রাণীশংকৈল প্রতিনিধি ঃ
ঠাকুরগাওয়ের আদর্শ রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সুপার মোঃ রফিকুল আলম দূর্ণীতির অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছে। দেখার কেউ নেয়। তার বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে অনিয়ম দূর্ণীতির সংবাদ প্রকাশ হলেও অজ্ঞাত কারণে সে দীর্ঘদিন থেকে একই ষ্টেশনে বহাল তবিয়তে রয়েছে। রাণীশংকৈল উপজেলায় প্রায় তিন যুগ ধরে চাকুরী করে আসছে। কাগজে কলমে বদলী মাঝে মধ্যে বদলী দেখা গেলেও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে আবার ফিরে এই উপজেলায়। ফলে প্রতিটি কাজে অনিয়ম দূর্ণীতির ফাঁক ফোকর তার নখ দর্পনে। রাণীশংকৈলে লোক চক্ষুর আড়াল থেকে সে চালাচ্ছে ঠিকাদারি ব্যবসা। স্থাপনা আর রাস্তার নির্মান কাজে অনিয়ম দূর্ণীতির আশ্রয় নিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। রাণীশংকৈলে চলছে এম এম ব্রিক্স নামে তার ইট ভাটা ব্যবসা। উপজেলার উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে ভাল ইটের পরিবর্তে নি¤œমানের ইট দিয়ে কাজ করায়। কাতিহার হাটের মাটি ভরাটের উন্নয়নমূলক কাজে তার ভাটা থেকে ৪৮ ট্রাক্টর রাবিস সরবরাহ করে ১০০ ট্রাক্টর রাবিস সরবরাহের বিল উত্তোলন করে। সেখানে প্রতি ট্রাক্টর রাবিসের মূল্য বাজার মুল্যের চেয়ে প্রায় ৩০০ টাকা বেশি ধরা হয়। তার ইট ভাটায় কয়লার বদলে পোড়াচ্ছে গাছের খড়ি। ভাটার কাজে ড্রেজিং এর মাধ্যমে নদী থেকে অবৈধভাবে বালূ উত্তোলন করে দেশের অপুরণীয় ক্ষতি করে আসছে। ড্রেজিং এর মাধ্যমে বালু উত্তোলনের ফলে নদী তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। এতে জন জীবন হুমকীর মুখে পড়ছে। নদী থেকে ড্রেজিং এর মাধ্যমে বালু উত্তোলনের ফলে ইতিপূর্বে সহদোর দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়। দুই সহোদরের তাজা প্রাণ ঝরে গেলেও প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাগণ নিরব ভূমিকা পালন করেন। এসব অবৈধভাবে বালু উত্তোলন কারীদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়না। ওএস রফিক এসব কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারনে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারি আর দশ জন পার পেয়ে যায়। মূলত কর্মকর্তা বাবুরা ওএস রফিকের বিরুদ্ধে কোন আইনি পদক্ষেপ নিতে না পারার কারন তার অপকর্মের সাথে কর্তা বাবুদের সখ্যতা রয়েছে।
ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ আহম্মদ হোসেন বিপ্লব বলেন এম এম ব্রিক্স এর স্বত্তাধিকারী ওএস রফিক সে রওশনের নামে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে।
যৌথ মালিকানায় ঢাকায় রয়েছে তার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি। গুচ্ছ গ্রাম, উপজেলা চত্বরে ভবন নির্মান, প্রাচীর নির্মান সহ বিভিন্ন কাজ ওএসের তদারকিতে হয়ে থাকে। নামে মাত্র কমিটি গঠন করা হয়। মূলত ওএস রফিক সমস্ত কাজের তদারকি করে থাকে। গুচ্ছ গ্রামের সামগ্রী তৈরী, ঘর- প্রাচীর নির্মানে নি¤œমানের ইট-রড, কম পরিমান সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। এসব দূর্ণীতির আশ্রয় নিয়ে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। তার কুপরামর্শে কর্তা বাবুরা বনে যান কোটিপতি। ওএস রফিকের বাড়ি পঞ্চগড়ের ভুল্লি এলাকায়। ভুল্লি বাজরে রাস্তার নয়ন জলির উপর অবৈধভাবে দোকান ঘর করে রেখেছে সে। যা বিগত তত্ববধায়ক সরকারের আমলে ওই সব স্থাপণা ভেঙ্গে ফেলা হলেও পরবর্তীতে পুনরায় ঘর নির্মাণ করেছে।
উপজেলা সীমানা প্রাচীর, কম্পিউটার ভবন নির্মান সহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মানের কাজে সে অফিসের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দিয়ে ডে-লেবারের কাজ পর্যন্ত করে নিয়েছে। চাকুরী হারার ভয়ে এই অমানুসিক নির্যাতন সহ্য করেই মুখ বন্ধ করে কষ্ট করতে হয়েছে তাদের। ওই সব স্থাপনা নি¤œমানের ইট দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের প্রতিটি দপ্তরের সংশ্লিষ্টদের সে অবৈধভাবে টাকা কামাইয়ের কু পরামর্শ দিয়ে থাকে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের বার্তা বাহক মাহবুব আলম ও মোঃ মাজেদুলের জুন ক্লোজিং এ ‘‘ আইন সংক্রান্ত প্রসেস বিল ’’ বাবদ ৩০ হাজার টাকার মধ্যে ১৬ হাজার টাকা ওএস আত্মসাৎ করে বলে বিশ্বস্থ সুত্রে জানা যায়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণারয়ের প্রকল্পের কাজে উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের দূর্ণীতিবাজরা তার সখ্যতায় এসব অপকর্ম করে থাকে। ওই সব প্রকল্পের কাজ ঠিকমতো না করে সিংহভাগ টাকা লুটপাট করে নেওয়া হয়।
এ ছাড়াও সীমাহীন দূর্ণীতির অভয়ারণ্য সে গড়ে তুলেছে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঠিক রেখেই সে দূর্ণীতির অভয়ারণ্য গড়ে তুলতে কুন্ঠাবোধটুকু করেনি। মাঝে মাঝে তার বদলীর কথা শোনা গেলেও সে রাণীশংকৈল উপজেলায় বসে থেকেই সময় কাটায়। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দুই এক সপ্তাহের মধ্যেই সে আবার রাণীশংকৈলে বদলী নিয়ে আসে। দেশের এতগুলো উপজেলা থাকতে রাণীশংকৈল উপজেলায় যুগ যুগ ধরে চাকুরী করার মূল কারন এখানে থেকেই দূর্ণীতির মাধ্যমে কোটিপতি হয়ে গেছে। সুষ্ঠু তদন্ত করা হলে তার সকল অপকর্মের নিল নক্সা বেরিয়ে আসবে। সাথে সাথে তার সাথে সম্পৃক্তদের চেহারা সকলের কাছে প্রকাশ পাবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সে বিভিন্ন কর্মচারীদের চাকুরীর ভয় ভীতি দেখিয়ে তাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন করে। ইনফো বাংলাদেশ প্রোগ্রামের কাজের মেয়াদ ২০১৬ সালের জুন মাসে শেষ হলেও ওই প্রোগ্রামের মোঃ রনিকে অজ্ঞাত কারনে এক বছর থেকে কাজ করিয়ে নিচ্ছে। গত বছরের জুন মাসে তার চাকুরী শেষ হলেও অদ্যাবধি তাকে সরকারি চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে বিনা বেতনে কাজ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বছর ধরে বিনা বেতনে কাজ করে নেওয়া আর কাজ করে দেওয়ার রহস্য উদঘাটন করলেই দূর্ণীতির চিত্র ফুটে উঠবে।
এ অমানবিক কাজের ব্যাপারে নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মোঃ নাহিদ হাসান বলেন, এখানে সে বিনা বেতনে কাজ করে আসছে। মাস্টার রোল কিংবা হাজিরা ছাড়াই সে অফিসে থাকে।
এ সব বিষয়ে অফিস সুপার রফিকের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে সে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বিরক্তির সুরে বলে আপনাদের কি লিখার আছে আপনারা লিখেন।
রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করে এলাকার উন্নয়নের প্রতিফলন ঘটাতে সুধিমহল এ দূর্ণীতিবাজ ওএস রফিকের প্রতি দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ফিরে আসুক, রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা হোক এমন প্রত্যাশা যেন এলাকাবাসির।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *