আতাউর রহমান বিপ্লব, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

ধরলা , ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমার, গঙ্গাধর, জিঞ্জেরাম, সোনাভরীসহ মোট ১৬টি নদী কুড়িগ্রাম জেলায় প্রবাহিত হওয়ায় এখানে তিন শতাধিক চর ও দ্বীপ চর অবস্থিত। বর্তমানে কুড়িগ্রামসহ দেশের অধিকাংশ নদী নাব্যতা হারিয়ে শুকিয়ে গেছে। মাছও ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। চরাঞ্চলের পাশাপাশি নদীর অববাহিকায় ছাগল পালন দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নদীতীরবর্তী এলাকার নারী-পুরুষ ছাগল পালনে আগ্রহী হয়ে ওঠে কারণ এর দাম কম হলেও লাভ বেশি। বেশিরভাগ মহিলাই তাদের নিজ নিজ পরিবারের ছাগল পালনের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এক গৃহবধূ মাজেদা ১৮, এক ছেলের জননী, স্বামী দারিদ্র্যের কারণে স্ত্রীকে রেখে কাজের সন্ধানে অজ্ঞাত স্থানে চলে গেলে কুড়িগ্রামের তিস্তা নদীর চর এলাকায় জোওয়ান সাতারা এলাকায় বাবার বাড়ি ফিরে আসেন। চর এলাকার অধিকাংশ মানুষই দরিদ্র ও অতি দরিদ্র। তাদের হাতে হাত রেখে বাঁচতে হয়। সেখানে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ নেই। অনেক সময় অল্প মজুরিতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে চরের জমিতে কাজ করতে হয়। যদি সে কাজ পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয় তবে তার সন্তানের সাথে অর্ধেক এবং খাবার ছাড়াই বেশ কিছু দিন কেটে যায়। এ অবস্থায় সরকারের পল্লী উন্নয়ন একাডেমির অর্থায়নে এমজেএসকেএস নামে একটি বেসরকারি সংস্থা প্রান্তিক কৃষকের পাশাপাশি চরের মানুষের উন্নয়নে চর এলাকায় কার্যক্রম শুরু করে। সংস্থাটি সহযোগীর পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা সংস্থার সাথে পরিষেবা পেতে সংযোগও করে। গৃহবধূ মাজেদা এনজিও থেকে সহায়তা পেয়ে মাত্র চার বছর আগে চার হাজার টাকায় একটি ছাগল কিনেছিলেন। এদিকে তার ছাগল বেড়েছে বর্তমানে বারোটা। ছাগল বিক্রি করে ত্রিশ হাজার টাকা পেয়েছেন। তার কিছু জাতের ছাগল বছরে তিনবার প্রসব করেছে এবং প্রতি ডেলিভারিতে সে ২ থেকে ৪টি বাচ্চা পেয়েছে। মাজেদা বলেন, চর এলাকার ঘাস ছাড়া ওই শিশুদের জন্য কোনো অতিরিক্ত খরচের প্রয়োজন নেই এবং এটি লাভজনক। মাজেদার মতো অনেক নারী চর এলাকায় ছাগল পালন করে তাদের দারিদ্র্য ও ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। মাজেদার প্রতিবেশী জোসনা বেগমের ১২টি ছাগল রয়েছে। মরিয়স বেগমের ৯টি, রাবেয়া ৯ কাশেম আলী-৮ মফিজল৮ এবং আবুল হোসেনের ৭টি ছাগল রয়েছে। জোসনা বেগম জানান, আমরা বাঁশ দিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে উঁচু জায়গায় ছাগল পালন করছি। আমরা সময়মতো ছাগলের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করি। উচ্চ জাতের ছাগল একবারে ৩-৪টি বাচ্চা দেয়। একই চরের শেরিনা বেগমের স্বামী আজাদুর রহমান জানান, প্রতিবছর আমাদের ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এর আগে বন্যার সময় শুকনো জায়গা ও খাবারের অভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অন্যান্য গৃহপালিত পশুসহ ছাগল মারা যায়। কিন্তু এখন আমরা বাঁশের (মাসা) প্রশিক্ষণ নিয়ে উঁচু জায়গায় ছাগল পালন করছি। আমার এখন ৬টি ছাগল,৮টি ভেড়া এবং ৬টি গরু রয়েছে। আমার অর্থের প্রয়োজন হলে আমি সেগুলি বিক্রি করতে পারি। আগের সময়ের চেয়ে এখন আমরা ভালো আছি। ওই এলাকার পলি লাইভস্টক ফিজিশিয়ান (কোয়াক) হারুন উর রশিদ জানান, তিনি এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং চর এলাকায় এসব পশু পালনের পরামর্শ ও চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তিনি আরো বলেন, খামারিরা তার পরামর্শ অনুযায়ী উচ্চ জাতের পশু নির্বাচন এবং প্রজনন করে উপকৃত হচ্ছেন। সুইস কন্টাক্টের জেলা সমন্বয়ক ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা সেখানে কাজ শুরু করার পর চর এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। চরাঞ্চলে পশু চাষ ও লালন-পালনের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। গৃহপালিত পশুসহ তাদের উৎপাদিত ফসলের মূল্য তারা পাবে বলে আমরা নিশ্চিত করেছি। কুড়িগ্রাম জেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ ইউনুস আলী বলেন, চরাঞ্চলের গৃহপালিত পশুরা জেলার মানুষের দুধ ও অন্যান্য ভিটামিনের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। সরকারের সকল সেবা প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে পৌঁছে দিতে আমরা বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কাজ করছি। তিনি আরো বলেন, আমরা চর এলাকায় গবাদিপশু পালন, ছাগল পালন, রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা, পরামর্শ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *