জামালপুর প্রতিনিধি ॥
জামালপুর সদরের শীতলকুর্শায় ত্রাণ বিতরনের অনিয়মের অভিযোগ তুলে এলাকাবাসীর মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার দুপুরে সদরের শরিফপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের শীতলকুর্শা গ্রামে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

মানববন্ধনে অসহায় মনোয়ারা বেগম, মাজেদা বেগম ও মমতাজ বেগম শরিফপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ত্রাণ কমিটির আহ্বায়ক মাহবুব মল্লিক, সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন- মরণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারনে বেকার হয়ে পরা আমাদের জন্য সরকারের দেয়া ত্রাণ বিতরণ নিয়ে নানা প্রকার দুর্নীতির পাশাপাশি স্বজনপ্রীতি করছেন এই ৩জন। আমরা যারা আজ নিরুপায় হয়ে মানববন্ধন করছি এ পর্যন্ত সরকারের দেয়া কোন প্রকার ত্রাণ সহায়তা পায়নি। শরিফপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ত্রাণ কমিটির যুগ্মআহ্বায়ক আওয়ামী লীগ নেতা মুরাদুজ্জামান, আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান, সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান আলী বলেন- আমাদের সাথে কোন প্রকার সমন্বয় না করে তারা মনগড়া লিস্ট তৈরী করে জমা দিয়েছে। এই এলাকাটিতে চলছে শুধুই স্বজনপ্রীতি। একই পরিবারে পাচ্ছে বারবার ত্রাণ সহায়তা। সম্প্রতি সরকারের দেয়া ২৫০০টাকার প্রনোদনা প্যাকেজ নিয়ে চলছে বানিজ্য। এক পরিবারে নুরল, নুরলের স্ত্রী সাজেদা ও নুরলের ছেলে সাজুলকে সরকারের দেয়া ২৫০০ টাকার প্রনোদনা লিস্টে তিনজনেরই নাম দেওয়া হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার আছে ঠিকই নামে অন্যটা। কারো কারো মোবাইল নাম্বার থাকা স্বত্বেও ব্যবহার করা হচ্ছে কর্মীদের মোবাইল নাম্বার। বক্তরা তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত সুবিধাভোগীকে সহায়তা প্রদানের অনুরোধ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

শরিফপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ত্রাণ কমিটির আহ্বায়ক মাহবুব মল্লিক বলেন- ত্রাণ কমিটিতে আমিসহ মোট ৩১ জন সদস্য রয়েছে। আমরা স্লিপ দিয়েছি ৪২ জনকে। তাহলে একই পরিবারে কিভাবে ৩-৪ জনকে দিবো আপনারাই বলেন। আমার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করছে একটি কুচুক্রি মহল। তারা গত ১৫ মে সন্ধ্যায় আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাশের বেড়া ভাঙ্গাসহ ইটপাটকেল দিয়ে টিনের চাল ও দরজা-জানালায় ঢিল ছুরেছে। আমি এব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উপরমহলকে জানিয়েছি।

শরিফপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ত্রাণ কমিটির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন- আমাদের নামে এলাকার অসহায় মানুষদের উস্কানিমূলক কথা বলে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করছে একটি মহল। তারা প্রতিনিয়ত এলাকাবাসীদের দিয়ে আমাদের নানা প্রকার অশালিন ভাষায় গালিগালাজ করাচ্ছে।

শরিফপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ফারুক হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন- এ পর্যন্ত আমি চেয়ারম্যানে দেয়া দুই ধাপে ৫টি স্লিপ পেয়েছি যা আমি দরিদ্রদের মাঝেই বিতরণ করেছি। আমি যদি না পাই তবে আমি কি করে ত্রাণ দিবো। সম্প্রতি আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে প্রায় শতাধিক পরিবারের মাঝে ত্রাণ ও নগদ অর্থ বিতরণ করেছি। আপনারা চাইলে খোজ নিয়ে দেখতে পারেন। আমি আমার স্থান থেকে স্বচ্ছভাবে দলীয় কাজ করে যাচ্ছি। আমার নামে এলাকার অসহায় মানুষদের উস্কানিমূলক কথা বলে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করছে একটি কুচুক্রি মহল।

এব্যাপারে শরিফপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সামছুল মেম্বারের সাথে বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। একই পরিবারে ৩-৪ জনকে সরকারের প্রনোদনার টাকা দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শরিফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম আলম বলেন- একই পরিবারে ৩-৪ জনকে দেয়া যায় যদি তারা আলাদা আলাদা থাকে। একসাথে থাকলে কোনক্রমেই দেয়া যাবে না। এক পরিবারে নুরল, নুরলের স্ত্রী সাজেদা ও নুরলের ছেলে সাজুলকে সরকারের দেয়া ২৫০০ টাকার প্রনোদনা লিস্টে তিনজনের নাম কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান আলম বলেন- বাবা ছেলে পেতেই পারে তারা আলাদা থাকলে তবে স্ত্রী কোনক্রমেই পেতে পারে না। যদি বাবা, ছেলে ও স্ত্রীকে এই সুবিধা দিয়ে থাকে দলীয় নেতৃবৃন্দ তবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে, কোন ইউপি সদস্যের হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *