নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
দেশব্যাপী মাদকের জন্য বিখ্যাত উপজেলা হিসেবে পরিচিত গোদাগাড়ী। বর্ডার এলাকা হওয়ায় সহজেই মেলে মাদকদ্রব্য। চোখ মেললেই অলিতে-গলিতে মাদকের খুচরা ও পাইকারী আখড়ার দেখা মেলে। নিষিদ্ধ এই ব্যবসায় এসে কেউ হয়েছেন কোটিপতি আবার কেউ ফকির।
বিভিন্ন সময় প্রশাসনের অভিযান চললেও নির্মূল হয়নি মাদক। কালো টাকার জালে আটকাও পড়েছে প্রশাসন। মাঝি থেকে কোটিপতি, মুচি,শসা ব্যবসায়ী,লবন বিক্রেতা,বাদাম বিক্রেতা এবং সব্জি বিক্রেতাও হয়েছেন কোটিপতি। এসব ব্যবসায়ীদের অগাধ টাকার কাছে হেরেও গেছে প্রশাসন। চুনোপুঁটিদের পাকড়াও করলেও শীর্ষ ব্যবসায়ীরা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। শতাধিক মাদক কারবারীর তালিকা রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।নামমাত্র তালিকা ভূক্তি হলেও প্রকাশ্যে চলেন তারা।
সম্প্রতি অনুসন্ধানে দেখা যায়, গোদাগাড়ী উপজেলার সাহাব্দিপুর এলাকার একটি পরিত্যক্ত ভাটায় জুয়া এবং মাদকের ছড়াছড়ি। ভাটার কর্মচারীদের আবাস শুন্য হওয়ায় সেখানে নিয়মিত বসছে জুয়ার আসর। টাকা হারজিতের খেলায় মেতেছেন যুবক, তরুন ও বয়স্করাও।জুয়া পরিচালনা করছেন মৃত লিয়াকত আলীর ছেলে রাশিদুল ও মাহবুবের ছেলে সোহাগ। জুয়ার আসরে রাশিদুল হেরোইন ও অসিম নামের এক ব্যক্তি গাঁজা পরিবেশন করছেন বলেও জানা যায়। জুয়ায় প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকার হারজিত হয়। খেলায় কেউ নিঃস্ব হয়ে আবার কেউ পকেট ভর্তি করে ফেরেন বাড়িতে। এভাবে খেলা চলে প্রশাসনের নাকের ডগায়। এসব আসর থেকে মাসোয়ারা নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
এছাড়াও মাটিকাটা ইউনিয়নের উজানপাড়া এলাকায় মঞ্জিলের বাড়ির পেছনের আমবাগানেও চলে জুয়ার আসর।৷ এই আসরে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকার হারজিত হয়ে থাকে। বাইপাস এলাকার সেন্টু এবং কাঠালতলা এলাকার মনি, নবাব এবং মইদুল জুয়ার আসরে হেরোইন ও গাঁজা সরবরাহ করে থাকেন বলে জানা যায়। সেন্টু ও মইদুল সেখানে সুদহারে টাকাও দাদন দেন জুয়াড়ীদের।
প্রতিদিন বিকেল ৫ টায় উজান পাড়ায় খেলা শেষ করে স্থান পরিবর্তন করেন জুয়াড়ীরা। সন্ধ্যা ৭ টা থেকে আবার বেলডাঙ্গা স্থানে চলে জুয়ার আসর। চারিদিকে পাহারাদার রেখে দেদারসে চলে জুয়া ও মাদক কারবার।জানা যায় বেলডাঙ্গায় ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকার জুয়া খেলা হয় ভোর ৫ টা পর্যন্ত।
এলাকাবাসী বলছেন জুয়ার খপ্পরে পড়ে অনেক পরিবারই হয়েছেন নিঃস্ব। জড়িয়ে পড়ছেন মাদকের নেশায়। এভাবে চলতে থাকলে নতুন প্রজন্মও রসাতলে যাবে বলেও ধারণা করছেন অনেকেই। এসব জুয়াড়ি এবং মাদক কারবারিদের দ্বারা নারী লাঞ্চিতের ঘটনাও ঘটেছে সম্প্রতি। পার্শবর্তী সোনালী মুরগীর খামারে হামলার ঘটনাও ঘটেছে বলে জানান ভুক্তভোগী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন,কোন সৎ পুলিশ অফিসার অভিযানে এলেও আগেই খবর পৌছান পুলিশের পিক-আপের এক ড্রাইভার। তিনি নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে জুয়া ও মাদকের কারবার চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেমতুলি পুলিশ ফাঁড়ির আইসি রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি বিষয় গুলো জানি না। আপনার নিকট থেকে জানতে পারলাম। খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
জানতে চাইলে গোদাগাড়ী থানার ওসি কামরুল বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। সার্কেল এসপি স্যারকে নিয়ে অভিযান করেছি কিন্তু তাদের ধরা যায়নি। জুয়াড়িরা চরের মধ্যে খোলা স্থানে জুয়া খেলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেলে আগেই পালিয়ে যায়। তারা বিভিন্ন স্থানে তাদের লোকজন রাখে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছার পূর্বেই তাদের নিকট খবর চলে যায়। তবুও তাদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখায়ের আলম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *