কবিতা-
শিখা অনির্বাণ
– নাজমুল হুদা পারভেজ
শেষ পর্ব
আমাকে দেবে মা সেই প্রদীপ্ত শিখা
যে শিখা তুমি দিয়েছিলে –
ব্রিটিশ বিরোধী অগ্নিপুরুষদের হাতে
১৭৮২ সালে যে শিখা তুমি তুলে দিয়ে ছিলে
সিলেটের হাদা মিয়া আর মাদা মিয়ার হাতে।
তোমার সেই দীপ্ত-মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে-
যে দু’ ভাই সর্ব প্রথম ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে
অস্ত্র তুলে নিয়ে ছিল হাতে।
তোমাকে ভালোবাসার মূল্য দিতে গিয়ে ব্রিটিশ
কালেক্টর রবার্ট লিন্ডসের গুলিতে নিহত হয়েছিল তারা।
কিন্তু তোমার দীপ শিখা নেভাতে পারেনি ব্রিটিশরা।
আবারও সেই দীপ শিখা হাতে জ্বলে উঠেছিল-
কমল নাথ তিওয়ারী, অরুণা আসফ আলী,
অরবিন্দ ঘোষ, চন্দ্র শেখর আজাদ,ক্ষুদিরাম বসু,
জতীন্দ্র নাথ দাস, সুভাস চন্দ্র বসু,
মোহনদাস করম চাঁদ গান্ধী,হাকিম আজমল খাঁ,
মওলানা শরিয়াতুল্লাহ, মওলানা আজাদ,
ফকির মজনু শাহসহ তিতুমীরা।
রক্তের গঙ্গা বইয়ে দিয়ে-
অবশেষে ওরা ব্রিটিশ তাড়িয়ে ছিল
তোমার বুক থেকে।

আমি সেই শিখার কথা বলছি মা-
যখন তোমার মুখের ভাষা
কেড়ে নিতে চেয়েছিল পাকিস্তানীরা।
তখন যে শিখা তুমি জ্বালিয়ে ছিলে,
বরকত, জব্বার, রফিক, সালাম,
আউয়াল অহিউল্লাসহ এক জন
অজ্ঞাত বালকের চোখে,
আমি সে শিখা চাই মা।

যে শিখা তুমি জ্বালিয়েছিলে,
মাত্র ১২ বছর বয়সী রংপুরের শঙ্কু সমজদারের চোখে।্
যে বালকটি ১৯৭০এর তিন মার্চ অসহযোগ
আন্দোলনের বিক্ষোভে, স্বাধীনতা আন্দোলনের-
প্রথম শহীদ হয়েছিল পাকিস্তানীদের গুলিতে।্
যার রক্তে শপথ নিয়ে শুরু হয়েছিল স্বাধীনতা যুদ্ধ।
কোটি কোটি বাঙ্গালীর চোখে-
সেদিন যে অগ্নিশিখা তুমি জ্বালিয়ে দিয়েছিলে,
যে অগ্নি শিখায় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে পাকিস্তানীরা,
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে যে শিখা আজ অনির্বাণ,
আমাকে সেই শিখা দাও মা।

ঘুমিয়ে থাকা ছাত্র-জনতার চোখের ঘুম ভাঙ্গাতে হবে-
এখন সময় বয়ে যায় ঘুম ভাঙানোর,
আমি আমার প্রেমিকার চোখে জ্বালাবো সে শিখা
শুধু আমাকে নয়, দেশকে ভালোবেসে-
সে আমার পাশে এসে দাঁড়াবে, হাতে হাত ধরে-
৭১’র কিংবা ৯০’র মতো,
আমার সাথে নামবে রাজপথে, আবার আন্দোলন হবে।
এ আন্দোলন সমাজ সংস্কারের,
এ আন্দোলন সন্ত্রাস, অন্যায়,দুর্নীতি আর-
নারী-শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে।
এ আন্দোলন হবে, মাদক, ক্যাসিনো,গুম ,হত্যা
জঙ্গিবাদ আর অপহরণের বিরুদ্ধে।
এ আন্দোলন হবে, নিজেকে বদলানোর আন্দোলন।
এ আন্দোলন হবে , সুস্থ সংস্কৃতি ও আমাদের কাক্সিক্ষত
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন আর-
জাতির জনকের স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।

সমাপ্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *