ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
২২ বছর যাবত অফিস সহকারি পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় ওই পদে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার যোগসাজসে অন্য একজনকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার কামাত আঙ্গারিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার সাইদুর রহমান এর বিরুদ্ধে। সোমবার (২২ এপ্রিল) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী অফিস সহকারি সফিয়ার রহমান।
অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, সর্বশেষ বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী দাখিল মাদ্রাসার ক্ষেত্রে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর (এসিও) একটি পদ রয়েছে। ভূরুঙ্গামারী উপজেলার কামাত আঙ্গারীয়া দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী পদে ২০০২ সালে (ইনডেক্স ২৬৯২৩৩২) নিয়োগ পান মোঃ সফিয়ার রহমান এবং ২০১৪ সালের জুলাই মাসে উচ্চতর স্কেল প্রাপ্ত হন। উক্ত পদে প্রথম এমপিও কপিতে পদবি ছিলো টাইপিষ্ট কাম ক্লার্ক (সিটি)। সেই থেকে তিনি ওই পদে কর্মরত আছেন। পরবর্তীতে সিটি পদটি নামকরণ সংশোধন করে এসিও করা হয় এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানদের তা সংশোধন করার নির্দেশ দেয়া হয়।
কিন্তু প্রতিষ্ঠান প্রধান তা সংশোধন না করে চলতি বছরের গত জানুয়ারি এমপিও সীটে সফিয়ার রহমানকে এবতেদায়ী জুনিয়র শিক্ষক (ইবি-টি) দেখিয়ে গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে উক্ত পদে (এসিও) মোঃ খালেদুজ্জামান নামের একজনকে নিয়োগ দেন। যার ইনডেক্স (গ০০৫৪১৮০), এমপিও ভুক্তির তারিখ মার্চ, ২০২৪ইং। এ ঘটনা প্রকাশ হলে এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং বিষয়টি তদন্তের দাবি করে সফিয়ার রহমান বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেন।
মাদ্রাসা সুপার সাইদুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন, কাজ করতে গেলে ভুল হতেই পারে। এটা নিয়ে এতো খোঁচাখুঁচির কি আছে? সোমবার (২২ এপ্রিল) এটা নিয়ে ইউএনও স্যারের সাথে বৈঠক হয়েছে। আমাকে সংশোধনীর জন্য এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে। একি পদে দুইজনের নিয়োগ কি ভাবে সম্ভব এমন প্রশ্নের জবাব দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশ মোতাবেক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি অন্যায় হয়েছে। এবিষয়ে মাদরাসা সুপারের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে।
এখানে উল্লেখ্য গত ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের, ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত ঘটনায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমানকে (চলতি দায়িত্ব) দায়িত্ব অবহেলার কারনে সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর (২)(খ)(আ) অনুসারে ২২ সেপ্টেম্বর-২২ তারিখে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এদিকে গত ১৯ মার্চ-২০২৩ তারিখে উপজেলার ২১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গণ ঐ শিক্ষা কর্মকর্তার বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করে তাকে এ উপজেলায় পুনরায় দায়িত্ব প্রদান না করার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে মহা পরিচালক বরাবর আবেদন করেন। কিন্তু এসব অভিযোগের তোয়াক্কা না করে সাম্প্রতি রহস্যজনক ভাবে তার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে পুনরায় এ উপজেলায় দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম ফেরদৌস জানান, এব্যাপারে সকল পক্ষকে ডেকে বিষয়টি দ্রুত সংশোধন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *