কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃঃ
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার ধরনীবাড়ি দক্ষিণ মধুপুর ইউনিয়নের যাদুপোদ্দার গ্রামে তাস খেলা ভিডিও করাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দের জেরে মুকুল মিয়া (৪২) নামক এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। নিহত মুকুল মিয়া যাদুপোদ্দার গ্রামের আনসার আলীর পুত্র। নিহতের বাবা এবং বা উভয়েই শয্যাশায়ী।

ঘটনাটির সূত্রপাত ঘটে শনিবার (৯ মে) স্থানীয় খেলার মাঠে ক্রিকেট খেলার সময় একটি টেনিস বলকে কেন্দ্র করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেল ৩.৩০ ঘটিকায় স্থানীয় মাঠে ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং পাশেই এক কোনায় বেশ কয়েকজন মিলে তাস খেলছিলো। মুকুল মিয়া ক্রিকেট খেলা দেখতেছিলেন। এমন সময় ক্রিকেট খেলার বলটি তাসের আসরে পরে যাওয়ায় ফারুক নামের এক যুবক টেনিস বলটি পুকুরে ফেলে দেয়।

এর পর ফিল্ডিংরত মিথুন মিয়া বল চাইতে এলে তাস খেলোয়ারদের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয় এবং মিথুন তার মুঠো ফোন দিয়ে তাস খেলার আসর ভিডিও ধারন করে। ভিডিও ধারন করার সময় উক্ত ভিডিওতে দর্শক মুকুল মিয়ারও ছবি চলে যাওয়ায় মুকুল মিয়া ভিডিওটি ডিলিট করতে বলে। ভিডিও ডিলিট করতে বলায় তাদের দু‘জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় এবং উভয়েই বাড়ি চলে যায়।

এর পরদিন রবিবার (১০ মে) মুকুল মিয়া উলিপুর বাজার হতে বাজার করে ফিরে আসার সময় মিথুন মিয়ার (২১) বাড়ির সামনে আসার সাথে সাথেই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ওতপেতে থাকা মিথুন, তার পিতা মো: শাহাবুদ্দিন মাষ্টার (যাদুপোদ্দার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক) ও শাহাবুদ্দিন মাষ্টারের আরো দুই ছেলে মারুফ (১৯), মিশ্র (২৭) মুকুল লাঠি সোটা দিয়ে মার শুরু করে।

খবর পেয়ে মুকুল মিয়ার স্ত্রী মোছা: বিউটি বেগম (৩৫) ও তার সন্তানেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে মুকুল মিয়াকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে আসে। মুকুল মিয়া ক্ষীপ্ত হলে এলাকাবাসী তাকে বুঝিয়ে বলে যে, আমরা মিমাংশা করব।

এর পর একই দিন মুকুল মিয়া একই গ্রামের আ: সালামের পুকুরে গোসল করতে গেলে আবার শাহাবুদ্দিন ও তার তিন ছেলে মিলে বাঁশ, লাঠিসোটা দিয়ে পুকুরের পানিতে ফেলে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে মারতে থাকে। তার স্ত্রী সন্তান বাঁধা দিতে গেলে তাদেরও মারতে থাকে। এক পর্যায়ে মুকলের নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত ঝড়তে থাকে এবং তার স্ত্রীর মাথা ফেটে রক্ত বের হতে থাকে।

এর পর একই এলাকার মো: উমর ফারুক, ও মালেক মুন্সী তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় এবং তার স্ত্রীর মাথায় ৮ টি সেলাই করে। রাত ১ টার দিকে মুকুল মিয়ার শারিরীক অবস্থার অবনতি হয় এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে।

এ নিয়ে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী শাহাবুদ্দিন মাষ্টারসহ জড়িত সকলের ফাঁসির দাবিতে ফেটে পড়ে।

শাহাবুদ্দিন মাষ্টারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তার বাসায় গেলে দেখা যায় বাসার সকল জিনিস ভেঙ্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে ।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বললে তারা জানায়, রাতে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। আমরা এসময় শুধু শব্দ শুনেছিলাম। ভয়ে কেউ বাইরে বের হইনি। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বাসায় মানুষ নেই এবং সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে। কে এসব করল তারা কিছুই বলতে পারে নি।

উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোয়াজ্জেম হোসেনের সাথে কথা বললে, তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন এবং জানান, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুন একটা হৃদয় বিদারক ব্যাপার। মামলার প্রস্তুতি চলছে। আমরা ইতোমধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছি। লাশ ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে রিপোর্ট এলেই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর বাড়িঘর কে বা কাহারা ভাংচুর করেছে তারও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *