কবিতা
আমার দেশ- আমার পৃথিবী
নাজমুল হুদা পারভেজ

আমি একটা সুন্দর কবিতা লিখতে চাই-
শব্দের পর শব্দ বসিয়ে, ছন্দের পর ছন্দ সাজিয়ে
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের মতো. তাল গাছের কবিতা।
“ তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে
সব গাছ ছাড়িয়ে
উঁকি মারে আকাশে।
মনে সাধ, কালো মেঘ ফুঁড়ে যায়.
একে বারে উড়ে যায়
কোথা পাবে পাখা সে।”

কিন্ত লিখতে পারি না। মনের কল্পনায় শব্দ সাজাতে সাজাতে-
ঘুমিয়ে পরি, গভীর ঘুমের অসচেতনতার মাঝে স্বপ্নে দেখতে পাই-
তাল গাছ কেটে ফেলার দৃশ্য, দেখতে পাই নির্বিচারে অরণ্য বিনাশ-
বিপন্ন পশুর চারণভূমি, ভোরের বাতাসে শুনতে পাই না
কলকাকলীর তান, বুক ভরে নিতে পারি না বিশুদ্ধ অক্সিজেন।
কালো ধোঁয়ায় আবর্তিত আমার সোনালি পৃথিবী
কার্বন-ডাই-অক্সাইডের বিরুপ প্রতিক্রিয়ায় পরিবর্তিত জলবায়ু
দিনে দিনে বাড়িয়ে তুলছে মানবিক সংকট।

সুন্দর কবিতাটি, যা আমি বার বার লিখতে চেষ্টা করেও
লিখতে পারিনি- কলম হাতে লিখতে বসলেই
চোখের সামনে ভেসে উঠে, শুকিয়ে যাওয়া নদী করতোয়া, আইবুড়ি,
আত্রাই, ইছামতি, কর্ণঝরা, কপোতাক্ষ, ধরলা, ধলাই, ধলেশ্বরী ও ধানসিড়ি।
আরও কত শত নদী। যে নদীকে ঘিরে রচিত হয়েছিল শত শত কবিতা-
গান ও কাব্য। যে নদী গুলো পরিচয় করিয়ে দিতো নদীমাতৃক বাংলাদেশকে।
নদী শুকিয়ে যাওয়ায় আজ, প্রভাব পড়েছে এ দেশবাসীর দেহ মনে-
প্রভাব পড়েছে সাহিত্যে -কাব্যে, উৎসব-অনুষ্ঠানে।

আমি সুন্দর একটা কবিতা লিখতে চাই- কিন্তু লিখতে পারি না,
স্বপ্নের মাঝে আমি শুধু ছটফট করি-
আমি স্পষ্ট দেখতে পাই,
তপ্ত দুপুরে ইট ভাঙ্গা নারী শ্রমিকের কপালের ঘাম
আমি দেখতে পাই, অ্যাসিডে ঝলসানো জেরিন আক্তারের মুখ।
দেখতে পাই, রাজপথে গার্মেন্টস শ্রমিকদের দাবি আদায়ের মিছিল,
দেখতে পাই, পাট শ্রমিকের আমরণ অনশনে অংশ নেয়া অসুস্থ বৃদ্ধের মুখ।
আমি দেখতে পাই,আগুনে পুড়ে হত্যা করা নুসরাতের বিভৎস্য মুখাবয়ব
আমি দেখতে পাই, চলন্ত বাসে ধর্ষিতা সেবিকা তানিয়ার মৃত দেহ,
আমি দেখতে পাই, বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার প্রতিবাদে মৌন মিছিল।
আমি দেখতে পাই,বন্ধুর হাতে বন্ধুর খুন হওয়া রাসেলের পচা লাশ,
দেখতে পাই, নিজ শিুশু কন্যাকে ধর্ষণকারী-
ঘৃিণত কুলাঙ্গার পিতা আইনালের মুখ।
আমি দেখতে পাই-
মানবতা বর্জিত অস্থির সমাজের প্রতিচ্ছবি।
স্বপ্নের মাঝে আামি দেখতে পাই,
কারা যেন আমার কণ্ঠনালী চেপে ধরতে চায়,
কারা যেন আমাকে হত্যা করতে চায়,
বন্ধ করতে চায় আমার কবিতা লেখা।
স্বপ্নের মাঝে আমি চিৎকার করে উঠি-
হারিয়ে ফেলি ছন্দের মালা,
ছন্দ হারিয়ে, আমার কবিতা হয়ে যায় গদ্য কবিতা
ছন্দ হারিয়ে, তালগাছটি এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে,
কখনই ছুঁতে পারে না আাকাশ।

আমি কবিতা লিখতে চাই, মানুষের জন্য
আমি কবিতা লিখতে চাই, প্রকৃতির জন্য।
আমি কবিতা লিখতে চাই, মানবতার জন্য,
আমি কবিতা লিখতে চাই, ভালোবাসার জন্য।

যে কবিতায় উঠে আসবে, আমার আদি জন্¥ভূমি ,
গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট্ট তিস্তা নদী।
রাখালের বাঁশির সুর আর মহিষের বাথান,
নূপুর পায়ে কলসি কাঁখে গ্রাম্য রমণীর,
কলসীতে জল বয়ে নেয়ার দৃশ্যের বর্ণনা।
তপ্ত দুপুরে বিষণ্ণ হাওয়ায়-
দুষ্টু ছেলে-মেয়েদের ঘুড়ি উড়ানো,
ডাংগুলি খেলতে খেলতে বেলা বয়ে যাওয়া সন্ধ্যা।
যে কবিতায় থাকবে-
বাঁশ বাগাানের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া মসৃণ মেঠো পথে
একদল কিশোরের মার্বেল খেলা কিংবা শূন্য সরিষা ক্ষেতে
ছেলে মেয়েদের দাড়িয়া বাধা খেলা
অথবা কানামাছি খেলার গল্প।

যে কবিতায় থাকবে-
শীতের সকালে বাড়ির উঠোনে বসে
শীতের পিঠা কিংবা মুড়ি-গুড় খেতে খেতে দাদুর গল্প শোনা।
যে কবিতায় থাকবে-
ব্রহ্মপুত্র নদের জলে পাল তোলা নৌকা বয়ে যাওয়া
আর মাঝি -মাল্লার কণ্ঠ উঁচিয়ে-
মুজিব বাঁইয়া যা ওরে- গান গাওয়া।

আমি কবিতা লিখতে চাই, যে কবিতা হবে-
লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির মোনালিসার ভালোবাসা থেকে আলাদা
যে কবিতায় থাকবে না ,রবীন্দ্রনাথের লাবণ্যের প্রেম কাহিনি
কিংবা জীবনানন্দ দাসের বনলতা সেনের দৃষ্টি নন্দিত এক জোড়া চোখ।
যে কবিতায় থাকবে না, ট্রয়নগরী ধংসের নায়িকা হেলের কথা,
যে কবিতায় থাকবে না,দৌলত উজির বাহা রাম খানের-
লাইলী – মজনুর রোম্যান্টিক প্রণয়োপাখ্যান কিংবা-
নিজামি গঞ্জবির শিরি- ফরহাদের ভালোবাসার গল্প।

আমি কবিতা লিখতে চাই- ভালোবাসার কবিতা-
যে কবিতা হবে না সুন্দর কোন রমণীর পায়ের পায়েল,
আমার কবিতা হবে,গাঁয়ের অখ্যাত কোন রমণীর কপালের লাল টিপ।
আমার কবিতা হবে,আমার কল্পনার নায়িকা “হৃদির” কাজল দেয়া
এক জোড়া কালো হরিণী চোখ,যে চোখ জোড়া
আমার সৃষ্টির সংগ্রামের পথ দেখাবে অনন্তকাল।
ভালোবাসবে আমার কবিতাকে, ভালোবাসবে নিরন্ন মানুষকে,
ভালোবাসবে আমার স্বপ্ন গুলি – আমাদের সংস্কৃতিকে।
আমার ভালোবাসার রজনিগন্ধা রেখে দিয়েছি শুধু তারই জন্য
কল্পনায় নাম রেখেছি“ হৃদি”-তারই অপেক্ষায় লিখছি কবিতা।
যে আমাকে ভালোবাসবে, ভালোবাসবে আমার পৃথিবী
এবং আমার এই দেশ, বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *