আজ থেকে প্রায় ৮ বছর আগে মাকে হারিয়ে এদিক-ওদিক একাই খুঁজে ফিরছেন নোয়াখালী সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আদদ্বীন ইসলাম। তিনি যখন তার মা শিল্পী আক্তারকে হারান তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। নিখোঁজের পর থেকে তিনি তার মাকে খুঁজতে তার সঙ্গে পরিবারের আর কাউকে পাচ্ছেন না।

নিজের অসহায়ত্বের বর্ণনা দিয়ে আদদ্বীন বলেন, গ্রীস্মকালীন ছুটিতে নোয়াখালী থেকে (২০১৪ সালের ১৩ জানুয়ারি) মা মামাদের বাড়ি বেড়াতে একাই রওয়ানা হন। পরে কয়েকদিন ঢাকাতে মামার বাসায় অবস্থান করে ময়মনসিংহে নানার বাড়ি যান। ১০-১৫ দিন পর শুনি, মা নানার বাড়ি থেকে কোনো এক কাজে বের হয়ে আর ফেরেননি। সেসময় তার কাছে কোনো মোবাইল ফোন না থাকায় তার অবস্থান সম্পর্কেও আর জানা যায়নি।

আদদ্বীন ইসলাম বর্তমানে নোয়াখালী সরকারি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করছেন। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার চাটখিলে। সেখানেই তিনি মল্লিকার দিঘীর পাড় ফাজিল মাদ্রাসা থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাগ্রহণ করেন। এসময়ই তার মাকে হারান তিনি। আদদ্বীনের ছোট-বড় আরও দুই বোন রয়েছে।

আদদ্বীন যখন তার মাকে হারান তখন তারা বাবা হাবিবুর রহমান প্রবাসে ছিলেন। তাই স্বামী হিসেবে তিনি স্ত্রীর সেভাবে সন্ধানের সুযোগ পাননি। কিন্তু দেশে আদদ্বীনের যে মামারা রয়েছেন তিনি তাদের কাছেও সেভাবে তার মাকে খুঁজে পেতে সমর্থন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। নিখোঁজের প্রথম কয়েকদিন খুঁজে না পাওয়া গেলে মামারা আদদ্বীনকে জানায় তারা মাকে তারা খুঁজেছেন, কিন্তু কোথাও পাচ্ছেন না।

আদদ্বীন বলেন, আমার মামাদের যখনই মায়ের কথা বলতাম তারা বলতো আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু খুঁজে পাইনি। একমাত্র আল্লাহই ভালো জানে তার সাথে কি হয়েছে। আর তখন এ ব্যাপারে থানায় কোনো জিডি বা পত্রিকার খবরও ছাপানো হয়নি।

তার মায়ের পুরো নাম শিল্পি আক্তার। তার (শিল্পি আক্তার) বাবার নাম সুরুজ আলী এবং মায়ের নাম জাহানারা বেগম। শিল্পিদের বাড়ি নেত্রকোনার শিবপ্রসাদপুরে। নিখোঁজের সময় তার বয়স হয়েছিল আনুমানিক ৩৫ বছর। উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। গায়ের রঙ শ্যামলা। শরীরের গঠন মোটাও না আবার চিকন ও না, মাঝামাঝি।

আদদ্বীন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকে শুরু করে স্বশরীরেও বিভিন্ন জায়গায় তার মায়ের সন্ধান করে বেড়াচ্ছেন। সম্প্রতি নানার বাড়ির ময়মনসিংহে তার মায়ের মত দেখতে একজনের সন্ধানও পেয়েছেন তিনি। সেখানে কয়েকদিন অবস্থানের পর তিনি নিশ্চিত হন ওই নারী তার মা নন। তবে কেউ কেউ বলেছেন তারা কয়েকবছর আগে আদদ্বীনের মাকে সেখানে দেখেছেন।

আদদ্বীনের ভাষায় ‘‘সবার একি কথা মা বেঁচে নেই, আর যদি বেঁচে থাকতেন অবশ্যই আমাদের কাছে আসতেন। কিন্তু আমার মন বলে মা এখনো বেঁচে আছেন। আর ইনশাআল্লাহ মায়ের খোঁজ পাবোই একদিন। তিনি আমার কাছে ফিরবেন।’’ ছবিতে দেখে কোনো পাঠক তার মায়ের সন্ধান পেলে আদদ্বীনের পরিবারের পক্ষ থেকে যোগাযোগের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *