এস.এম.রকি, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
শিক্ষা প্রসারে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রে হিসেবে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় স্মরণীয় ভূমিকা রেখেছেন প্রয়াত হাজী জোনাব আলী শাহ। তিনি যেমন একজন শিক্ষানুরাগী মানুষ ছিলেন তেমনি ছিলেন একজন সমাজসেবক। এলাকার মানুষের বিভিন্ন সুখে-দুঃখে তিনি পাশে থাকতেন সকলের। যা আজও প্রশংসায় ভাসছে।

পিছিয়ে পড়া এই এলাকায় শিক্ষা প্রসারে বিশেষ অবদান রাখা সহজ সরল ব্যক্তি হাজী জোনাব আলী শাহয়ের বাবার নাম মরহুম মহির উদ্দিন শাহ ও মাতা মরহুমা দেবীরন নেছা। তিনি উপজেলার গোয়ালডিহি ইউনিয়নের সম্ভ্রান্ত মুসলিম শাহ পরিবারে ১৯৩৫ সালের ৬মার্চ জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০১৩ সালের ৯ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। প্রয়াত জনাব আলী শাহ ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রহমান শাহয়ের চাচাতো ভাই।

প্রায় ৮০ বছরের জীবদ্দশায় তিনি পাচঁটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। যা আজও শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

জানা যায়, স্বাধীনতার পুর্ব মূহুর্ত থেকে শুরু স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে গ্রামাঞ্চলের মানুষ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। সেই চিন্তা থেকে অন্ধকার থেকে আলোর জন্য তৎকালিন সময়ে জ্ঞান পিপাসু ও গুণী এই ব্যক্তি গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার আলো প্রসারের লক্ষ্যে নিজের মেধা, শ্রম এবং অর্থ ব্যয় করে বালিকা স্কুল, মাদ্রাসা, এতিমখানা এবং দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

জানা যায়, ব্যক্তি জীবনের মাঝামাঝি সময়ে এসে স্বাধীনতা যুদ্ধে জোনাব আলী শাহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য সহযোগীতার পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ নারীদের শিক্ষার আলো দানের জন্য ১৯৯২ সালে নিজ এলাকায় “গোয়ালডিহি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়” নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। স্কুলের সার্বিক উন্নয়নের জন্য তৎকালীন সময়ে তিনি ১,০০০০০ (এক লক্ষ) টাকা স্কুলে প্রদান করেন যা ঐ সময়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে সাবেক সাংসদ ও হুইপ মিজানুর রহমান মানু স্কুলের এমপিওভুক্তি ও সার্বিক উন্নয়নে সহযোগিতা করেন। সময়ের পরিক্রমায় বর্তমান সাংসদ আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সহায়তায় বিদ্যালয়টি পেয়েছে চারতাল আধুনিক ভবন। এতে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে প্রয়াত জনাব আলী শাহ ও গোয়ালডিহি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। শুধু তাই নয় ১৯৭৫ সালে পশ্চিম গোয়ালডিহি সেন্টারডাঙ্গা রেজিঃ বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন যা এখন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একই ক্যাম্পাসে মহির উদ্দিন শাহ হাফেজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও গোলাম রহমান শাহ সিনিয়র (আলিম) মাদরাসায় দাতা সদস্য হিসেবে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। পাশাপাশি হাজী জনাব আলী শাহ-আছিয়া সোশাল ডেভলোপমেন্ট অর্গানাইজেশন নামে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদানের সাথে সামজিক ও মানবিক কাজে ভুমিকা রাখছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রী ডা.দীপু মণির গৃহীত উদ্যোগের অংশ হিসেবে শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি ও নিজ উদ্যোগে তৈরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তথ্য হিসেবে প্রয়াত হাজী জনাব আলী শাহয়ের প্রয়োজনীয় তথ্য ও প্রমাণাদি জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং শিক্ষা বিভাগের মাধ্যমে প্রেরণ করলেও এখনও লিখিত ভাবে স্বীকৃতি মিলে নাই।

তাঁর পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রয়াত জনাব আলী শাহয়ের স্বপ্ন ছিলো, যদি কখনও বিদ্যালয়ে চারতলা ভবন তাহলে তিনি বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামালের নামে তিনি ওই ভবনের নামকরণ করবেন। পরবর্তীতে ২০২০-২১ সময়ে ওই বিদ্যালয়ে চারতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতায় আজও তা সম্ভব হয় নাই। আর নারী শিক্ষায় অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান গোয়ালডিহি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে মরহুম জোনাব আলী শাহ এর চাওয়া ছিলো একটি মডেল মহিলা আদর্শ কলেজ কিন্তু সেটি দেখে যেতে পারেন নি। তাই এটিকে কলেজে রুপান্তর করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি’র সুদৃষ্টি কামনা করেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকার সুধীসমাজ।

গোয়ালডিহি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও হাজী জোনাব আলী শাহয়ের বড় ছেলে শাহ মোঃ আফজাল হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বাবার অনুপ্রেরণায় তিনি, তার ছোট ভাই, চাচা-ভাতিজা, চার ছেলে এবং দৌহিত্র সহ জমি দান করে দাতা সদস্য হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরী অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। তিনি আরো বলেন, তাঁর বাবার অসমাপ্ত স্বপ্ন ও কাজগুলো পূূরণে সংশ্লিষ্ট সবার সুদৃষ্টি ও সহায়তা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *