ফারহানা আক্তার,, জয়পুরহাটঃ
জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলা থেকে মানবদেহের কিডনি কেনাবেচা চক্রের মূল হোতা খাজা ময়েন উদ্দিনসহ ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৫, সিপিসি-৩ জয়পুরহাট ক্যাম্প।

বুধবার (১২ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় জয়পুরহাট র‍্যাব ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান র‍্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোঃ জিয়াউর রহমান তালুকদার।

তিনি জানান, মিডিয়ার কল্যাণে বেশ কিছুদিন ধরে আমরা দেখতে পাই, জয়পুরহাট জেলার কালাই থানা থানায় দীর্ঘদিন যাবৎ কিডনি ক্রয় বিক্রয় কারী দালালদের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে প্রধানত গরিব, দরিদ্র ও আর্থিক অনটনে জর্জরিত মানুষদের টার্গেট করে। অতঃপর অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের দেহ হতে কিডনি সংগ্রহ করে। সংগ্রহকৃত কিডনি গুলোর গ্রাহক প্রধানত দেশের ধনী পরিবার ও পার্শ্ববর্তী দেশ সমূহ। চক্রটি বিভিন্ন ধাপে ভিকটিমদের কিডনি গ্রাহক শ্রেণীর কাছে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সরবরাহ করে থাকে। ভিকটিম রা শুধুমাত্র মোটা অঙ্কের টাকার লোভেই উক্ত কাজে প্ররোচিত হয়। কিন্তু কিডনি নিয়ে চক্রটি চুক্তি মোতাবেক পাওনা পরিশোধ করে না। পরবর্তীতে ভিকটিমরা টাকা চাইলে তাদের প্রাণনাশের হুমকি সহ আইনের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে। এভাবে উল্লেখিত অঞ্চলের বহু মানুষ প্রতারিত ও শারীরিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং হচ্ছে।

এমন বিভিন্ন অভিযোগে গতরাতে জয়পুরহাট র‍্যাব ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল কালাই উপজেলার বহুতি, বৈরাগীহাট, মোসলেমগঞ্জ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কিডনি চক্রের সাথে জড়িত মুল হোতাসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, কালাই উপজেলার উলিপুর গ্রামের মৃত আবু সাইদ আকন্দের ছেলে খাজা ময়েনউদ্দিন (৪৪), আবুজার রহমানের ছেলে আজাদুল ইসলাম (৩৭), বহুতি গ্রামের বোরহান উদ্দিনের ছেলে আব্দুল করিম ফোরকান আলী (৪৫), পাইকপাড়ার মৃত কছিম উদ্দিনের ছেলে আফসার মন্ডল (৫৬), মৃত আছির উদ্দিন মন্ডলের ছেলে নুরুল ইসলাম (৫০), পূর্ব কিষ্টপুর গ্রামের মৃত আবু বক্কর ফকিরের ছেলে বাবলু ফকির (৫২), দুধাইল নয়াপাড়ার আব্বাস আলী মন্ডলের দুই ছেলে সোবহান মন্ডল (৫২), মজাহিদুল মন্ডল(৪০), ও একই গ্রামে মৃত মোখলেছার রহমানের ছেলে সাজেদুল ফকির (৩৭)।

র‍্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোঃ জিয়াউর রহমান তালুকদার আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের নামে পূর্বেরও মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন মোতাবেক এক বা একাধিক মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

গ্রেফতারকৃতদের নামে পূর্বেও, ১৯৯৯ সালের মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন মোতাবেক এক বা একাধিক মামলা রয়েছে। যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জয়পুরহাট জেলার কালাই থানায় জিডি মূলে হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

উল্লেখ্য ২০১১ সাল থেকে অভাবে পরে কালাই উপজেলার কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৫শ মানুষ তাদের কিডনি বিক্রি করেছে। সেসময় বেশ কয়েকজন দালালকে আটকও করেছিল পুলিশ। গত ২/৩ বছর এটি বন্ধ থাকলেও আবারও সংক্রিয় হয়ে উঠেছে এ চক্রটি। এই চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করলো র‍্যাব।

এ সময়ে আরো উপস্থিত ছিলেন, জয়পুরহাট ক্যাম্পের অধিনায়ক লে.কমান্ডার তৌকির, সহ অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস, এম সোলায়মান আলী, এ্যাড. নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল (পিপি)সহ র‍্যাবের বিভিন্ন স্থরের সদস্য ও গণমাধ্যম কর্মিরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *