নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি :
বগুড়ার নন্দীগ্রামে ওমরপুর পশুর হাটে অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে দেখা গেছে। মানা হচ্ছে না সরকারি নিয়ম নীতি। ভিডিও নিয়ে ফেরার পথে হাটের মধ্যে প্রকাশ্যে কয়েকজন সাংবাদিককে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের তদারকি না থাকায় পৌরসভার ওমরপুরে সাপ্তাহিক এই হাটে পশুর ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে হাটের ইজারাদারের লোকজন। পশু বহনের কাজে ব্যবহৃত যানবাহন থেকেও নেওয়া হচ্ছে চাঁদা। নিরব কেন প্রশাসন! এমন প্রশ্ন পশুর ক্রেতা বিক্রেতাদের।

শুক্রবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে হাটে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রমাণ মেলে। ছামিউল নামের ক্রেতা ৭৫ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছেন। তার কাছ থেকে হাসিল আদায় করা হয়েছে ৬শ’ টাকা এবং বিক্রেতার কাছ থেকে নিয়েছে ১শ’ টাকা। অথচ ৯২৭ নং রসিদে গরুর মূল্য উল্লেখ থাকলেও হাসিল আদায়ের টাকার পরিমাণ উল্লেখ নেই। ক্রেতারা পশু কিনে হাট থেকে বের হওয়ার পূর্বেই রসিদ অর্ধেক কেটে রেখে দেয় ইজারাদারের লোকজন। হাটের বর্তমান ইজারাদার প্রতিষ্ঠান আর.কে এন্টারপ্রাইজ।

তিনজন আদায়কারী বলেন, সরকারি নির্ধারিত হাসিল ৩শ’ এবং ৪শ’ টাকা। ইজারাদারের কথামতো তারা নিচ্ছেন ৭শ’ টাকা। ৩০০/৪০০ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত এসব টাকা ইজারাদার, আদায়কারী, প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করতে ব্যয় করা হয় বলে দাবি করেন তাঁরা। এ ছাড়া হাটে হাসিল আদায়ে সরকারি নির্ধারিত টাকার পরিমাণের তালিকা টাঙানো হয়না। প্রকাশ্যে অতিরিক্ত হাসিল আদায় বন্ধে উপজেলা প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা।

দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে অতিরিক্ত হাসিল আদায় করা হচ্ছে। হাসিল আদায়ের পর ক্রেতা-বিক্রেতাকে যদিও রসিদ দিচ্ছে, সেখানে পশুর মূল্য উল্লেখ করে দেওয়া হয়। রসিদে হাসিলের টাকার পরিমাণ লেখা হয়না। অতিরিক্ত টাকা আদায়ের সময় কয়েকজন সাংবাদিক ভিডিও নেয় এবং ফেসবুকে লাইভ করে। ভিডিওতে ইজারাদারের লোকজন অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে। ফেরার পথে হাটের মধ্যে প্রকাশ্যে ৪জন সাংবাদিককে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় হাটের ইজারাদারের লোকজন।

নন্দীগ্রাম উপজেলা প্রেস ক্লাবের দপ্তর সম্পাদক নজরুল ইসলাম দয়া জানান, ওমরপুর পশুর হাটে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের খবর পেয়ে কয়েকজন সাংবাদিকসহ তিনি হাটে যান। পশুর হাটে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রমাণ মেলে। ভিডিও নেওয়ার সময় ইজারাদারের লোকজন সাংবাদিকদের হাত ধরে টানাটানি করে। ইজারাদারের ঘরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ফেরার পথে হাটের মধ্যেই ইজারাদারের ঘরের সামনে সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হয় কয়েকজন ব্যক্তি। তারা সময়মতো দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে বলে, ‘সাংবাদিকতা করো ভালো কথা, বেশি বাড়াবাড়ি করো না। সবাইকে ম্যানেজ করেই সব হচ্ছে। হাটের মধ্যে সাংবাদিকরা প্রবেশ করতেই পারবে না। সাংবাদিকরা হাট থেকে বের হতেও পারবে না।’ ইজারাদারের ঘরের মধ্যে থেকে একজন বলে, ভেবেছিল সাংবাদিকরা গরু দেখতে এসেছে। কেন ভিডিও করা হলো এবং ফেসবুকে লাইভ করা হলো কেন? বাড়াবাড়ির জন্য সাংবাদিকরা সময়মতো টের পাবে।

অতিরিক্ত টাকা আদায় বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, সাংবাদিকের ভিডিওতে দেখেছি, ওমরপুর পশুর হাটে ব্যাপক অনিয়মের কথা আদায়কারীরা স্বীকার করেছে। সব হাটে সব ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ইজারা আদায় করা হচ্ছে। কোথাও সরকারি নিয়ম নীতি মানা হচ্ছে না। প্রশাসন জেনেও চুপ আছে। অনেকে ভাগ পায়, এইজন্য সবাই চুপ থাকে। জনগণের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সাংবাদিকদের হুমকির ঘটনায় অভিযোগ বা জিডি পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পশুর হাটে কেউ অতিরিক্ত টাকা আদায় করলে উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিফা নুসরাতের মন্তব্য নিতে সরকারি ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন