মোঃ মোস্তাকিম হোসেন রনি
ধর্ষণ, খুন,নারী নির্যাতন বা মাদক সবকিছুর ব্যাপকতাই ছড়িয়ে পড়ে সমাজ ব্যবস্থার পচন থেকে। এর জন্য বিচারহীনতা আর পাওয়ার প্র্যাক্টিস অনেকাংশে দায়ী।
কিন্তু, দিনশেষে এইসব ঘটনার দায় এবং নারীদের প্রতি সহিংসতা আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। নির্যাতনকারী, পটেনশিয়াল রেপিস্ট কিংবা সেক্সুয়ালি ফ্রাস্ট্রেটেড লোকগুলা দিনশেষে আমাদের কমিউনিটিতেই বাস করে এবং আমাদের সমাজে মুখোশ পড়ে ঘুরে বেড়ায় যাদের আলাদাভাবে চেনা খুবই কঠিন।
সামাজিক প্রতিরোধ ও আন্দোলন হয়তো পরিস্থিতির সাময়িক উন্নতি ঘটাতে পারে। কিন্তু নিজের অবস্থান থেকে পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি দরকার। কেননা,আমি নিজে কি মন মানসিকতা ধারণ করি,সেটা আমিই নিজেই সব চেয়ে ভালো জানি। অন্যের থেকে ভালো মানুষের সার্টিফিকেট পাওয়ার চেয়ে নিজের বিবেকের কাছেই পরিষ্কার থাকা বেশি প্রয়োজনীয়।
হয়তো, যাদের সত্যিই মানসিক পরিবর্তন দরকার,তারা পরিবর্তন হবে কিনা কে জানে?
তবু ও দিনশেষে, সবার জন্য একটা নিরাপদ সমাজের জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে।
আইনের সঠিক প্রয়োগ এবং আমাদের পরিবর্তনেই হয়তো সুবোধ ফিরে আসবে। সত্যি বলতে চারপাশের অবস্থা দেখেই নিজেরই অনেক খারাপ লাগে, এত সমস্যা আর নিরাপত্তাহীনতা। বাক স্বাধীনতা ও নেই বললেই চলে। কঠোর আইন আর এটার ইমপ্লিমেন্ট দরকার, কারণ এইসব মানুষের চেঞ্জ হওয়ার পসিবিলিটি কম। সব জায়গায় হিপোক্রেসিতে ভরে গেছে। ফেসবুকে লাখ লাখ পোষ্ট, তাহলে কাজগুলা কি ভূত করে কি না বুঝি না
হ্যাঁ, ওইসব লোকগুলাকে মেন্টালি চেঞ্জ করা খুব টাফ।এজন্য, ফাঁসি কিংবা ডেথ পেনাল্টিই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে, এছাড়া কন্ট্রোল করা কঠিন হয়ে যাবে। মানুষের মধ্যে শাস্তির ভয় আনতে হবে, অল্টারনেট ওয়ে দেখি না আর।
সত্যি বলতে বাংলাদেশের কোনো সেক্টরের দিকে তাকিয়ে আমরা স্বস্তি পাচ্ছি না।
প্রত্যেক টা এরিয়াতে প্রেবলেম, এই সিস্টেমের পরিবর্তন কবে আসবে কে জানে। দেশ প্রেম, নীতি নৈতিকতার অভাবে আমরা দিনদিন পিছিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী সার্টিফিকেট অর্জন করলেও মানুষ হওয়ার জায়গাটি শূন্য কোঠায় এসে পৌছেছে, লেজুর ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি আমাদের মূল শিক্ষা গ্রহণ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে অসুস্থ রাজনীতির কারণে। সিলেটের এমসি কলেজ সহ দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নামধারী ছাত্র নেতা ও যে সমস্ত ছাত্র কর্তৃক ছাত্রী ও নারীরা ধর্ষণ ও লাঞ্চনার শিকার হচ্ছে সেখানেই দায়ী হচ্ছে তথাকথিত রাজনীতি। জেলা পর্যায়ে একজন ছাত্র নেতা যখন খুবই অল্প সময়ের মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যায় তখন লেখা পড়ার দিকে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের দৃষ্টি অর্থের দিকে ঝুকে পড়ে। শর্টকাটে বড় লোক হওয়ার জন্য লেখাপড়ার দিকে নজর না দিয়ে সরকারী দলীয় রাজনীতিতে অনেকে ঝুকে পড়ছে। শিক্ষকরাও এখন নীল-সাদা দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। ভিসি ও প্রভোস্ট পদে অসুস্থ লড়াই করতে গিয়ে নগ্ন রাজনীতিতে নিজে জড়িয়ে পড়ছেন এবং সেই সাথে কমলমতি ছাত্রছাত্রীদেরকে ব্যবহার করছেন। ফলে শিক্ষকদের উপর থেকে ছাত্রদের আস্থা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সম্মান হারিয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও সরকারী দলের শিক্ষক ও ছাত্র নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ উন্নয়নের টেন্ডার ও ভাগাভাগিও একসাথে করছেন।
মূল্য বোধের অভাব থেকে জন্ম নিচ্ছে নানা অপরাধ। সরকার ও নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য দুরনীতি ও অন্যায়কে আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছেন। এই জন্যই সাহেদ, সাবরিনার ধরা পড়লেও তাদের গড ফাদাররা ধরা ছোয়ার বাহিরে চলে যাচ্ছে। ধর্ষক যেই হোক না কেন তার কঠিন শাস্তি হওয়া উচিৎ। শুধু বক্তৃতা,বিবৃতি, মানববন্ধন, সেমিনারে নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে কঠিন আইন সংসদে পাশ করে তাদের প্রত্যেককে যদি কঠিন শাস্তির আওতায় আনা যায় তবে সমাজ থেকে এই জঘন্য অপরাধ শূন্য কোঠায় চলে আসবে।
আসুন আমাদের মস্তিষ্ক ও বিবেকের চিকিৎসা করি।
লেখক
বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট
১ম বর্ষ বর্ষ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়