আসমাউল মুত্তাকিনঃ

একটি বিজয়, একটি দেশ । আমার সোনার বাংলাদেশ । স্বাধীনতার আনন্দে উদ্ভাসিত হয়েছে পুরো জাতি । স্বাধীনতার গুরুত্ব অতি ব্যাপক। মাতৃভূমি বাংলাদেশকে একটি বিজয় লাভের জন্য স্বাধীন করতে হয়েছে। লাখো তাজা প্রাণ ও আরও কত কিছু ত্যাগ করতে হয়েছে এই জাতিকে। তেমনি পেয়েছি আমাদের এই মাতৃভূমি । ইসলাম স্বাধীনতাকে যেমন গুরুত্ব দিয়েছে, তেমনি দেশপ্রেম ও দেশাত্মবোধকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হুব্বুল ওয়াত্বানে মিনাল ঈমান অর্থাৎ দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ।’

নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেশপ্রেম কেমন ছিল? আর আমাদের দেশপ্রেমই বা কেমন হওয়া উচিত?

নিজ জন্মভূমির প্রতি বিশ্বনবীর যে ভালোবাসা ছিল, তা অসাধারণ । তিনি পবিত্র নগরী মক্কা মুকাররমকে হৃদয়ের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে ভালোবাসতেন। ইসলামের দুশমন প্রতিপক্ষরা যখন তাঁকে চরম হিংস্রতা ও নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে মক্কা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করে তখন তিনি পেছন ফিরে প্রিয় মাতৃভূমির দিকে তাকাচ্ছিলেন আর বলেছিলেন-

‘(হে মক্কা!) ভূখণ্ড হিসেবে তুমি কতই না উত্তম, আমার কাছে তুমি কতই না প্রিয়। যদি আমার স্বজাতি আমাকে বের করে না দিত তবে কিছুতেই আমি অন্যত্র চলে যেতাম না।’ (তিরমিজি)

তার নিজ জন্মভূমির প্রতি এই ভালোবাসা স্থাপন আমাদের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত ও অনুকরণীয় আদর্শ।

জানা-অজানা অনেক মুসলিম খ্যাতিমান ব্যক্তিরা তাদের দেশ, জাতি, ভাষা ও ধর্মের জন্য যুগে যুগে জীবন দিয়েছেন যা ইসলামের ইতিহাস সাক্ষী দেয় । তারা তাদের দেশ, ভাষা ও জাতিকে নিজ সন্তান ও পরিবারের মতো নিঃস্বার্থ ভালোবাসতেন। দেশ ও আদর্শকে ভালবাসতে গিয়ে অনেকেই শাহাদাত বরণ করেছেন। অনেক আবার স্বদেশ ও স্বজাতির অধিকার আদায়ে সপরিবারে শহিদ হয়েছেন। যুগে যুগে জীবন দিয়েছেন হজরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ, মুহম্মদ বিন কাসিম, সাইয়্যেদ আহমদ শহিদ, ইসমাঈল শহিদ, মীর নিসার আলি তিতুমির, টিপু সুলতানসহ অসংখ্য মুসলিম নেতা উল্লেখযোগ্য।

এ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই নিরস্ত্র বাঙালি জাতি পাকিস্তানি জুলুম-শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ১৯৭১ সালে । অস্ত্রের মুখে বুক পেতে দিয়েছিলাম আমরা । ধর্ম-বর্ণ, জাতিগোষ্ঠী নির্বিশেষে এ দেশের সব জনগণের সার্বিক প্রচেষ্টায় অর্জিত হয়েছে মহান স্বাধীনতা। পেয়েছেন আত্মত্যাগ ও ভালোবাসার বাংলাদেশ। গেয়েছেন মুক্তির গান। তারপর থেকেই এ দেশ, বাংলাদেশ; আমাদের ভালোবাসার গোলাপ ও গৌরবের মিনার।

সুতরাং ইসলামে বিশ্বাসী মুসলমানই নয় বরং দেশের প্রতি সব নাগরিকের ভালোবাসা থাকা আবশ্যক এই দেশের প্রতি । তবে ইসলামিক স্কলার ও ব্যক্তিরা কুরআন-সন্নাহ থেকেও পেয়েছেন দেশপ্রেমের বিশেষ অনুপ্রেরণা। কেননা ইসলামে রয়েছে দেশপ্রেমের অত্যধিক গুরুত্ব। আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
– ‘তোমরা আল্লাহ ও রসুলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের ন্যায়পরায়ণ শাসকের আদেশ মেনে চল।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৫৯)
– ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পার। আর তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মর্যাদাবান সে যে আল্লাহকে সর্বাধিক ভয় করে।’ (সুরা হুজুরাত : আয়াত ১২)

– হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি খেদমতের নিয়তে রাসুলের সঙ্গে খায়বার অভিযানে গেলাম। অতপর যখন অভিযান শেষে বিশ্বনবি ফিরে এলেন, ওহুদ পাহাড় তাঁর দৃষ্টিগোচর হল। তিনি বললেন, এ পাহাড় আমাদের ভালোবাসে, আমরাও একে ভালোবাসি।’ (বুখারি) মদিনার নিকটবর্তী ওহুদের প্রতি এ ছিল বিশ্বনবীর ভালোবাসা।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নিজ দেশ ও জাতির প্রতি ভালোবাসার বন্ধন অটুট রাখা। স্বাধীনতা দিবসে এ ভালোবাসা ছড়িয়ে যাক একে অপরের মাঝে। দেশের কল্যাণে ভালোবাসার সঙ্গে সব কাজে সহযোগিতা করা। আর ধর্মীয় অনুশাসন মেনে, বিশ্বনবীর অনুসরণে দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনই হোক প্রতিটি মানুষের প্রকৃত দেশপ্রেম। আল্লাহ-পাক আমাদেরকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখকঃ শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *