হুমায়ুন কবির সূর্য্য, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ঃ
কুষ্টিয়া সদর থানার সাব-রেজিষ্টার নুর মোহাম্মদ শাহ্ (৫৫) কে নিশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে তার পরিবার। শনিবার সকালে তার গ্রামের বাড়ী কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ডাংরার হাটে নিজস্ব বাসভবণে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এসময় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন তার চাচা শাহ মো: মোস্তাফিজুর রহমান।
গত ৮ অক্টোবর কুষ্টিয়া শহরের বাবর আলী রোড়ের ভাড়া বাসায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় নুর মোহাম্মদ শাহ্ এর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। পেশাগত কাজে প্রতিপক্ষরা সুবিধা করতে না পেরে তাকে নিশংসভাবে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই কামরুজ্জামান শাহ পরদিন কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জানা যায়, গত ৮ অক্টোবর কুষ্টিয়া সদর থানার সাব রেজিষ্টার নুর মোহাম্মদ শাহ রাত ৯টা ৫১ মিনিটে বাবর রোডের ভাড়া বাসায় তার অফিসের পিয়ন ফারুক রাতের খাবারের জন্য কলিং বেল বাঁজায়। তিনি দরজা খুলে দিলে পিয়নের বদলে ৪জন যুবক ঘরে প্রবেশ করে প্রথমে তার মুখ গামছা দিয়ে এবং হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। এরপর তারা টাকা-পয়সা খুঁজে না পেয়ে তাকে রান্না ঘরে নিয়ে গিয়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। সেখানেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন সাব-রেজিষ্টার নুর মোহাম্মদ শাহ।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় সিসি ফুটেজের সূত্র ধরে ১৩ অক্টোবর কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এস.এম তানভীর আরাফাত পিপিএম ৪জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে মর্মে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিতভাবে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন। পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে প্রথমে সাব রেজিষ্টার নুর মোহাম্মদ শাহ’র পিয়ন ফারুক হোসেনকে আটক করে। এরপর তার দেয়া তথ্য ধরে পরদিন কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকার গোলাম সরোয়ারের ছেলে ও মিরপুর সাব রেজিষ্টার অফিসের পিয়ন কামালকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর এই দুইজনের দেয়া তথ্য ধরে রেজিষ্ট্রি অফিসের নকল নবীশ কুমারখালী উপজেলার সাইদুল (৩৫) ও একই উপজেলার মশিউল আলম বাবুল (৪০) নামে অপর এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে। এরপর তাদেরকে নিয়ে হত্যাকান্ডে ব্যবহ্নত রক্তমাখা ছুরি, একটি খেলনা পিস্তল, দুটি গামছা, রশি ও একটি ব্যাগ উদ্ধার করে পুলিশ। রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় তাকে হত্যা করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নুর মোহাম্মদ শাহ’র গ্রামের বাড়ী কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাটে হলেও তিনি স্ত্রী ও ২ সন্তানকে নিয়ে ঢাকার শ্যামলীতে বসবাস করতেন। সাপ্তাহিক ছুটিতে তিনি ঢাকায় যাতায়াত করতেন। প্রায় ১৫ দিন পূর্ব থেকেই ওই বাসায় হানা দেয়ার ছক কষে তারই অফিসের পিয়ন ও অন্যান্যরা।
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সাব-রেজিষ্টার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জিয়াউল হক, সাধারণ সম্পাদক কাইসার আহমেদ, রাজারহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি সেকেন্দার আলী বাবলু, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামসহ জেলা ও উপজেলার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *