সোহেল রানা
কুমিল্লার দাউদকান্দি, চান্দিনা, মুরাদনগর, দেবিদ্ধার উপজেলার ইউনিয়ন গুলোর বিভিন্ন গ্রামে একের পর এক ঘটে চলেছে বাল্যবিবাহ। যেন কোনোক্রমেই থামছে না এই বিয়ে। উপজেলা প্রশাসন বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করলেও কৌশলে এই বিয়ে সম্পন্ন করছে অভিভাবক মহল। এলাকার সচেতন ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতারা ও কতিপয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জোগসাজশে এই বিয়ে ঘটছে। পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীরা এই বিবাহের শিকার হচ্ছে। আবার কেউ কেউ জন্ম নিবন্ধন সনদ জাল করে ভুয়াভাবে বয়স বাড়িয়ে নিচ্ছে। অনেকেই আবার এফিডেভিটের মাধ্যমে বিবাহ ঘোষণা করেই সম্পূর্ণ অবৈধভাবে সংসার করছে। এসব নাবালিকা মেয়েরাই অল্প বয়সে সন্তান ধারণ করে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে একদিকে ওইসব মেয়েদের চিকিৎসা করাতে পিতা বা স্বামীর হিমশিম খেতে হচ্ছে। অন্যদিকে, কয়েক বছর সংসার করার পর মেয়েরা নানাভাবে মানসিক, শারীরিক ও পাষবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনাও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। কোনো কোনো মেয়ে বিষপানসহ গলাই ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করছে। কিংবা ওইসব মেয়েদের শশুর বাড়ির লোকজন জোর করে গলাই ফাঁস দিয়ে গাছে বা ঘরের আঁড়ার সাথে ঝুলিয়ে রাখছে এমন অভিযোগও রয়েছে। চলতি বছরে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামগুলিতে সর্বত্রই একের পর এক স্কুল পড়য়া নাবালিকা মেয়েদের বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে। এসব বিয়ের সাথে ইউনিয়নের কতিপয় কাজী ও পুরহীতরাও জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। কিছু বাল্যবিবাহ উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বন্ধ হলেও পুনরায় অভিভাবক মহল কৌশলে নিজ গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে নিয়ে খুব গোপনে বিবাহ সম্পন্ন করেছেন। অথচ সরকারিভাবে স্বারাদেশে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে অনেক আগেই। এ ছাড়াও বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সভা, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি রয়েছে। এর পরও কোনোভাবেই মুক্ত হচ্ছে না এই বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহের এই অভিশাপ থেকে যেন কিশোরী মেয়েরা পরিত্রাণ পাচ্ছে না। শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে এই বিয়ের হার অনেক বেশি। এর মধ্যে দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ ১৯নং দক্ষিণ ইউনিয়নের বেকিনগর গ্রামে গত ২২ শে জুলাই একই দিনে দুটি বাল্য বিবাহের ঘটনা ঘটেছে। এ অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল ২৪ শে জুলাই বেকিনগর হাজী বাড়িতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে কিছু বকাটে কিশোর গ্যাং এর হাতে সাংবাদিকরা হেনস্তার শিকার হয়েছেন। বেকিনগর হাজী বাড়ির আব্দুল মতিন এর ছেলে জুবায়ের হোসেন যোব (১৬), একই ইউনিয়নের মোবারকপুর গ্রামের পিতা: সোহেল ও মাতা: খোরশেদা বেগম এর মেয়ে লিজা আক্তার (১৪) কে ফুসলিয়ে-ফাসলিয়ে নিজ এলাকায় নিয়ে আসেন ! এ ব্যাপারে আব্দুল মতিন এর কাছে সাংবাদিকরা বিষয়টি জানতে চাইলে তার ছেলের সঙ্গী কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা অপ্রীতিকর ভাবে কথাবার্তা ও অশোভন আচরণ করে! বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে আব্দুল মতিন বলেন রায়পুর সিংগুলা ফরিদ কাজীর অফিসে তার নাবালক ছেলের নাবালিকা মেয়ের সঙ্গে বিবাহ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে! ওখানকার স্থানীয় কয়েকজন একই কথা বললেও পরে ফরিদ কাজীর সঙ্গে আলাপকালে বিবাহ কার্যক্রমের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন ছেলের বাবা ছেলে ও মেয়েকে সহ নিয়ে তার অফিসে আসেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক না থাকায় বিবাহ ও কাবিন না করিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেন বলে সাংবাদিকদের তিনি জানান। উক্ত গ্রামের ওয়ার্ড মেম্বার নাসির উদ্দিন থেকে বিষয়টি জানতে চাইলে বলেন এ ব্যাপারে তিনি অবগত নন । কাজীর বলার ভিত্তিতে এখন জনমনে প্রশ্ন উঠেছে বিয়ে ছাড়া কিভাবে নাবালক ও নাবালিকা একই সাথে বসবাস করছে । কিশোর গ্যাং ও তার সহযোগী বাল্যবিবাহ সমর্থনকারী দালালরা হলেন,১। রফিক মিয়ার ছেলে নাসির (৩০), ২। সেনটু মিয়ার ছেলে জুয়েল (২৭), অফিক মিয়া (৫০)।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান, কিছু অসৎ জনপ্রতিনিধিদের কারণে জন্মনিবন্ধন পরিবর্তন করে এসব বিবাহ সংঘঠিত হচ্ছে। কতিপয় ম্যারেজ রেজিস্টার, কাজী ও পুরহীত মোটা অংকের টাকার বিনিময় সরকারি আইন উপেক্ষা করে এসব বাল্যবিবাহের কাজে সহযোগিতা করছেন। এর সাথে রাজনৈতিক নেতাদেরও হস্তক্ষেপ রয়েছে। যার ফলে দিন দিন এই বিবাহ বেড়েই চলেছে। এলাকার অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় এই ধরনের বিয়ে ঘটেই চলেছে। আবার অবৈধ কাগজ তৈরি করে ও নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে ঘোষণা হচ্ছে। যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটাই তাদের কঠোর আইনের আওতাই আনলে অনেকটাই বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে দাবি করছেন এলাকাবাসী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *