মনোয়ার হোসেন লিটন,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

যে প্রতিষ্ঠানে নিয়মের কোন বালাই নাই। সেই প্রতিষ্ঠানের নাম চর শৌলমারী ডিগ্রী কলেজ। স্বাক্ষর জালিয়াতি, বেসরকারি শিক্ষা নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুগুলি, মনগড়া শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, কলেজ ফান্ডের টাকা আত্মসাত এবং ম্যানেজিং কমিটির সাথে আঁতাত করে অবৈধভাবে নিয়োগ প্রদান সহ নানা অপকর্মের জন্ম দিয়ে এখন আলোচনার শীর্ষে কলেজ অধ্যক্ষ ফরহাদ আলী।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রামে রৌমারী উপজেলার চর শৌলমারী ডিগ্রি কলেজে সাবেক অধ্যক্ষ কুদরত উল্যাহ ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর অবসরে গেলে কলেজের প্রথম জ্যেষ্ঠ সহকারী অধ্যাপক আবুল হোসেন খান ও উপাধ্যক্ষ মতিয়ার রহমানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব না দিয়ে ফরহাদ হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা পরিপন্থী। (শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা ন্থুযায়ী নিয়মিত অধ্যক্ষ অবসরে গেলে ওই সময়ে উপাধ্যক্ষ/জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন)। সেসময় ফরহাদ আলীর আপন ভগ্নিপতি কলেজের সভাপতি এবং আপন বড় ভাই হিতৈষী সদস্য হওয়ায় ফরহাদ আলী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পান। এদিকে মতিয়ার রহমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দাবি করে ০৩/১০/২০১৭ রৌমার সহকারী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৮৯১৭।

ফরহাদ আলী দায়িত্ব থেকে ২৪/০৯/১৭ ও ২৫/০৯/২০১৭ ইং পত্রিকায় অধ্যক্ষ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। দৈনিক মানবজমিন ও দৈনিক কুড়িগ্রাম খবর ও সমকালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়।

যেহেতু ফরহাদ আলী নিজেই অধ্যক্ষ প্রার্থী সেহেতু ০৫/১০/২০১৭ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থেকে অব্যাহতির জন্য সভাপতি বরাবর আবেদন করেন। ওই আবেদন পত্রে সভাপতি আবেদন পত্র গ্রহণের ছিল না কোন স্বাক্ষর। ফরহাদ আলী অব্যাহতি প্রদানের আবেদন পত্র সভাপতিকে দিয়ে দুই দিন পর নিজেই অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগের জন্য আবেদন করেন। মতিয়ার রহমান ওই নিয়োগপত্র বাতিলের জন্য আবারও কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালত একটি মামলা দায়ের করেন। যায় মামলা নং-৩২১৮।

এমতাবস্থায় ফরহাদ আলী কলেজে অন্য এক শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকের কাছে ০৪/১১/২০১৭ইং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। ব্যাপক অনিয়ম ও মামলা জনিত কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৮ সালের ০৩ জানুয়ারি নিয়োগের উপর স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিতাদেশ থাকলেও ২০১৮ সালের ২৯ শে সেপ্টেম্বর নিয়োগ বোর্ড গঠনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাগিতাদেশ থাকার কারণে ২৭/০৯/২০১৮ ইং তারিখে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করেন। ফরহাদ আলী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে না পারায় আবারও ১৯/০৮/২০১৮ইং তারিখ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৯ সালের ১২ই নভেম্বর ফরহাদ আলী একই কলেজের শিক্ষক খন্দকার ফকরুল ইসলামের কাছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব অর্পণ করেন। ফকরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকাকালীন সেসময়কার সভাপতি কে,এম ফজলুল হক মন্ডল কলেজের নিজ নামীয় ব্যাংকের হিসাব নাম্বারের অনুস্বাক্ষর পরিবর্তনের রেজুলেশন করতে গড়িমসি করায় ফরহাদ আলী সভাপতির সাথে যোগসাজশে ২০/১১/২০১৯ এবং ০৩/১২/২০১৯ দু’দফায় দুই লক্ষ টাকা উত্তোলন করেন।

টাকা উত্তোলনের বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সভাপতির নিকট মৌখিক অভিযোগ করায় সভাপতি ১৬/০৫/২০২০ ইং করোনাকালীন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা অবস্থাায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে না জানিয়ে তালা ভেঙে কলেজে প্রবেশ করে খন্দকার ফকরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থেকে নীতিমালা বহিভূতভাবে সরিয়ে ফরহাদ আলীকে পুনরায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেন । খন্দকার ফকরুল ইসলাম অবৈধভাবে কলেজের টাকা উত্তোলন ও তালা ভেঙ্গে কলেজে প্রবেশের কারণে সেসময়কার উপজেলা নির্বাহী অফিসার রৌমারী নিকট বিষয়টি লিখিত ভাবে অভিযোগ করেন। এছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবর দুটি অভিযোগ দায়ের করেন। কলেজ সভাপতি কে,এম ফজলুল হক, ফরহাদ আলী ও ব্যাংক ম্যানেজার (সোনালি ব্যাংক রৌমারী শাখা)কে লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করেন। বিষয়টির তেমন কোন সুরাহা না হলে খন্দকার ফকরুল ইসলাম ০৯/০৮/২০২০ইং কুড়িগ্রাম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং১১২০।

কলেজের বিভিন্ন সমস্যা ও মামলা থাকা অবস্থায় চুপিসারে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ খন্দকার ফকরুল ইসলামকে না জানিয়ে কলেজের সভাপতি ১৫/০৯/২০২০ খন্দকার ফকরুল ইসলামের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে নিয়োগ প্রদান করেন। ফরহাদ আলী ১৭.০৯.২০২০ সভাপতির কাজে যোগদান করেন।

মামলার বাদী মতিয়ার রহমান বলেন-বর্তমান অধ্যক্ষ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ভগ্নিপতি হওয়ার সুবাদে রাতের আধারে চুপিসারে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। যার কারণে আমি বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়েছি এবং আদালতের স্মরণাপন্ন হয়েছি।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ ফকরুল ইসলাম বলেন, করোনাকালীন কলেজ বন্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমাকে অবহিত না করে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ সম্পন্ন করেছেন। যার কারণে আমি আদালতে একটি মামলা করেছি।

কলেজ অধ্যক্ষ ফরহাদ আলী জানান, আমার বিরুদ্ধে যেসমস্ত অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভূয়া, ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট।
মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালক (কলেজ) মোঃ উমর ফারুক জানান, আমরা কলেজের ম্যানেজিং কমিটি এবং সকল শিক্ষকদের উপস্থিতিতে বিষয়টি তদন্ত করেছি। শিক্ষা সপ্তাহের কারণে ব্যস্ত থাকায় এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়নি। তবে আগামী সপ্তাহে আমরা একটি নিরপেক্ষ প্রতিবেদন জমা দিব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *