(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়)
মানব জীবনের জন্য জমি বা ভূমি বা মাটি একমাত্র অবলম্বন। মাটি ছাড়া মানুষকে কল্পনা করা যায় না। কেননা, মাটি থেকেই মানুষের সৃষ্টি, মাটি থেকেই জীবিকা আবার মাটি মানুষের শেষ প্রস্থান। এই মাটি এখন ভূমিদস্যু, ভূমিসন্ত্রাসী ও ভূমি খোকোদের আগ্রাসনে পরিণত হয়েছে। ভূমিদস্যুরা জাল দলিল, ভূয়া মাঠপর্চা, ভূয়া রেকর্ড, নামজারি, ভূয়া ওয়ারিশ ইত্যাদি কাগজ তৈরি করে কখনো রাজনৈতিক প্রভাব আবার কখনো সাস্তানবাহিনী কিংবা পেশিশক্তি দিয়ে নিরীহ গরিব মানুষের জমি জবর দখল করে চলছে। ৬০/৭০ বছরের দখলসহ সব বৈধ কাগজপত্র ঠিক থাকার পরেও ভূমিদস্যু ভূমিসন্ত্রাসীদের পেশিশক্তির কাছে হেরে যাচ্ছে এবং খুন হচ্ছে জমির প্রকৃত মালিক। বিরোধ এখন অনেকটা আগ্রাসনে পরিনত হয়েছে। প্রায় দিনই জমি বিরোধে মানুষ খুন হচ্ছে। জমি বিরোধে এ যাবৎ কত মানুষ খুন, আহত, নিহত হয়েছে তার পরিসংখ্যান না থাকলেও কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি- গত ২৬/৮/২০২১ ইং তারিখে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত ফরিদগঞ্জে আসামির স্বীকারোক্তি, জমি বিরোধে বৃদ্ধাকে হত্যা, খালে নিক্ষেপ। গত ৩০/৫/২০২১ ইং তারিখে দৈনিক সকালের সময় পত্রিকায় প্রকাশিত সীমারের মত কুপিয়ে শাহীনের মাথা বিচ্ছিন্ন। গত ৬/৯/২০২০ইং তারিখে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত বিয়ানীবাজারের ভূমি বিরোধে শিশু খুন, চাচিসহ গ্রেফতার ২। আবার গত ২৩/১/২০২২ ইং তারিখে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত গবিন্দগঞ্জে জমির সালিশ বৈঠকে বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা। অতীতের যে কোন অবস্থার চেয়ে বর্তমানে ভূমি ও ভূমির মালিকের উপর আগ্রাসন অনেককাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্ব শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকার অধ্যায়ের ১৬ নম্বর পয়েন্ট এ উল্লেখ করা হয়েছে সম্পত্তি নাগকিকদের মৌলিক অধিকার যা রাষ্ট্র কর্তৃক সংরক্ষিত । মহানত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত একটি স্বাধীন দেশে ভূমি ও ভূমির মালিকের উপর এ নির্মম আগ্রাসন অসভ্যতা ও বর্বর যুগের হাতছানি। কেউ কেউ বলে থাকে ব্রিটিশ আমল থেকে অদ্যবধি ভূমিদস্যু বা ভূমিসন্ত্রাসী বা ভূমিখোকোদের দমনের জন্য কোন আইন হয়নি। উল্লেখ্য যে, তদানীন্তন সময়ে এ ধরণের অপরাধ সংঘটিত হয়নি বলেই আইন হয়নি। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, ২০১৮ সালে মরণব্যাধি মাদকের বিস্তার যখন ভয়ংকরী রুপ ধারণ করেছিল এবং সমাজ জীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছিল তখন সরকার তার দায়বদ্ধতা থেকে মাদক আইন সংস্কার করেন এবং নতুন আইন ২০১৮ পাশ করেন। এতে মৃত্যুদন্ড ও যাবজ্জীবন সাজার বিধান রাখা হয়েছে। ওই সময় ওই আইনের ফলে মাদক সম্রাট, মাদকের গডফাদার, মাদক কারবারি ও মাদক সেবনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান সফল হয়েছিল। বর্তমানে ভূমিদস্যু ও ভূমিসন্ত্রাসীদের আক্রমণ আর আগ্রাসন মাদকের ভয়াবহতাকেও হারমানায় এবং সমাজ জীবনে নেমে এসেছে সীমাহীন কষ্ট। এমতাবস্থায়, আমি ভূমিদস্যু ভূমিসন্ত্রাসীদের দমনের জন্য কঠোর আইন প্রনয়ণ ও প্রয়োগের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য মাননীয় ভূমিমন্ত্রীর কাছে সবিনয়ে আবেদন জানাচ্ছি।
বিনীত
মোঃ সিরাজুল হক
কুড়িগ্রাম।