নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
রাজশাহীর বাঘায় জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধের জের ধরে গ্রাম্য সালিশে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার (২৬ আগস্ট) সকাল ১১টায় উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের পীরগাছা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এতে ৮ জন আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে আহতদের উদ্ধার করে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামকে) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার এক দিনপরে গত ২৮ আগস্ট এ নিয়ে মকছেদ আলীর ছেলে বাবর আলী ১০ জন কে আসামী করে মামলা দায়ের করেন যার নম্বর-৩০। অপর পক্ষের মৃত ইন্তাজ আলীর ছেলে রুজদার আলী বাদী হয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর ১০ জনকে আসামী করে বাঘা থানায় মামলা দায়ের করেন,যার নাম্বার -১।

উভয় পক্ষ থেকে ২০ জনকে আসামী করে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে ঠিকই, কিন্তুু গত ৮ দিনে কোন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়নি। এ ঘটনায়
এখন পর্যন্ত কোন আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের পীরগাছা গ্রামের মকছেদ আলী ও মুনসুর রহমানের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ বিরোধ নিরসনের জন্য রুজদারের বসত বাড়ির আঙ্গিনায় সকাল ১০ টার সময় শালিস বসে। উক্ত শালিসী বৈঠকে বাউসা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আবদুর রহমান, সাবেক মেম্বর মোহাম্মদ আলী, গ্রাম প্রধান মসলেম উদ্দিন, ছলেমান মহরী ও শহিদুল ইসলামের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের তর্কবিতর্ক শুরু হয়। এক পর্যায়ে উভয়ে ধারালো হাঁসুয়া, বর্ষা এবং বাঁশের লাঠি নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

এই সংঘর্ষে মকছেদ আলী (৭৫) তার ছেলে বজলুর রহমান (৪০) ও একরামুল হক (৩২) গুরুত্বর রক্তাক্ত জখম হন। আহতদের এলাকার লোকজন উদ্ধার করে একটি এ্যাম্বুলেন্স যোগে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করেন। এদের মধ্যে বজলুর রহমানকে হাসুয়া দিয়ে হাত এবং পিঠের উপরে কোপ দেওয়ায় তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। গুরুতর আহত বজলুর রহমান একই সাথে তার বাবা বৃদ্ধ মকছেদ আলী ও ছোট ভাই একরামুল হককেও ঐ একই ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

এদিকে ঘটনার পরদিন মকছেন আলীর বড় ছেলে কলেজ শিক্ষক বাবর আলী বাদি হয়ে ১০ জনকে আসামী করে বাঘা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। তবে এ মামলার পাঁচজন আসামী জামিনে এসে বাদিকে মামলা তুলে না নিলে প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে বলে মৌখিক অভিযোগ করেছেন বাবর আলী।

অপর দিকে মনসুর আলী পক্ষের মনসুর আলী (৫৫), রুজদার আলী (৫২), রাসেল আহম্মেদ (২৮), রাশিদুল ইসলাম (২৯) ও আব্দুর রাজ্জাক (৩০) আহত হয়। তরা বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

এদিকে রুজদারের করা মামলার ৫ জন আসামীকে সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিজ্ঞ আদালত জামিন মুঞ্জর করেছে বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া দুই ওয়ারিশগনের সম্পত্তি নিয়ে
মকসেদ আলী ও মুনসুর রহমানের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে ঝামেলা চলছিল। মূল মালিক মারা যাওয়ার পর তাদের জমি এখন পর্যন্ত বাটোয়ারা হয়নি। এর আগে ৫ বার শালিস করেও সমাধান করা সম্ভব হয়নি। তবে ষষ্ঠ বারে উভয় পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে শালিসে মিমাংসা হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু দুই পক্ষের মধ্যে অনাকাংখিত এই সংঘর্ষের কারনে শালিস স্থগিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খায়রুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা রুজু করা হয়েছে। প্রথম মামলাটি করেছেন বাবর আলী। তাঁর দায়েরকৃত মামলার পাঁচ জন আসামী বিজ্ঞ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। আমরা উভয় পক্ষের আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছি। তবে মামলার অন্য আসামীরা পলাতক থাকায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *