সংকলনেঃ প্রকৌশলী সরদার সায়িদ আহমেদ

একদা তুমি ছিলে বিশ্বের বৃহত্তম হীরার তৈরি মুকুট।আদ্যতে ওজন সাতশত তিরানব্বি ক্যারেট ইতিহাস বলে,
রাণী ভিক্টোরিয়া অষ্টাদশ শতাব্দীতে এর কলেবর কমিয়ে ফেলে ।তখন হীরার ওজন রয় একশত নয় ক্যারেট
বটে। কথিত আছে ভারতের অন্দ্রপ্রদেশের গোলকণ্ডা খনিতে জন্ম এই হীরার ।ত্রোয়দশ শতাব্দীতে যার প্রথম
মালিক ছিলেন শিখ রাজা মালওয়া, ষোড়শ শতকের পানিপথের যুদ্ধের পর মোঘল সম্রাট আকবর আগ্রা দুর্গ
হতে এই মুকুট দখলে নিয়ে নাম দেন “বাবর হীরা”। ইতিহাস বলে সপ্তদশ ছাপ্পান্ন শতাব্দীতে মীর জুমলা এ
মুকুট উপহার দেন মোঘল সম্রাট শাহজাহানকে, তখনও নাম হয়নি কোহিনূর। এভাবে হীরার মুকুটটি মোঘল
সম্রাটদের দখলে থাকে প্রায় দুইশত বৎসর,মোঘল শেষ ও অপ্রিয় সম্রাট মোহাম্মদ শাহের শাসন আমল অবদি ।
অথর্ব মোঘল শেষ সম্রাটকে পরাজিত করে পারস্য সম্রাট নাদির শাহ্‌ ।অষ্টাদশ শতেকের মাঝা মাঝি দিল্লী থেকে
মুকুটি নিজ কব্জায় আনেন,পারস্য ভাষায় কোহিনূর অর্থ আলোময় পর্বত তাই এর নাম হয় কোহিনূর, গৌরবের
নিদর্শন স্বরূপ নাদির শাহ্‌ কোহিনূরকে পার্সিয়া বা ইরানে নিয়ে যান । নাদির শাহ্‌ হত্যা কাণ্ডের পর তার নাবালক
পৌত্র শাহ্‌ রুখ মির্জা । কোহিনূর হাতে পান, কিন্তু তার দুঃসময়ে সহযোগিতা করার কারনে
শাহ্‌ রুখ মুল্যবান কোহিনূর, নাদির শাহের এক সময়ের সাহসি জেনারেল আফগানিস্তানের শাসক আহামদ আবাদালী
কে উপহার দেন ফলে এটি চলে যায় আফগানিস্তান ।

আহামাদ আবাদালির তিরোধান সুত্রে তার পুত্র তিমুর, কোহিনূর হস্তগত করেন, তিমুরের মৃত্যুর পর তার তেইশ পুত্রের
মধ্যে ক্ষমতার বিবাদে খুনাখুনি শুরু হলে পুত্র জামান ও সুজা কোহিনূর মুকুট সহ লাহোরে পালিয়ে গিয়ে মহারাজা রণজিৎ
সিংহের আশ্রয় চান, রণজিৎ সুজার নিকট হতে উনবিংশ শতকের শুরুতে কোহিনূর নিজ দখলে নেন। উনবিংশ শতকের
মাঝামাঝি ব্রিটিশরা রণজিৎ পুত্র মহারাজা দুলিপ সিংহকে পরাজিত করেন এবং গভর্নর জেনারেল লর্ড ডাল হৌসি কৌশলে
কোহিনূর দখল করে ব্রিটেনে পাঠাবার ব্যবস্থা করা হয়,আঠারো শত পঞ্চাশের ৩রা জুলাই কোহিনূর বাকিংহাম রাজ প্রাসাদে
রাণী ভিক্টোরিয়াকে প্রদান করা হয় ।এরপর হতে অদ্যাবদি কোহিনূর বাকিং হাম রাজপ্রাসাদের তত্ত্বাবধানে সংরক্ষিত আছে ।
অষ্টাদশ পঞ্চাশ শতকে এটি লন্ডনে আয়োজিত এক মেলায় জনসাধারনকে দেখানো হয় ।প্রথমে রাণী ভিক্টোরিয়া কোহিনূর
গহনা রূপে মাঝে মাঝে ব্যবহার করতেন পরে একে একে ১৯০২ এ রাণী আলেকজান্দ্রা, ১৯১১ এ রাণী মেরী এবং ১৯৩৭
সনে রাণী এলিজাবেথ এর অভিষেক অনুষ্ঠানে উহা ব্যবহার করা হয় । ১৯৪৭ সনে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের পর
কোহিনূর ফেরত চেয়ে উভয় দেশের পক্ষ হতে ব্রিটেন কে আহ্বান জানালে তারা তা নাকচ করে দেন, এখন এটিকে ব্রিটিশ
ঐতিহ্যের অংশ হিসাবে টাওয়ার অফ লন্ডনে সংরক্ষন করা হচ্ছে। বর্তমানে এটির বাজার মূল্য ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার
মনে করা হয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *