কচাকাটা ( কুড়িগ্রাম) থেকে মনিরুল ইসলাম মিলন :- কুড়িগ্রাম জেলায় নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা থানায় অবস্থিত সষ্কোস নদীর বুক থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রতিনিয়ত ড্রেজার মেশিন দিয়ে শতাধিক ভিটি বালু ও কাজের বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ভিটি বালু ও কাজের বালু ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে নদীর বুক ও কিনারা খুড়া হচ্ছে। এতে করে ফসলি জমি ও বসতবাড়ী হুমকির মুখে পড়ছে। টানা বৃষ্টিতে নদীর পানি বাড়ার সাথে সাথে আশেপাশের ফসলি জমি ও সঙ্কোস নদীর উপর ২টি নির্মিত সেতু নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া আশপাশ এলাকায় ধুলি ধোঁয়া-শব্দ দূষন বৃদ্ধি পেয়েছে। নাজেহাল পরিস্থিতিতে পড়েছে শিশু হতে একাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সী প্রায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। ড্রেজার মেশিনের বিকট আওয়াজে ছাত্র/ছাত্রীদের পড়াশুনা করতে পারছে না। যানজট ও গাড়ীর ধুলায় কচাকাটা বাজারের প্রধান সড়কে থাকা ঔষুধ, হোটেল, মুদিসহ বিভিন্ন খাদ্য জাতীয় দোকানীরা নির্বিকার ভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে। নদীতে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে দেদারছে হাজার হাজার বালি তুলে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা রোড, ব্রীজ কালভার্টসহ পারিবারিক প্রয়োজনে ব্যবহার করছে। প্রতিদিন কচাকাটা বাজারের অদূরে, সষ্কোস নদীর অবৈধ বালি মহল ব্যবহার করে ট্রলি, মিনি ট্রাক, বড় ট্রাক মিলে প্রায় শতাধিক গাড়ী দিনভর বালি নিয়ে যাচ্ছে দূর দূরান্তে।
সষ্কোস নদী কেদার ইউনিয়নের সাতানা গ্রাম থেকে শুরু করে, কচাকাটা ইউনিয়ন ও বল্লভেরখাস ইউনিয়নের মাদারগঞ্জ বাজার পযর্ন্ত দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ ও নিয়মিতভাবে সঙ্কোস নদী থেকে বালু উত্তোলন ও বালি বিক্রি করে আসছে প্রভাবশালী মহল। ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্তও ফিটনেস বিহীন ছোট বড় নানা প্রকার যানবাহনে এ বালি ফসলী জমির উপর দিয়ে চলাচল করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে আসছে।
কচাকাটা বাজারের প্রধান সড়ক ঘেঁষে কচাকাটা শিশু নিকেতন, কেডি এস এস কিন্ডার গার্ডেন, কচাকাচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, কচাকাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কচাকাটা ডিগ্রী কলেজ, কচাকাটা দাখিল মাদ্রাসা, কচাকাটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কচাকাটা বাজার জামে মসজিদ, কচাকাটা মহিলা কলেজ ছাড়াও রয়েছে বেশ কয়েকটি কিন্ডারগার্টেন ও ব্যক্তিগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে সব মিলিয়ে কয়েক সহস্রাধিক শিক্ষার্থী নিয়মিত লেখাপড়া করে। জনবহুল এ বাজারের পাশে সাতানা গ্রামের প্রধান সড়কে রয়েছে বহু পুরনো জরাজীর্ণ ২টি কালর্ভাট ও ১টি মাত্র ঝুকিপূর্ণ সেতু। রাতদিন বালু ও মাটি ভর্তি ভারী যানবাহন চলাচলের কারনে যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে গুরুত্বপূর্ণ কালর্ভাট ও সেতুটি।
জনগুরুত্বপূর্ণ বৃহৎ কচাকাটা বাজারে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাধারন মানুষের সমাগম লেগেই থাকে। এর মাঝেই চরম ঝুঁকি নিয়ে চলে বালি ব্যবসায়ীদের ফিটনেস বিহীন অদক্ষ ড্রাইভারদের বেপরোয় গাড়ী চলাচল। প্রতি বছরই এসব বালি বোঝাই গাড়ীর চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণহানী ঘটার রেকর্ড আছে।
যখন একমুখি এ সরু রাস্তায় কোন বালি বোঝাই গাড়ী বিকল হয়ে পড়ে তখন দূর্ভোগ চরমে ওঠে। ছোট খাটো দূর্ঘটনা যেন এ রাস্তার নিয়মিত চিত্র। বালিমহল ব্যবহারকারীরা সরকারি দলের প্রভাবশালী হওয়ার কারনে স্থানীয় জনসাধারণ ভয়ে কিছু বলতে সাহস পাচ্ছে না।
নদীর গতিপথ পরিবর্তন, ভূমিধ্বস, পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি সষ্কোস নদীর এ বালুমহাল দখলকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা-হাঙ্গামাও কম ঘটেনি। দিনশেষে হাজার হাজার টাকার বালি বিক্রির টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়েও রয়েছে নানা ঝগড়াঝাটি, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা।
এলাকাবাসীর দাবী সষ্কোস নদীর অবৈধ বালুমহাল বন্ধ করে এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় যথাযথ কর্তৃপক্ষ ভূমিকা রাখবে একই সাথে হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য রক্ষাসহ বাজারের পরিবেশ দূষণ থেকে এলাকাবাসীর মুক্তি মিলবে।
কচাকাটা বাজারের এক বালু শ্রমিক জানান, প্রতিটি ট্রাক্টর ইঞ্জিনচালিত গাড়ী ১০০০ হাজার টাকা ও ট্রলি ৫০০ শত টাকা হারে নিয়মিত বালি বিক্রয় হয়। এ বাজারে নিয়মিত শতাধিক যানবাহন বালি পরিবহনের সাথে জড়িত রয়েছে। এছাড়া বালি মহালকে কেন্দ্র করে কচাকাটা থানার কিছু প্রভাবশালী মহলরা মাসিক মাসোহারা পাচ্ছে।
কচাকাটা থানাধীন এলাকার ভূক্তভোগী সাধারণ মানুষ বলে প্রতিবছর বালি ও মাটি কাটার ফলে সঙ্কোস নদীর দুইপারে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। ঘরবাড়ি ভেঙ্গে নি:স্ব হয় মানুষ, নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের ফসলী জমি।
এই এলাকার সচেতন মহলরা বলেন, এই সঙ্কোস নদীকে ঘিরে অনেকবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাগেশ্বরী উপজেলা থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হয়েছে। অবস্থানগত এবং নানা কারনে বালু খেকোদের হাত থেকে নদী ও পরিবেশ রক্ষা করা তার একার পক্ষে সম্ভব হয়না।
এ বিষয়ে নাগেশ্বরী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা শঙ্কর কুমার বিশ্বাস স্যার বলেন, কেউ সঙ্কোস নদী থেকে বালি উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া তিনি নিজে উপস্থিত থেকে কয়েক বার ড্রেজার মেশিনের পাইপ কেটেছেন, ড্রেজার মেশিনের মালিকদের জরিমানা করেছেন। তবুও তারা বালু উত্তোলন করা বন্ধ রাখেনি। তিনি আরো বলেন আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নদী পাড়ের ফসলি জমি ও শত শত বসতবাড়ী নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার আগেই অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন ও মাটি কাটা বন্ধে এখনই প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ বলে ভূক্তভোগীরা মনে করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *