তৈয়বুর রহমান,সিনিয়র রিপোর্টার,কুড়িগ্রামঃ
“ধামশ্রেনী ইন্দিরার পাড় বালিকা দাখিল মাদরাসায়” ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন সম্পন্ন না করে (ভারপ্রাপ্ত) সুপার খোরশেদ আলম ভুয়া দাতা ও সংরক্ষিত মহিলা অভিভাবক সদস্য অন্তর্ভুক্ত করে গোপনে জাল কাগজ পত্র দিয়ে বোর্ড থেকে কমিটি অনুমোদন করায় অভিভাবক মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, মাদ্রাসাটির ধুরন্ধর ঐ সুপার চারটি শূন্য পদে শিক্ষক/কর্মচারী নিয়োগে বাণিজ্য করতে নির্বাচন ছাড়াই কমিটি গঠনে কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে সীমাহীন দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেনী ইউনিয়নে অবস্থিত ঐ মাদ্রাসাটির ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় ৪ মাস আগে মাদ্রাসার (ভারপ্রাপ্ত) সুপার অভিভাবকদের খসড়া ও চুড়ান্ত ভোটার তালিকা নিয়মিত সভায় উপস্থাপন করেন। ভোটার তালিকায় বেশকিছু ভুয়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এর নাম কমিটির নজরে আসায় সভা চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুমোদন স্থগিত করেন। এ অবস্থায় ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।
এরপর মাদ্রাসার ( ভারপ্রাপ্ত) সুপার অত্যন্ত কৌশলে চলমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে রেজুলেশন খাতায় তার পূর্ব পরিকল্পিত খসড়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুমোদন দেখান। অনুসন্ধানে বিতর্কিত ওই ভোটার তালিকায় ভুয়া শিক্ষার্থী মোছাঃ আয়েশা সিদ্দিকা পিতাঃ মোঃ আব্দুল আজিজ, মাতা মোছাঃ ঝরনা বেগম,গ্রামঃ বাগচীর খামার। সে একই ইউনিয়নের বাগচীর খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর নিয়মিত ছাত্রী । সুরাইয়া আক্তার, পিতা সফিকুল ইসলাম, মাতা মোছাঃ জিন্নাহ বেগম, গ্রামঃ বাগচীর খামার। সে ধামশ্রেনী ইন্দিরার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত পাওয়া যায়। এই দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক কে ভুয়া কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এমন বিতর্কিত ভোটার তালিকা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের দপ্তরে জমা দিয়ে নির্বাচন-অনুষ্ঠানের আবেদন করেন দুর্নীতিবাজ ওই মাদ্রাসার সুপার। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার গত ২০ এপ্রিল ২০২২ তারিখ উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মোঃ নূরে-ই আলম সিদ্দিকীকে উল্লেখিত মাদ্রাসার নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। প্রিজাইডিং অফিসার দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে বিধি অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তফসিল ঘোষণা করেন এবং ঘোষিত তফসিল ব্যাপক প্রচারের জন্য মাদ্রাসার (ভারপ্রাপ্ত) সুপার মোঃ খোরশেদ আলমকে অনুরোধ করেন।
কিন্তু মাদ্রাসার (ভারপ্রাপ্ত) সুপার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপন রেখে ভূয়া কাগজ তৈরি করে তার পছন্দের কমিটি অনুমোদনের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। প্রিজাইডিং অফিসার ভোটগ্রহণের নির্ধারিত তারিখের দুই দিন আগে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে ঘোষিত তফশিল ব্যাপক প্রচার হয়নি মর্মে অবগত হন। নির্বাচন অনুষ্ঠানে সুপারের অসহযোগিতার কারণে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন নির্ধারিত তারিখ অনুষ্ঠান সমীচীন নয় বলে গত ৫ জুন ২০২২ তারিখ নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিত করে প্রিজাইডিং অফিসার উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত ভাবে জানান। এ অবস্থায় মাদ্রাসাটির অভিভাবক মহল পরবর্তী যেকোন দিন নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।
এ সুযোগে,ধুরন্ধর ওই সুপার মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি গঠনকল্পে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া কাগজপত্র, রেজুলেশন মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে দাখিল করেন। এরই প্রেক্ষিতে গত ১৩ জুন ২০২২ তারিখ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা ১০ সদস্য বিশিষ্ট নতুন ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদন দেন। যে কমিটিতে দুইজন ভুয়া অভিভাবক সদস্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিষয়টি অভিভাবক মহলে জানাজানি হলে এলাকায় চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
এদিকে ঘটনা জানার পর পরই অবৈধ কমিটি বাতিলের জন্য একজন অভিভাবক সদস্য নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করেন।
এ ব্যাপারে( ভারপ্রাপ্ত) সুপার মোঃ খোরশেদ আলম জানান, যা কিছু করেছি বৈধভাবেই করেছি
একাডেমিক সুপার ভাইজার ও নিয়োগপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার মো. নুরে-ই আলম সিদ্দিকীর সাথে এ প্রতিবেদককে কথা বললে তিনি বলেন, আমি স্বচ্ছ ভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতেই তফসিল স্থগিত করেছি। নির্বাচন না হতেই বোর্ড কিভাবে কমিটি অনুমোদন দিলো তা আমার বোধগম্য নয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহ মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সুপারের দূর্নীতির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমাদের অফিসের মাধ্যমে কোনো কাগজপত্র যায়নি, এসব ভুয়া কাগজ পত্র দাখিলের মাধ্যমে কমিটি অনুমোদন করানো কর্তৃপক্ষের সাথে প্রতারণার সামিল। যা কিনা ফৌজদারি অপরাধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *