদুল হক ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামসুদ্দোহা মুকুলের নেতৃত্বে খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্øেক্সের কয়েকজন চিকিৎসক,নার্স ও মিডওয়াইফগণ টিম ওয়ার্ক শুরু করেন। নরমাল ডেরিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসব করতে প্রসূতিদের উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণায় তারা বিভিন্ন কৌশলও কাজে লাগিয়েছেন। এজন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে প্রসূতি নারীদের বিনামূল্যে ’প্রসূতি কার্ড’ দেয়া হয়। এরপর ডেলিভারি না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে কাউন্সেলিং আর ফ্রি চেকআপ, বিনা মূল্যে দেওয়া হয় ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ট্যাবলেট। প্রসূতি কার্ড ও নরমাল ডেলিভারি করাতে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষক,চেয়ারম্যান-মেম্বার,ইমাম ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছানো হয় প্রসূতি মায়েদের কাছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরাও নিজেরা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে কাউন্সিলিং প্রদান করেন।
এই টিম ওয়ার্কের ধারাবাহিকতায় এই বছরের এপ্রিল মাসে এপর্যন্ত ৩৭ টি নরমাল ডেলিভারি করানো হয়। আর গত ২০১৮ সালের জানুয়ারী থেকে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৯১২ টি নরমাল ডেলিভারি করানো হয়েছে। হাসপাতালে এসে নরমাল ডেলিভারি করানোর সংখ্যা দিন দিন এভাবেই বাড়ছেই। অন্যদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০১৯ সালের জানুয়ারী থেকে এপর্যন্ত প্রসব পূর্ববর্তী এ এন সি সেবা নিয়েছে ১৩৫৫ জন এবং প্রসব পরবর্তী পি এন সি সেবা নিয়েছে ৪২১ জন। যার ফলে বিগত বছরে স্বাস্থ্য সেবায় বিভাগের তৃতীয় ও জেলার প্রথম হয়েছিল খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারী হওয়া উপজেলার গোয়ালডিহি গ্রামের শিমলতলী এলাকার রবিউল ইসলামের স্ত্রী লিপি আক্তার (২৩) জানান, শুরুতে ভয় লাগলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাঠ কর্মীদের সাহসে হাসপাতালে এসে নিরাপদে স্বাভাবিক প্রসবে ছেলে সন্তান হয়েছে এতে আমরা অনেক খুশি।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্র্রাপ্ত) ডা.শামসুদ্দোহা মুকুল জানান, মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে এবং হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি নিরাপদ করতে দক্ষ মিডওয়াইফরা আছে যার ফলে নরমাল ডেলিভারীর সংখ্যা বাড়ছে এবং দিন দিন নরমাল ডেলিভারিতে প্রসূতিদের আগ্রহ বাড়ছে। কারণ হাসপাতালে নিরাপদে ডেলিভারি করানো হলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে না পাশাপাশি কোনো প্রকার অর্থও ব্যয় হয় না। সকলের সহযোগিতা পেলে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব সংখ্যা আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: আবু রেজা মো: মাহমুদুল হক জানান,পুরো উপজেলার গর্ভবতী মায়েদের ডাটাবেজের মাধ্যমে তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া হয় এবং প্রসব পূর্ববর্তী ও পরবর্তী চিকিৎসা ও পরমার্শ প্রদান করা হয় যার ফলে নিয়মিত নরমাল ডেলিভারীর সংখ্যা বাড়ছে। তিনি আরো জানান, নরমাল ডেলিভারি হওয়ার পর সমাজসেবা অধিদফতরের সহযোগিতায় জন্ম নেয়া শিশুর জন্য জামা-কাপড়, মশারি ও ওই শিশুর মাকে উপহার দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *