আতাউর রহমান বিপ্লব,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :

কুড়িগ্রামের চিলমারী নৌবন্দরটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনার পর এই প্রথম বাংলাদেশী পণ্য নিয়ে সান আবিদ-১ নামে একটি ভ্যাসেল (নৌযান) যাত্রা শুরু করেছে ভারতের ধুবরী নৌবন্দরের উদ্দেশ্যে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই প্রথম কোন বাংলাদেশী পণ্য যাচ্ছে ভারতের উদ্যেশ্যে। এ ঘটনায় উচ্ছ্বসিত জেলার সর্বস্তরের মানুষ।

সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টায় চিলমারী নৌবন্দ‌রের রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের কাঁচকোল নৌপ‌য়েন্ট থে‌কে সান আবিদ-১ নামে একটি বাংলাদেশি ভ্যাসেল (নৌযান) ২৭ মে.টন ঝুট পণ্য নিয়ে প্রথম যাত্রা শুরু করেছে ভারতের ধুবড়ির উদ্দেশে। এসময় উপস্থিত ছিলেন বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা তাপস কুমার সাহা ও রতন কুমার শীল, সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা মাহবুব-এ-খোদা ও আসাদুল হক ফিরোজ, লিজেন্ড কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান মমিন। পরে বন্দরে এসে খোঁজখবর নেন চিলমারী উপজেলা চেয়ারম্যান শওকত আলী সরকার বীরবীক্রম, চিলমার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।

বক্তারা জানান, চিলমারী নৌবন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানী হলে প্রাণ ফিরে পাবে বন্দরটি। পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটবে এ এলাকায়। তবে দ্রুত বন্দর অবকাঠামো নির্মাণ ও নদীপথের গভীরতা বাড়াতে নদী খননের দাবী স্থানীয় অধিবাসীদের।

সোমবার সান আবিদ-১ নামে একটি ভ্যাসেলে চিলমারী নৌবন্দর থেকে ২৭ মে.টন ঝুট রপ্তানী করে শেরপুরের তুলার মিল নামক রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান।

উল্লেখ্য, বিগত ২০১৭ সা‌লে চিলমারী‌ সফরে এসে এই ঐতিহ্যবাহী নৌবন্দরটি চালুর প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর একই বছর চিলমারী নৌবন্দরের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তৎকালিন নৌ-মন্ত্রী শাহজাহান খান। এসময় চিলমারী নৌবন্দরের উন্নয়নের জন্য প্রায় ৩শ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতবছর থেকে ভারতের ধুবড়ি ট্রানজিট ব্যবহার করে ভুটান থেকে ক্রাস্টন পাথর ভ্যাসেলে করে শুধুমাত্র আমদানী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল বাংলাদেশ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গত ৬/৭ মাস যাবৎ শুধুমাত্র ভারত থেকে রৌমারী ও চিলমারী নৌবন্দরে পাথর আমদানী কার্যক্রম পরিচালিত হতো। এতে প্রতিমাসে গড়ে ৩০টি ভ্যাসেলে করে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ক্রাস্টন পাথর আমদানী করা হয়ে থাকে। বন্দর পূর্ণাঙ্গরূপ পেলে ভারতের সেভেন সিস্টার খ্যাত অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মেঘালয়, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা রাজ্যসহ ভুটান ও নেপালের সাথে পণ্য আমদানী-রপ্তানী করার সুযোগ বাড়বে। এতে করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে চিলমারী নৌবন্দরটি।

বিষয়টি নিয়ে লিজেন্ড কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান মমিন জানান, প্রথম দফায় পরীক্ষামূলকভাবে রপ্তানি কার্যকম শুরু করতে পারায় খুশি আমরা। আসামের সাথে নৌ পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ভবিষ্যতে রড-সিমেন্টসহ বিভিন্ন রপ্তানী উপযোগী পণ্য আমদানী-রপ্তানী করা যাবে। আগে বাংলাদেশ থেকে খালি ভ্যাসেলগুলো তেল খরচ করে ভারতে গিয়ে পণ্য বোঝাই করে শুধুমাত্র আমদানী কার্যক্রম চালাতো। এখন বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত পণ্য রপ্তানী করা হলে, ভ্যাসেলগুলো আমদানী-রপ্তানীর মাধ্যমে বাড়তি আয় করতে পারবে ও খরচ সাশ্রয়ী হবে।

চিলমারী উপজেলা চেয়ারম্যান শওকত আলী সরকার বীরবীক্রম জানান, আমি ঐতিহাসিক এই মুহুর্তের স্বাক্ষী হলাম। দেশ ভাগের পর ঐতিহাসিক চিলমারী নৌবন্দরটি বন্ধ হয়ে যায়। আজ আমার জীবদ্দশায় আবারও আমদানী-রপ্তানী শুরু হওয়া ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তারই বাস্তবায়ন হলো আজ। এখন দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়ন করা দরকার চিলমারী নৌবন্দরের।

এ ব্যাপারে বন্দর রাজস্ব কর্মকর্তা তাপস কুমার সাহা জানান, প্রথম দফায় পরীক্ষামূলকভাবে রপ্তানি কার্যকম শুরু করতে পারায় খুশি আমরা। আসামের সাথে নৌ পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ভবিষ্যতে রড-সিমেন্টসহ বিভিন্ন রপ্তানী উপযোগী পণ্য আমদানী-রপ্তানী করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *