রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ

গত ২০ জুন রাত ৮টার দিকে সুরুজ্জামানের একমাত্র ছেলে এরশাদকে খুন করে শিহাব এবং রাসেল নামের দুই খুনি। এরশাদের সাথে থাকা মাসুদকেও এলাপাথারী কুপিয়ে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায় তারা। অসহায় উপার্জনক্ষম বৃদ্ধ সুরুজ্জামান ছেলে হত্যার বিচারের আশায় নিভৃত্তে কষ্টে দিন পার করছে ৬ মাস যাবৎ। ঘুরে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন জনের দারে দারে। আজও গ্রেপ্তার হয়নি খুনিরা।

বিচারের দাবীতে এলাকাবাসীর তৎপরতায় মানববন্ধন, বেশকিছু অনলাইন পত্রিকাসহ প্রথম সারির বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজ হওয়ার পর মামলাটি সিআইডির হাতে চলে যায়। তারপরও অগ্রগতি নেই ওই হত্যা মামলার। নিদারুন কষ্টের বোঝা নিয়ে দিন যাচ্ছে পরিবারটির।

গত রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) সরেজমিনে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার খেয়ারচর এলাকায় গিয়ে দেখাগেছে, প্রায় সত্তর বছর বয়সী সুরুজ্জামানের পরিবারে রয়েছে তার স্ত্রী, মৃত এরশাদের স্ত্রী এবং মৃত এরশাদের দেড় বছর বয়সী একটি অবুঝ ছেলে সন্তান। এরশাদকে হত্যার পর আয়-রোজগারের বিকল্প পথ হারিয়ে রোগে-শোকে ভূগছে পরিবারটি। অপরদিকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে প্রায় চার মাস চিকিৎসার পর সুস্থ্য হয় মাসুদ রানা।

এ বিষয়ে খেয়ারচর এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, “এরশাদ হত্যার ৬ মাস পার হইছে। ঘাতক শিহাব ও রাসেল আজও গ্রেপ্তার হয় নাই। দ্রুত শিহাব ও রাসেলকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ফাঁসির দাবী করছি।”

আহত মাসুদের মা মহেলা বেগম অভিযোগ করে বলেন, “আমার ছেলে মাসুদসহ এরশাদ দুইজনে একসাথে ঢাকা যাইতেছিল। যাওয়া পথে দুইজনকেই ছুরি দিয়ে কোপাইছে। এরশাদ মারা গেছে, আল্লায় আমার ছেলেকে বাচাইছে। কয়েকদিন আগে সিআইডির লোক আইছিল। আইসা আমাদেরসহ মাসুদকে উল্টা-পাল্টা হুমকি দিছে, ভয় দেখাইছে। আমার ছেলে মাসুদ নাকি খুনের সাথে জড়িত।”

এ বিষয়ে সুরুজ্জামান সাংবাদিককে জানান, “আমার ছেলেকে খুন করার পর আমাকে শাজাহান, হায়দার মেম্বর থানায় ডাইকা নিয়া একটা কাগজে টিপ নিছে। ওই কাগজে কি লেখছে আমি জানি না। পরে শুনছি শুধু শিহাবের নামে মামলা হইছে। মামলার কাগজে অন্যজনের ফোন নম্বর দেওয়া হইছে। চক্রান্ত কইরা দোষীদের বাচানোর জন্য মামলা সাজাইছে শুধু শিহাবের নাম দিয়া। আসল অপরাধী যারা যুক্তি করছে তারাই। আমি জানি আমার পোলারে শিহাব, বিপাশা, রাসেল, বদিউজ্জামানসহ আরো কয়জনে যুক্তি কইরা মারছে। ৬ মাস পার হইছে কোন আসামী ধরা হয় নাই। ট্যাহা-পয়সা নাই তাই বিচার পাই না। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী করি তাগোরে যেন গ্রেপ্তার করে ফাঁসি দেওয়া হয়।”

বিষটি নিয়ে কথা হয় এরশাদ হত্যা মামলার কুড়িগ্রাম জেলা সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবু হোসাইনের সাথে। তিনি সাংবাদিককে জানান, “মামলাটি আমি ১০-১২দিন আগে হাতে পেয়ে তদন্তে গিয়েছিলাম। তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষ হলে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেয়া হবে।”

উল্লেখ্য, গত ২০ জুন রাত ৮ টার দিকে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার খেয়ারচর এলাকার এরশাদ আলী ও মাসুদ রানা কাজের উদ্দেশ্যে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দুরে নির্জন স্থানে গেলে অত পেতে থেকে শিহাব (১৮) ও রাসেল (২৮) তাদের ওপর অতর্কিত ভাবে হামলা চালায়। মারপিটের একপর্যায়ে ধারালো চাকু দিয়ে এরশাদের গলা এফোর ওফোর করে দেয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান এরশাদ। গুরুতর আহত হন মাসুদ রানা। তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে ঘাতকরা পালিয়ে যায়। পরে তাদের রৌমারী হাসপাতালে ভর্তি করালে এরশাদকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। আহত মাসুদ রানাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। মাসুদ রানা প্রায় চার মাস চিকিৎসা নিয়ে বাড়ী ফিরেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *